ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আলী ইউনুস হৃদয়

রুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন ‘স্টুডেন্ট ফর্মুলা রেসিং কার’

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২২ অক্টোবর ২০১৭

রুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন ‘স্টুডেন্ট ফর্মুলা রেসিং কার’

কয়েকজন বন্ধুর আড্ডা চলত অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। আড্ডার ফাঁকে ঠিক করল কাজ শুরু করবে তারা। কয়েকজন বলল কাজ শুরু করতে হলে কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। খোঁজ নেয়া শুরু হলো দেশে-বিদেশে প্রতিযোগিতার কোন ইভেন্ট আছে কিনা? দেশের ভেতরে তেমন কোন প্রতিযোগিতার খোঁজ মিলল পেল না তারা। আগে একটা প্রতিযোগিতা হতো ‘ইকোরাম’ নামে। বছর খানেক হলো সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর আন্তর্জাতিক কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে খোঁজাখু্ঁিজ চলতে থাকে। শুরুর গল্পটা এমনই ছিল রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ দলের সদস্যদের। ক্র্যাক প্লাটুন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালের নবেম্বরে ফ্রান্সের ‘ভ্যালুইয়ো ইনোভেশন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে। সেখানে দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত প্রতিযোগিতা করে দলটি। তখন দলের আট জনই ছিল যন্ত্রকৌশল বিভাগের। পরের বছর বাংলাদেশ ইয়ুথ ফেস্ট-২০১৬ প্রতিযোগিতায় ‘ফ্রেস টেকনোলজি আইডিয়া’ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় সেই ক্র্যাক প্লাটুন দলটি। এ ছাড়া গত বছর ভারতের তামিলনাড়–তে ‘কোয়াড বাইক ডিজাইন চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করে দলটি। সবশেষ গত মাসের ৫ সেপ্টেম্বর ‘ স্টুডেন্ট ফর্মুলা জাপান-২০১৭’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ক্র্যাক প্লাটুন দল। এজন্য স্টুডেন্ট ফর্মুলা রেসিং কার তৈরি করেছে বলে জানান ক্র্যাক প্লাটুন’ দলটির ম্যানেজার ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুসা মাহমুদ রানা। জাপানে অংশ নেয়া দলটির অধিনায়ক যন্ত্রকৌশল বিভাগের সুমিত কর্মকার। সুমিত বলেন, দেশে রেসিং কার তৈরির স্বপ্নটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই। যদিও অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। কাজের মধ্য দিয়ে পুরো দল অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কাজ করার মধ্য দিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দলে পরিণত হয়েছি আমরা। জাপানের সিজিওকা ইকোপা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫-৯ সেপ্টেম্বর আয়োজিত স্টুডেন্ট ফর্মুলা কার প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ২৫টি দেশের ৯০টি দলের অংশগ্রহণ করে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। দলটির যাতায়াত সুবিধায় সহযোগিতা করেছে রানার মোটরস। তবে তাদের কার নিয়ে যাওয়ার অনিশ্চয়তা ছিল সেটিও সম্ভব হয় কিন্তু ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় রান করতে পারেনি রেসিং কারটি। কারটিতে ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার স্পিড তোলা যাবে। ফ্লাট রাস্তায় চলাচল উপযোগী রেসিং কারটি। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করা এই দলটি ১১৪টি দলের মধ্যে ৮১তম অবস্থান অর্জন করে। জাপানে অংশ নেয়া আরেক সদস্য দীপাঞ্জন সরকার বললেন, বিশ্বের নামী-দামী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে লড়াই, তাদের গাড়িগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে আমাদের গাড়ির কি কি ত্রুটি আছে বা কিভাবে আরও উন্নত করা যাবে আমরা তা আলোচনা করেছি। তাদের গাড়িগুলোর স্পন্সর ছিল হোন্ডা, সুযুকি, টয়োটা, মিতসুবিশি ইত্যাদির মতো বড় কোম্পানি। এজন্য তাদের বেশিরভাগ পার্টসই কিনে এ্যাসেম্বল করা। আর আমরা অনেক দিন ধরে স্পন্সরশীপ সমস্যায় ভুগছিলাম। যথাযথ আর্থিক সহায়তা পেলে আগামীতে যে কোন প্রতিযোগিতায় লড়াই করার শক্তি অর্জন আরও সহজ হবে।
×