ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসক্লাবে দুই গুণী বাঙালী মুনতাসীর মামুন ও হাশেম খানের সংবর্ধনা

দুজনের মাধ্যম ভিন্ন কিন্তু লক্ষ্য অভিন্ন

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৭ নভেম্বর ২০১৭

দুজনের মাধ্যম ভিন্ন কিন্তু লক্ষ্য অভিন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তারা দু’জন দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে নিরন্তর কাজ করা দুই গুণী ব্যক্তিত্ব। একজন ক্যানভাসে ছবি এঁকে আর অপরজন সুতীক্ষ্ন লেখনীর মাধ্যমে ধারণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই দুই কীর্তিমান হলেন বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক’ ড. মুনতাসীর মামুন। এ দুই গুণীজনকে সংবর্ধিত করলেন সাংবাদিকরা। স্বাধীনতার মূলধারার সাংবাদিক সমাজ- এই ব্যানারে ‘দুই গুণী বাঙালির সংবর্ধনা’ শিরোনামে সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে তাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এতে অংশ নিয়ে দুই গুণীজনের মূল্যায়ন করে বক্তারা বলেছেন, হাশেম খানের রংতুলির প্রতিটি আঁচড় প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের। পাঠ্যবইয়ে তার আঁকা ছবি এদেশের মানুষের মনন গঠন করে। মুনতাসীর মামুনের লেখা থেকে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা সম্ভব হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে হাশেম খান ও মুনতাসীর মামুনকে নিয়ে সম্মাননা বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডারস্্ ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সমাজের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন আহমেদ পেয়ারা, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় ও বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। হাশেম খানের সম্মাননাপত্র পাঠ করেন বিএফইউজের সহ-সভাপতি জাফর ওয়াজেদ এবং মুনতাসীর মামুনের সম্মাননাপত্র পাঠ করেন ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ। সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে হাশেম খান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করার এক বড় লড়াই শুরু হয়েছিল। যার যার অবস্থান থেকে আমরা সে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছি। আমি ছবি এঁকেছি, মুনতাসীর মামুন তার লেখনীতে। স্বাধীনতার পরও এর বিরোধীকারীরা ঝাড়েবংশে বেড়েছে। তাদের এখনও নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। আমাদের যে লড়াই ছিল, তা শেষ হয়নি; আগামী প্রজন্ম এ লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাবে- এটাই এখন আমাদের প্রত্যাশা। মুনতাসীর মামুন বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠায় আমাদের লড়াইটা বৃথা যায়নি। আজকে তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহ দেখলে, তা বুঝতে পারি। আমার কাছে এ সম্মাননা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ হাশেম খানের সঙ্গে একসঙ্গে পেয়েছি। আমরা একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনা ও প্রতিষ্ঠায় রাজপথে আন্দোলন করেছি, অত্যাচার সহ্য করেছি। মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, হাশেম খানের চিত্রকর্মের প্রতিটি আঁচড়ই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। মুনতাসীর মামুন আমার বন্ধু, তার লেখা ৭০ শতাংশ বই-ই আমার কাছে থাকলেও তার দশ শতাংশই পড়া হয়নি। এর মানে সে প্রচুর বই লিখেছে, এ দেশের ইতিহাসকে তুলে ধরতে। স্বদেশ রায় বলেন, হাশেম খানের আঁকা প্রতিটি আঁচড় বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দেয়। পূর্ব বাংলার ইতিহাস রচনা করতে গেলে মুনতাসীর মামুনের লেখা থেকে প্রাণিত হতে হবে। হারুন হাবীব বলেন, দুইজনই বাংলাদেশের উন্মেষপর্ব ও পরবর্তী সময়ের কান্তিকালের ধারক। একজন লেখনী দিয়ে, অন্যজন ছবি দিয়ে মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। সত্য উন্মোচন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন। মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আমাদের চরিত্রই মৃত্যুর আগে কাউকে সম্মানিত করি না। তার ব্যতিক্রম ঘটনা এ অনুষ্ঠান। এটা খুব আশা জাগানিয়া উদ্যোগ। এই দুই ব্যক্তিত্ব আলোর পথযাত্রী। হাশেম খান পাঠ্যবইয়ে তার আঁকা ছবি দিয়ে মানুষের মনন গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। মুনতাসীর মামুন মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের ভিত্তিভূমি গঠনে সাংস্কৃতিক চেতনা সৃষ্টিতে জোরাল ভূমিকা রেখেছেন।
×