ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিআইবিএমের গবেষণা;###;শক্তিশালী ব্যবস্থার জন্য ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী পুঁজি সংরক্ষণ জরুরী

বড় দুর্যোগে ৭ ঝুঁকিতে থাকে ব্যাংকিং খাত

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৬ অক্টোবর ২০১৭

বড় দুর্যোগে ৭ ঝুঁকিতে থাকে ব্যাংকিং খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বড় ধরনের দুর্যোগে সাত ধরনের ঝুঁকিতে থাকে ব্যাংকিং খাত। এগুলো হলো ঋণ ঝুঁকি, নিরাপত্তা, তারল্য, সুদের হার, দক্ষতা সঙ্কট, সুনাম এবং সামষ্টিক অর্থনীতি ঝুঁকি। এজন্য এখনই ভবিষ্যত দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটরিয়ামে এক সেমিনারে ‘এ্যাড্রেসিং ডিজাস্টার রিস্ক বাই ব্যাংকস: বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মোঃ আহসান হাবীব। সেমিনারে ‘ইমপ্যাক্ট অব এডপটিং ব্যাসেল এ্যাকর্ড ইন দ্যা ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আরও একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মোঃ নেহাল আহমেদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও কনসালটেন্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। ‘এ্যাড্রেসিং ডিজাস্টার রিস্ক বাই ব্যাংকস:বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ধরনের দুর্যোগে ব্যাংকে কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে তার তথ্য ব্যাংকের কাছে নেই। ব্যাংকগুলোর এ তথ্য সংরক্ষণে অনীহা রয়েছে। আমানত ও বিনিয়োগ প্রভাব সম্পর্কে ব্যাংকিং খাত কোন তথ্য সংরক্ষণ করে না। এতে আরও বলা হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে হবে বলে ৪৭ শতাংশ ব্যাংকার মত দিয়েছেন। ১৭ শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছেন সচেতনতা প্রয়োজন। এছাড়া যাবতীয় কৃষি ঋণ বিতরণে বীমার আওতায় আনতে হবে। এদিকে ‘ইমপ্যাক্ট অব এডপটিং ব্যাসেল এ্যাকর্ড ইন দ্যা ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী পুঁজি সংরক্ষণ জরুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে দুর্যোগে ব্যাংকিং খাত থমকে যায়। প্রায়ই সুদ মওকুফ, ঋণ পুনঃতফসিল করতে হয়। এ কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ব্যাংকিং খাত অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়ে। ২০১৫ সালের রাজনৈতিক গোলযোগেও ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৬ থেকে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এটি ২০১৯ সালের মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআইবিএমের গবেষণায় পাওয়া সুপারিশগুলো ব্যাসেল-৩ কাজে আসবে। বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাসল-৩ বাস্তবায়নে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে সচেতন হতে হবে। বোর্ডকে প্রত্যেকটি ধাপ বোঝানোর দায়িত্ব টপ ম্যানেজমেন্টের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকিং খাতে কিছু ক্ষেত্রে অস্থিরতা চলছে। হঠাৎ ব্যাংক কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। আবার অন্য খাতের লোকজনকে বড় বেতনে ব্যাংকে সিনিয়র পদে বসানো হচ্ছে। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য ভাল খবর নয়। মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনটা জরুরী। খুব তাড়াহুড়া না করে পরিকল্পনা তৈরি করে ব্যাচেল-৩ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ভাল অবস্থানে ফিরছে। বিডিবিএল ১০ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে সরকারকে। বড় দুর্যোগে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি এড়াতে বীমার আওতায় আনার ওপর জোরারোপ করেন। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম।
×