ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে ॥ এরশাদ

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে ॥ এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, সারাদেশে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সঙ্কট, রোহিঙ্গা সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, প্রশাসনিক দুর্বলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, বিচার বিভাগসহ সর্বক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশে এখন আইনের শাসন নেই বললেই চলে। তাই সাধারণ মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলানায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যৌথ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় ঢাকা মহানগর নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি দেখা গেছে আজকের বৈঠকে। আমরা নাকি মধ্যম আয়ের দেশ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, মধ্যম আয়ের দেশ হলে অথচ শুক্রবার মাত্র তিন টাকার ডিম কেনার জন্য রাজধানীতে যা ঘটছে তা হতো না। এ চিত্র দেখে কি মনে হয় দেশ আসলে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হয়েছে? সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, বিএনপি মাত্র দশ বছর ক্ষমতার বাইরে আছে। এর মধ্যে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আমরা ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু জনগণের ভালবাসায় জাতীয় পার্টি এখনও বাংলাদেশে জনপ্রিয় দল । বিএনপি আগামীতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। কিন্তু আমি আশাবাদী তারা বিগত নির্বাচনের মতো আর ভুল করবে না। নির্বাচনে অংশ নেবে। নিজ দলের নেতাকর্মীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এরশাদ বলেন, তোমরা আমার নয় বছরের শাসনামলের উন্নয়ন জনগণের কাছে তুলে ধর না। এটা ঠিক নয়। জাপার উন্নয়ন কর্মকা- মানুষের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব তোমাদের। তাহলে আমাদের ভোট বাড়বে। মানুষ জাতীয় পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হবে। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনাররা সেই আমার কর্মকা-ের যে প্রশংসা করেছেন তাতে আমি অভিভূত হয়েছি। তারা সরকারী উচ্চ পদে থেকে আমার প্রশংসা করেছেন। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন রোহিঙ্গারা নাকি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার গেছে। তারা বাঙালী। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের পর মনে হয় না, রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে পাঠানো যাবে। তারপরও হতাশ হলে চলবে না। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এরশাদ বলেন, আপনি যতই কূটনৈতিক তৎপরতা চালান না কেন, মনে হয় না তারা আর ফিরে যেতে পারবে বা মিয়ানমার ফেরত নেবে। তাই আমি অনুরোধ করব তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে যদি জাতীয় পার্টির সাহায্য প্রয়োজন হয়, আমরা সাধ্যমত সাহায্য করব। এরশাদ সারাদেশ থেকে আগত দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। কিন্তু তোমরা মনে রেখ, ক্ষমতা কেউ হাতে তুলে দেয় না। ক্ষমতা আদায় করে নিতে হয়। এজন্য দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। সভায় বিরোধী দলের নেতা ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, ক্ষতায় যেতে হলে দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে জাতীয় পার্টির নয় বছরের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতির জনক। কারণ তিনি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর পল্লীবন্ধু এরশাদ স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। জাপার কো- চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, যারা দল থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলে গেছেন তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আবার অনেক পরীক্ষিত কর্মীও সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না। জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে আমাদের কর্মসূচী হতে হবে বাস্তবধর্মী ও কল্যাণমুখী । মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী যে নির্বাচন হবে তাতে আমরা অংশ নিতে চাই। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রাখতে হবে। যৌথসভায় বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মশিউর রহমান রাঙ্গা, শেখ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সুনীল শুভ রায়, এটিইউ তাজ রহমান, মেজর (অব) খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল আলম রুবেল, নুরুচ্ছাফা সরকার ও এ কে এম আশরাফুজ্জামান খান, শফিকুল ইসলাম মধু, ইয়াহিয়া চৌধুরী, মহসিন উল হাবলু, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রমুখ।
×