ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পুরান ঢাকার অবস্থা গ্রামের চেয়েও খারাপ ॥ মেয়র সাঈদ খোকন

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

পুরান ঢাকার অবস্থা গ্রামের চেয়েও খারাপ ॥ মেয়র সাঈদ খোকন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরান ঢাকার অবস্থা গ্রামের চেয়েওে খারাপ এবং শোচনীয়। সেখানে বসবাসের পরিবেশ নেই। দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে, এমনটাই দাবি করলেন খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। শনিবার নগর ভবনের সভাকক্ষে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উদ্যোগে পুরান ঢাকার উন্নয়নে সংস্থাটি কর্তৃক গৃহীত বংশালে একটি আবাসন প্রকল্প এগিয়ে নিতে স্থানীয়দের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে মেয়র এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে ইংলিশ রোড, বাবুবাজারের কাছে দখলে থাকা ৭ একর জমি উচ্ছেদ করে সেখানেই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এ সময় রাজউকের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, রাজউকের উর্ধতন কর্মকর্তাগণসহ পুরান ঢাকার স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সভাসূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় ‘আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ওল্ড ঢাকা’ রাজউক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এতে বাবুবাজার থেকে বংশাল পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৭ একর জমির ওপর থেকে স্থাপনা ভেঙ্গে নতুন করে আধুনিক বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনসহ অন্য নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সবার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে যার যার সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হবে। বৈঠকে প্রজেক্টের তথ্য উপস্থাপন করেন রাজউকের ডেপুটি টাউন প্ল্যানার এ্যান্ড প্রজেক্ট ডিরেক্টর মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে বংশাল এলাকাকে বেছে নেয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ৮টি ২৪ তলা ভবন এবং ৬টি কমার্শিয়াল ভবন হবে। এক্ষেত্রে একেকজন ৩টি করে বাণিজ্যিক স্পেস এবং ৩টি করে ফ্ল্যাট পাবেন। এছাড়া স্কুল, খেলার মাঠ, মসজিদ, হেলথ ক্লাব ইত্যাদি থাকবে। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন পুরান ঢাকার পঞ্চায়েত সদস্য, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা। তারা রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। কিন্তু কিছু বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভায় বংশাল পঞ্চায়েত সদস্য আব্দুল হাই বলেন, আমাদের ভবনে দোকান আছে। ভাড়া পাই। আবার আমাদের ওয়ারিশও আছে। আর এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে বলা হচ্ছে, ৩ বছরের মতো সময় লাগবে। এসময় আমরা কোথায় থাকব। যে ভাড়া পাই, সে টাকা কে দেবে। আবার ওয়ারিশরাও কিভাবে তাদের প্রাপ্য পাবেন, এসব নিশ্চিত করতে হবে। তাই প্রকল্পটি অন্য জায়গায় বাস্তবায়ন করে আগে আস্থা অর্জন করুন। ব্যবসায়ী এনায়েতুল্লাহ বলেন, বংশালে আমাদের কোন সমস্যা নেই। তাই অন্য জায়গায় করে আগে আস্থা অর্জন করুন। সভায় সভাপতির বক্তব্যে সাঈদ খোকন বলেন, এক সময় জাপানের টোকিও এবং সিঙ্গাপুরও পুরান ঢাকার মতো ছিল। কিন্তু এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে তারা নগরকে বসবাসযোগ্য করে তুলেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করলে আমরাও টোকিও, সিঙ্গাপুরের মতো পুরান ঢাকাকে উন্নত শহরে পরিণত করতে পারব। মেয়র বলেন, রাজউকের প্রতি আস্থা না থাকায় কেউ এই প্রকল্প বংশালে চান না। তাই এটি স্থগিত করা হলো। তবে আমরা প্রকল্পটি করতে চাই। ইংলিশ রোড, বাবুবাজারের দিকে ৭ একর জমি দখলে আছে। আপনারা দখলদার উচ্ছেদে সহায়তা করুন। সেখানেই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, সভায় উপস্থিত স্থানীয় লোকজন মূলত তাদের পৈত্রিক ভিটা ছাড়তে রাজি নয়। আপাতত এই এলাকায় নতুন কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় তারা রাজধানীর অন্যত্র প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছেন। অন্যস্থানে আগে প্রকল্প শুরু করার পর বংশালে এটি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাগণ রাজউককে অনুরোধ করেছেন। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি।
×