ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মান কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই

পায়রায় সবচেয়ে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৬ নভেম্বর ২০১৭

পায়রায় সবচেয়ে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জার্মান কোম্পানি সিমেন্সের সঙ্গে দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সমঝোতা স্মারক (এমওইইউ) স্বাক্ষর করেছে রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল)। রবিবার বিকেলে রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে এমওইউটি সই হয়। যৌথ মালিকানার বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে বাংলাদেশের অর্ধেক মালিকানা থাকবে। তিনধাপে বাস্তবায়িত তিন হাজার ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি পায়রায় নির্মাণ করা হবে। এই কেন্দ্রটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সব থেকে বড় জার্মান বিনিয়োগ হতে চলেছে। এমওইউ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয় আগামী জানুয়ারির মধ্যে সব ধরনের সমীক্ষার কাজ শেষ হবে। আর জুনের মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চিত হবে। এরমধ্যে কেন্দ্রটি নির্মাণে যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করার পরই কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এক হাজার ২শ’ মেগাওয়াট উৎপাদনে আসবে ২০২০ সালের জুনে। সমান ক্ষমতার আরও একটি কেন্দ্র একই বছর ডিসেম্বর এবং পরবর্তী বছর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির উৎপাদন দক্ষতা ৬০ ভাগ। এটি হবে বিশে^র সবথেকে আধুনিক প্রযুক্তির বিদ্যুত কেন্দ্র। সিমেন্স আধুনিক এই প্রযুক্তির সম্প্রসারণ শুরু করেছে গত বছর থেকে। এর আগে বাংলাদেশে ৬০ ভাগ উৎপাদন দক্ষতার কোন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়নি। এমওইউতে এনডব্লিউপিজিসিএলের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ.এম. খোরশেদুল আলম এবং সিমেন্সের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুনীল মাথুর স্বাক্ষর করেন। মোট বিনিয়োগ দুই দশমিক আট বিলিয়ন ডলারের মধ্যে দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে জার্মানি। প্রকল্পের মূলধনী বিনিয়োগ ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অর্ধেক সংস্থান করবে এনডব্লিউপিজিসিএল। প্রকল্পটির ৮০ শতাংশ ঋণ গ্রহণ করা হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এ.এম. খোরশেদুল আলম বলেন, আমাদের মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে সব থেকে বেশি দরকার বিদ্যুত ও জ¦ালানির সংস্থান করা। সরকার সেই লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে। এরমধ্যেই কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ভূমি উন্নয়ন করা হয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য পিজিসিবি গ্রিড লাইন নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা সকলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে গত আগস্টে একটি আগ্রহপত্র দেয় জার্মান দূতাবাস। সরকারের কাছে দেয়া আগ্রহপত্রটি যাচাই করে রাষ্ট্রীয় এনডব্লিউপিজিসিএলের মাধ্যমে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর আগে দেশের টেলিফোন শিল্পে বিনিয়োগ করেছিল জার্মান কোম্পানিটি। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এনডব্লিউপিজিসিএল তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। আমরা আশা করছি তারা এই কেন্দ্রটিও নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আনতে পারবে। তিনি বলেন, সিমেন্সের দক্ষিণ এশিয়ার কার্যালয়টি ভারতে করা হয়েছে। কিন্তু ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় সিমেন্স বাংলাদেশ নিয়ে নতুন চিন্তা করতে পারে বলে তিনি আশা করেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুত কোম্পানিটি সম্পর্কে এক উপস্থাপনায় প্রকৌশলী সাইফুদ্দিন আহসান জানান, আমার ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। আমাদের এসব কেন্দ্রের প্রধান জ¦ালানি হবে কয়লা এবং এলএনজি। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ছাড়াও আমরা দেশীয় গ্যাসে বিদ্যুত উৎপাদন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য ঐতিহাসিক। এই দিনে আমরা দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম ধাপ অতিক্রম করছি। এর আগে দেশে এত বড় জার্মান বিনিয়োগও আসেনি। তিনি বলেন, আমরা মিশ্র জ¦ালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছি। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে আমাদের সস্তায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার ঠিকঠাক কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে পরিমাণ বিনিয়োগ আসেনি তার থেকে এই সরকারের সময় বেশি বিনিয়োগ এসেছে। এতেই প্রমাণ হয় আমাদের সরকারের প্রতি সকলের আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. টমাস প্রিণজ এ সময় বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি দরিদ্র রাষ্ট্র ছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটেছে। এখন তারা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। সেই প্রযুক্তি হতে হবে অত্যাধুনিক এবং টেকসই। সস্তা প্রযুক্তি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন সম্ভব নয়। জার্মানি আধুনিক প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে মানবিক ভূমিকা রেখেছে তা সারা বিশ্বের জন্যে অনুকরণীয়। জার্মানি প্রথম থেকে এ ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে। তাদের সরকার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে। টমাস প্রিণজ বলেন, জার্মানির সমর্থন মানবিক কারণে। তাদের পরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯ নবেম্বর ঢাকায় আসছেন। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, পিডিবি চেয়ারম্যান খালিম মাহমুদ, সিমেন্স বাংলাদেশ অংশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবাল বোস এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুনীল মাথুর বক্তৃতা করেন।
×