ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রাচ্য চিত্রকলার চিত্রকর্মে দুই দেশের শিল্পীদের মেলবন্ধন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১০ অক্টোবর ২০১৭

প্রাচ্য চিত্রকলার চিত্রকর্মে দুই দেশের শিল্পীদের মেলবন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাদামী রঙের জমিনের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে গাঢ় সবুজ পাতা। চারপাশে বিস্তৃত হয়েছে বৃক্ষটির ডালপালা। পত্র-পল্লবের মাঝে দৃশ্যমান লাল-সাদাসহ নানা রঙের ফুল। জলরংয়ের আশ্রয়ে সৃজিত চিত্রকর্মটি আঁকা হয়েছিল ১৯৪৩ সালে। এঁকেছিলেন ভারতের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়। ভারতের ইমেজ এ্যান্ড ভিশন গ্যালারিতে থাকা সেই ছবিটি এখন শোভা পাচ্ছে চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে। এমন অনেক বিখ্যাত এবং নবীন-প্রবীণ চিত্রকরের চিত্রকর্মের দেখা মিলছে এই প্রদর্শনালয়টিতে। বাংলাদেশ ও ভারতের একঝাঁক চিত্রশিল্পীর চিত্রসম্ভার নিয়ে চলছে প্রদর্শনী। প্রাচ্য চিত্রকলার রীতিতে আঁকা ছবিগুলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে বিচিত্র বিষয়। সব মিলিয়ে চিত্রকলার সমৃদ্ধ ও সহজবোধ্য ধারা বৈভবময় এক শিল্প আয়োজন। বাংলাদেশের ২৫ শিল্পীর সঙ্গে প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ভারতের ২৬ শিল্পীর কাজ। দুই দেশের ৫১ শিল্পীর প্রাচ্যচিত্রকলা ধারার এ প্রদর্শনীর আয়োজক ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি-১ এ সোমবার এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। ‘সপ্তম ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং এক্সিবিশন’ শীর্ষক আয়োজনটি চলবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। সোমবার বিকেলে নৃত্য-গীতের মাধ্যমে সূচনা হয় প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিকতা। ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত ফেরদৌস। পরিবেশনা শেষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, কবি নির্মলেন্দু গুণ, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপের কিউরেটর ড. মলয় বালা। প্রদর্শিত শিল্পকর্মগুলোয় উপস্থাপিত হয়েছে প্রাচ্যচিত্রকলার সমৃদ্ধ ধারা ও ঐতিহ্যের সুস্পষ্ট অনুষঙ্গ। শিল্পীর স্বতন্ত্র চিত্রশৈলীতে উঠে এসেছে প্রাচ্যের জীবনবোধ ও ভাবনার গতিধারা। আঁকার করণকৌশলে পাশ্চাত্য ধারার পরিবর্তে আবির্ভূত হয়েছে প্রাচ্যের সহজিয়া ধারা। প্রতিটি ক্যানভাস যেন ধাবিত হয়েছে আপন শেকড়ের সন্ধানে। প্রাচ্যরীতির নানা মাধ্যমের চিত্রপটগুলো দর্শনার্থীদের নয়নে ছড়িয়েছে স্বতন্ত্র ধারার শিল্প-অনুভূতি। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে ১১ জন রয়েছেন ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী। যাদের চিত্রকর্ম নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে মাস্টার সিরিজ। এ সিরিজের শিল্পীরা হলেনÑ বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, বীরেন দে, দেবীপ্রসাদ রায় চৌধুরী, গোপাল ঘোষ, ইন্দ্র দুগার, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার, মানিকলাল ব্যানার্জী, মৃণাল কান্তি দাস, নিখিল বিশ^াস ও সুধীর খাস্তগীর। সমসাময়িক শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেনÑ অনন্যা রায় চৌধুরী, অনুরাধা গাইন, অপূর্ব সেনগুপ্ত, অর্ঘ দীপ্তকর, বিনয় দেউলি, ইনাক্ষী দাস, মিন্টু নাইয়া, নন্দদুলাল মুখোপাধ্যায়, পরাগ হালদার, রামানন্দ বন্দোপ্যাধায়, রীনা রায়, সোমা মুখোপাধ্যায়, সুকান্ত সাহা, সুস্মিতা সাহা, স্বপন দাস এবং তন্ময় দাসগুপ্ত। বাংলাদেশী শিল্পীরা হলেন শওকাতুজ্জামান, আব্দুস সাত্তার, অমিত নন্দী, বিকাশ আনন্দ সেতু, ইতি রাজবংশী, ফাহমিদা হক মাহী, হাসুরা আক্তার রুমকী, হরেন্দ্রনাথ রায়, জাঁ-নেসার ওসমান, কান্তিদেব অধিকারী, কাজী নওরীন মিশা, লক্ষণ কুমার সূত্রধর, মলয় বালা, নারগীস পারভীন, নিপা রাণী সরকার, নন্দিতা সুতার, রফিক আহমেদ, সামিনা জামান, শংকর মজুমদার, সুমন কুমার সরকার, সানজিদা আক্তার, সুশান্ত কুমার অধিকারী, তাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম এবং জাহিদ মুস্তফা। ৮০টি চিত্রকর্মে সজ্জিত এ প্রদর্শনী চলবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ভোলার ঘূর্ণিঝড় ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিভাষ্যনির্ভর গ্রন্থের প্রকাশনা ইতিহাসকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে গ্রন্থটি। সত্তরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পটভূমিকার সঙ্গে নানাভাবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আছে ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের পাশে অবস্থান নেয়া বিদেশী বন্ধুদের কথা। ১৯৭০ সালের সাইক্লোনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং তার পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও সেই সময়ের মানবিক বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কর্নেলিয়া রোউডের লেখা ‘ক্যাটালিস্ট : ইন দ্য ওয়েক অব গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’ বইটি একটি প্রামাণ্য দলিল। সোমবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়ে গেল। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর এবং প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্য প্রকাশ। এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংহতি আন্দোলনের কর্মী ডাঃ জন রোউড এবং একাত্তরের শরণার্থী-ত্রাণ সংগঠক জুলিয়ান ফ্রান্সিস। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাহিত্য প্রকাশের পরিচালক লেখক প্রাবন্ধিক মফিদুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।
×