ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলে ঐক্য প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা মঙ্গলবার সবার সামনে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। একজন সিনেটর এদিন ঘোষণা দেন যে তিনি কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করবেন। অপরজন অভিযোগ করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট দেশকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। এএফপি ও বিবিসি। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মঙ্গলবারই প্রথম সিনেটের রিপাবলিকান সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে লাঞ্চ করেন। অনৈক্য দূর করে দলে ঐক্য ফিরিয়ে আনাই ছিল ট্রাম্পের উদ্দেশ্য। কিন্তু এর কয়েক মিনিট পরই সিনেটের জেফ ফ্লেক ফ্লোর নিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন। ১৭ মিনিটের ওই বক্তৃতায় তিনি ট্রাম্পকে তুলোধুনো করে ছাড়েন। ৫৪ বছর বয়সী আরিজোনা থেকে নির্বাচিত সিনেটর ফ্লেক বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ, নীতির প্রতি হুমকি, প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, মিথ্যাচারিতা ও অশোভনতা এগুলোর কোনটিই আমাদের রাজনীতির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল না। আমাদের অবশ্যই রাজনীতির অধঃপতন রোধ করতে হবে। খামখেয়ালিপূর্ণ, ক্ষ্যাপাটে ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তার কারণ তুলে ধরা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে খামখেয়ালিপূর্ণ, ক্ষ্যাপাটে ও অসৌজন্যমূলক আচরণের কোন যৌক্তিকতা নেই।’ রিপাবলিকান পার্টির কোন কোন সদস্যের সমালোচনা করে ট্রাম্প যে টুইট করেছেন সে কথা উল্লেখ করে ফ্লেক বলেন, ‘যে জোট এবং সমঝোতার ওপর পুরো বিশ্বের স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল, ১৪০ ক্যারেক্টার (টুইট বার্তা) তাকে নিয়মিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে।’ তিনি বলেন, রাজনীতি আমাদের নীরব করতে পারে যখন আমরা কথা বলা ও নীরব থাকা দুটোকে সমান বিবেচনা করব। কিন্তু আমি নীরব থাকা সমীচীন মনে করি না। ফ্লেক ২০১৩ সাল থেকে সিনেটে রয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের একজন সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনি জানিয়েছেন আগামী বছর সিনেটের পুনর্নির্বাচিত হয়ে হয়ে আসার ইচ্ছা তার নেই। ফ্লেকের এই বক্তৃতার কয়েক ঘণ্টা আগে টেনেসি থেকে নির্বাচিত সিনেটর বব কোর্কার ট্রাম্পের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে পদত্যাগ করেন। ট্রাম্পকে একজন ‘অবিশ্বস্ত’ ব্যক্তি অভিহিত করে তিনি অভিযোগ করেন ট্রাম্প দেশকে এর মূল ভিত্তি থেকে সরিয়ে এনেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদের পর তিনি পদত্যাগ করেন। মঙ্গলবার ক্যাপিটল হিলে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে দলের সঙ্গে ট্রাম্পের দূরত্ব বাড়ছে। কিন্তু এদিনই ধারণা করা হয়েছিল ট্রাম্প সম্ভবত দলের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে যাচ্ছেন। কারণ তিনি তিনি এদিন সিনেটে রিপাবলিকান ককাসের সঙ্গে একসঙ্গে দুপুরের খাওয়া সারেন। টাম্প চাইছেন বছর শেষ হওয়ার আগেই কর হ্রাস প্যাকেজটি পাস করিয়ে নিতে। কিন্তু ট্রাম্পের ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে। প্যাকেজটি নিয়ে কোর্কারের সঙ্গে ট্রাম্পের একাধিকবার বাদানুবাদ হয়েছে। কোর্কারের সমালোচনা করে ট্রাম্প অনেকগুলো টুইট করেন। একটি টুইটে ট্রাম্প লিখেন, ‘বব কোর্কার প্রেসিডেন্ট ও’কে (ওবামা) ইরানের পরমাণু চুক্তির মতো একটি খারাপ চুক্তি সহায়তা করছেন। তিনি টেনসির একজন নির্বাচিত কুকুর ধরা কর্মকর্তাও হতে পারেন নি। তিনি এখন কর হ্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন।’ জবাবে টুইটারে কোর্কার লিখেন, এগুলো একজন মিথ্যাবাদীর মিথ্যা কথন। আমি বুঝি না একজন প্রেসিডেন্ট কিভাবে নিজেকে এতটা নিচে নামাতে পারেন। তিনি দেশকে এর ভিত্তি থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এভাবে টুইটারে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তিনি পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় গত বছর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রার্থিতা সমর্থনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। গত সপ্তাহে দুই সিনিয়র রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং সিনেটর জন ম্যাককেইন ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন। এরপর এখন কোর্কার ও ফ্লেকের সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধের কথা সামনে এল। এসব থেকে ধারণা করা যায় যে তিনি হয়তো প্রত্যাশা মতো চলতি বছরের মধ্যেই কর বিল পাস করিয়ে নিতে পারবেন না।
×