ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলা

দুই মামলায় ১১ জনের যাবজ্জীবন ও ২০ বছর জেল

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

দুই মামলায় ১১ জনের যাবজ্জীবন ও ২০ বছর জেল

কোর্ট রিপোর্টার ॥ ধানন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট রাতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার দুই মামলার ১১ আসামির যাবজ্জীবন ও ২০ বছরের কারাদন্ডের রায় দিয়েছে আদালত। রবিবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোঃ জাহিদুল কবির এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দন্ডবিধি আইনের মামলায় ২০ বছর করে কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড; আনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ২০ বছর কারাদন্ডের মধ্যে দন্ডবিধি আইনের হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের জন্য ১০ বছরের এবং হত্যাচেষ্টার জন্য ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনের পৃথক মামলায় প্রত্যেকের যাবজ্জীবন কারাদ- ও ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড করা হয়েছে। জরিমানা না দিলে অতিরিক্ত ৬ মাসের কারাদন্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দুই রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জামিনে হাজির আসামি মোঃ হুমায়ুন কবীর ওরফে কবিরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছে আদালত। দুই স্থানে, দুই আদালতে পৃথকভাবে মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোঃ জাহিদুল কবির। দন্ডবিধি আইনের মামলায় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের অস্থায়ী এজলাসে বেলা ১টার দিকে রায় দেয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সদরঘাটের স্থায়ী আদালতে বিস্ফোরক আইনের মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। দন্ডবিধি আইনের মামলার রায়ে আসামিদের একটি ধারার দন্ডভোগ করার পর আরেক ধারার দন্ডের দেয়াদ শুরু হবে বলে উিল্লেখ থাকায় প্রত্যেক আসামিকে ২০ বছর করেই কারাদ- ভোগ করতে হবে। দন্ডিতরা হলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামি লেফটেনেন্ট কর্নেল আবদুর রশীদ, জাফর আহম্মদ ওরফে মানিক, হুমায়ুন কবির ওরফে হুমায়ুন, কারাগারে থাকা আসামি গোলাম সারোয়ার ওরফে মামুন, মোঃ সোহেল ওরফে ফ্রিডম সোহেল, জর্জ মিয়া, মোঃ শাজাহান বালু, নাজমুল মাকসুদ ওরফে মুরাদ, মিজানুর রহমান, খন্দকার আমিরুল ইসলাম ওরফে কাজল ও গাজী ইমাম হোসেন। মামলার অপর আসামি সৈয়দ ফারুক রশীদ ও বজলুল হুদার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া এবং আসামি রেজাউল ইসলাম খান ওরফে ফারুক রেজা ও গাজী লিয়াকত হোসেন ওরফে কালা লিয়াকত মৃত্যুবরণ করায় অব্যাহতি পান। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও আমরা মামলা দুইটির বিচার সম্পন্ন করতে পেরেছি। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফ্রিডম সোহেলসহ ৪ জন আসামির আইনজীবী এ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসান বলেন, মামলা ২টিতে সাজা দেয়ার মতো কোন সাক্ষ্য প্রমাণ ছিল না। বিশেষ করে বিস্ফোরক আইনের মামলায় কোন বিস্ফোরক জব্দ না থাকার পরও কিভাবে বিচারক সাজা দিলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। এর আগে গত ১৫ ও ১৬ অক্টোবর মামলা দুইটির যুক্তিতর্কের শুনানির পর রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ফ্রিডম পার্টির নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলি ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। তিনি তখন ওই বাসাতেই থাকতেন এবং ঘটনার সময় ওই বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। মামলায় ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিতে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করে এবং হামলাকারীরা তখন ‘কর্নেল ফারুক-রশিদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিতে দিতে পালিয়ে যায়। হামলার আগে তারা ধানমন্ডির ফ্রিডম পার্টির অফিসে ওই হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ওই বছর ১১ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনা সত্য, তবে কে বা কারা ঘটনা ঘটিয়েছে এই মর্মে সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ার অভিযোগে ওই বছর ৮ ডিসেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিআইডির আবেদনে ১৯৯৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিএমএম আদালত মামলাটি পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি পুনর্তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দাখিল হয়। ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালেই মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে আসে। কিন্তু পলাতক থাকা আসামি নাজমুল মাকসুদ মুরাদকে ২০১৪ সালে ২০ মার্চ ইন্টারপোলের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর পুনরায় ওই আসামিপক্ষে জেরার জন্য সাক্ষীদের রি-কল করা হয়। মামলাটির বিচারকালে আদালত ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০০০ সালের ছিয়াত্তর কেজি বোমাসহ দুইটি হত্যাচেষ্টা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় দশ আসামির মৃত্যুদন্ড এবং এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অপর ৩ আসামির ১৪ বছর করে কারাদন্ড এবং ৯ আসামির ২০ বছর করে কারাদন্ডের রায় প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল।
×