ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় বখাটে ধরতে গিয়ে হামলায় আহত তিন পুলিশ, খোয়া গেল ওয়্যারলেস সেট

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১০ অক্টোবর ২০১৭

বগুড়ায় বখাটে ধরতে গিয়ে হামলায় আহত তিন পুলিশ, খোয়া গেল ওয়্যারলেস সেট

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগরে বখাটে যুবকের উত্ত্যক্তর কারণে অপমান ও ক্ষোভে রোজিফা আকতার সাথী (১৪) নামে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী রবিবার বিকেলে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর ওই রাতে পুলিশ হুজাইফা ইয়ামিন (১৬) নামে বখাটে ও তার বাবাকে ধরতে গেলে পুলিশের ওপর হামলা হয়। এতে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ সময় পুলিশের একটি ওয়্যারলেস সেট খোয়া যায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার জিয়ানগর ম-লপাড়ার খুদে ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানীর মেয়ে সাথী জিয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। পড়ালেখায় সে ছিল খুব মেধাবী। ক্লাসে ছিল প্রথম রোলের অধিকারী। সে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। একই এলাকার হেলুঞ্জা মীরপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম মীরের ছেলে হুজাইফা ইয়ামিন দীর্ঘদিন ধরে সাথীকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি সাথীর পিতা বখাটে ইয়ামিনের বাবাকে একাধিকবার জানালেও বখাটের উত্ত্যক্ত করা থামেনি। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিমকেও দুই দফা জানান হয়। এর পরেও বখাটের অত্যাচার থেকে মেধাবী স্কুলছাত্রী রক্ষা পায়নি। দুপচাঁচিয়া বিয়াম স্কুলেরছাত্র ইয়ামিনের বখাটে কর্মকা-ের কারণে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে সে অন্যত্র ভর্তি হয়। এবার সে এসএসসি পরীক্ষার্থী বলে পুলিশ জানায়। রবিবার সকালে সাথী বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে প্রাইভেট পড়তে যায়। সেখান থেকে দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে ইয়ামিন আবার তার পিছু নেয় এবং উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এ ঘটনায় সাথী মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। আসার পথে জিয়ানগর বাজারে বাবার সঙ্গে দেখা হলে সাথী তার বাবাকে ‘কথা আছে’ বলে দ্রুত বাড়ি আসতে বলে। আর বাড়িতে ফেরার পর ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সাথী। পুলিশ খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে অভিযুক্ত বখাটে ও তার বাবাকে গ্রেফতার করতে জিয়ানগরের বজরাপুকুর বাজার এলাকায় অভিযান চালায়। পুলিশ সেখানে ইয়ামিনের বাবা আমিনুল মীরকে আটক করলে তার লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আমিনুল মীরকে ছিনিয়ে নেয়। হামলায় দুপচাঁচিয়া থানার এসআই আব্দুর রহিম, এসআই জাকির ও এএসআই হাফিজ আহত হয় বলে দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ওই এলাকায় দ্বিতীয় দফা অভিযান চালিয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ২৬ জনকে গ্রেফতার করে। দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, স্কুলছাত্রীকে উত্যক্ত ও আত্মহত্যা এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী আত্মহননকারী স্কুলছাত্রীর পিতা গোলাম রব্বানী এবং অপর মামলার বাদী পুলিশ। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল ম-ল জানিয়েছেন, পুলিশের ওপর হামলার সময় একটি ওয়্যারলেস সেট খোয়া যায়। পুলিশ রাতেই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় গোটা ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত বখাটে ইয়ামিন ও পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া তার পিতা আমিনুল মীরকে পুলিশ গ্রেফতার ও খোয়া যাওয়া ওয়্যারলেস সেট উদ্ধার করতে পারেনি।
×