ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক

৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারী ব্যাংকগুলো মিলে চার হাজার ২৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। যা অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য সময়ে কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে ৭৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বা ২৩ শতাংশ। এ সময়ে সরকারী ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারী ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণে এগিয়ে রয়েছে। তবে বেসরকারী ও বিদেশী খাতের অন্তত ৭টি ব্যাংক কোন ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষি ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। একইসঙ্গে কৃষকদের কাছ থেকে সুদ ছাড়া অন্য কোন চার্জ বা ফি নেয়া যাবে না। নতুন উদ্ভাবিত ও উন্নত জাতের সবজি ও ফসলের ক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কান্তি বৈরাগি বলেন, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বন্যার কারণে অনেক কৃষিজমি তলিয়ে গেছে। ফলে আমন মৌসুমই কৃষকদের ভরসার সময়। তাই এ সময়ে কৃষিঋণের চাহিদাও বেশি হয়েছে। ফলে ব্যাংক ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো যাতে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়মিত তদারকি অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় কৃষকদের ঋণ পেতে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সবুজ ছাড়া অন্য কিছু দেখা যায় না। এসব অঞ্চলে বন্যার কোন চিহ্নই নেই। ধারণা করা হচ্ছে শীতকালীন সবজি এবং আমন মৌসুম কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে। এসব অঞ্চলে কৃষকরা প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে সরকারী আট ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করেছে মাত্র এক হাজার ৪৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যা ব্যাংকগুলোর পুরো অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে কৃষিতে সরকারী ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। অন্যদিকে এ সময়ে বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলো মিলে কৃষিঋণ বিতরণ করেছে দুই ৭৬০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যা ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে বিদেশী খাতের ৫টি, বেসরকারী খাতে ২টি ব্যাংক কোন ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। শূন্য ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে- ব্যাংক আল ফালাহ, সিটি ব্যাংক এনএ, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ওরি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক এবং সীমান্ত ব্যাংক। চলতি অর্থবছরেও ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের ন্যূনতম আড়াই শতাংশ কৃষি ও পল্লী খাতে বিতরণ করতে হবে। নতুন ব্যাংকগুলোর জন্য এ হার ৫ শতাংশ। এদিকে গত রবিবার বেসরকারী বাণিজ্যিক ও বিদেশী ব্যাংকসমূহের কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে জারিকৃত এতদসংক্রান্ত সব নির্দেশনা পরিমার্জন ও পরিবর্ধনপূর্বক একীভূত করে নি¤œরূপভাবে একটি নীতিমালা জারি করা হলো। মাঠ পর্যায়ে কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদা, এ খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকের সামর্থ্য ও দক্ষতা, ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ এবং পূর্ববর্তী অর্থবছরে এ খাতে ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জন বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকসমূহ প্রত্যেক অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের একটি যুক্তিসঙ্গত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে। এ লক্ষ্যমাত্রা আগের অর্থবছরের ৩১ মার্চ তারিখের অবস্থাভিত্তিক নিট ঋণ ও অগ্রিমের আড়াই শতাংশের চেয়ে কম হবে না। তবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংক ভিত্তিক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থবছর শেষে কোন ব্যাংক ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে; অনর্জিত অংশের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত জমাকৃত অর্থের ওপর কোনরূপ সুদ দেয়া হবে না। এ পর্যায়ে কোন ব্যাংক যদি পরবর্তী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে আগের অর্থবছর বা বছরসমূহের লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ সম্পূর্ণ বা আংশিক বিতরণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে জমাকৃত বা কর্তনকৃত অর্থ সম্পূর্ণ বা আনুপাতিক হারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহকে ফেরত দেয়া হবে। অর্থবছর শেষে কোন ব্যাংক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে বিকল্প প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনর্জিত অংশের সমপরিমাণ অর্থের ওপর তিন শতাংশ হারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রাখতে পারবে। তবে কোন ব্যাংক যদি পরবর্তী দুই অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বিগত অর্থবছর বা অর্থবছরসমূহের লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অর্থ সম্পূর্ণ বা আংশিক বিতরণ করতে পারে সেক্ষেত্রে জমাকরা অর্থ সম্পূর্ণ বা আনুপাতিক হারে ফেরত দেয়া হবে। অন্যথায়, জমাকরা অর্থ আর ফেরতযোগ্য হবে না।
×