ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের চিঠি দিয়েছে রেলকে

লাখ লাখ ট্রেনযাত্রীকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

লাখ লাখ ট্রেনযাত্রীকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের উদ্যোগ

মশিউর রহমান খান ॥ সারাদেশে সকল ট্রেনে দৈনিক যাতায়াতকারী লাখ লাখ যাত্রীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীসেবার মান বজায় রাখতে সঠিক সময়ে ট্রেন পরিচালনার পাশপাশি যাত্রীকে পরিবেশন করা খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন। একই সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে যাত্রীর স্বাস্থ্যহানি কোনমতেই সহ্য করা হবে না বলে ঘোষণা দেন। দেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকদের নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ট্রেনের ভেতর সরকারীভাবে স্বীকৃত ক্যাটারিং সার্ভিসের দেয়া ও সাধারণ হকারদের বিক্রয় করা খাবার স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা পরীক্ষা করেই কেবল পরিবেশনের কথা ভাবছে সরকারী এ সংস্থাটি। ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে রেলে খাদ্য সরবরাহকারী ক্যাটারিং সার্ভিসের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। অপরদিকে চিঠি প্রাপ্তির পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত চলতি মাসের মধ্যেই এ নিয়ে ক্যাটারিং সার্ভিস প্রোভাইডার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় মতবিনিময় সভার আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহবুব কবীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দেশবাসীর জন্য নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রবর্তন করা হয়েছে। তাই গণমানুষের বাহন বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিবহন সেক্টরে এক বিপ্লব সাধন করে চলেছে। সময়মতো নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে যাত্রীসাধারণকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া রেলওয়ের অন্যতম অভীষ্ট লক্ষ্য। যাত্রীদের মানসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করা জনকল্যাণ সাধনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অন্যতম ম্যান্ডেট। চিঠি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলরত সব যাত্রীবাহী ট্রেনে মানসম্মত ও নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে খাবার সরবরাহকারী সব ক্যাটারিং সার্ভিসের মালিকপক্ষের সঙ্গে রেল ভবনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একটি সভার আহ্বান করেছে। এ লক্ষ্যে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের যে কোন দিন ক্যাটারিং সার্ভিস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানানো হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দেশের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে মোট ৩৪৪টি লোকাল, মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেনে দৈনিক প্রায় ২ লক্ষাধিক যাত্রী বহন করা হলেও শুধু আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ট্রেনে প্রায় লক্ষাধিক যাত্রীকে খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সোনার বাংলা আন্তঃনগর ট্রেনেই শুধু যাতায়াত ভাড়ার পাশপাশি টিকেটে খাবারের মূল্য সংযোজন করা রয়েছে। তাই বাধ্যতামূলকভাবে খাবারসহ টিকেটে প্রতি যাত্রীকে খাবারের মূল্য প্রদান করতে হয়। ফলে সরাসরি রেল কর্তৃপক্ষকে এসব খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (সদস্য) যুগ্ম সচিব মাহবুব কবীর মিলন জনকণ্ঠকে বলেন, ট্রেনে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী চলাচল করছে। সারাদেশের বিভিন্ন ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীদের মাঝে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিবেশিত ও হকারদের বিক্রয় করা খাবার আদৌ মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে এসব ট্রেনে পরিবেশন করা খাবারের মান অত্যন্ত নি¤œমানের। আইন অনুযায়ী, নিরাপদ খাদ্য পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করা অত্যন্ত জরুরী। ফলে কর্তৃপক্ষ মনে করে, যাত্রীসাধারণ যাতে ভেজাল ও মানহীন খাদ্য গ্রহণ করতে করতে না পারে, সে জন্য আমরা রেল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে ক্যাটারিং মালিক ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সচেতনতামূলক একটি বৈঠক করব। এতে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হবে। নির্দেশনার পরও ক্যাটারিং সার্ভিস প্রোভাইডাররা যদি নাগরিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষা করেন বা কোন প্রকার উন্নতি না হয় তাহলে আমরা সংশ্লিষ্ট খাদ্য পরিবেশনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। নিরাপদ খাদ্য পরিবেশন করে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাই আমাদের মূল অঙ্গীকার। নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেণ, বর্তমানে আমরা প্রায় ৯৫ ভাগ ট্রেন সঠিক সময়ে পরিচালনা কওে যাত্রীদের নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছাতে কাজ করছি। পাশাপাশি প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক যাত্রী চলাচলের সময় খাবার গ্রহণ করে থাকেন। বর্তমানে ট্রেনে দেয়া খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের বলে অভিযোগ রয়েছে। খাবার তৈরি, পরিবেশন পদ্ধতি, খাবারের মান ও মূল্য নিয়ে আমাদের যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। অনেক যাত্রীর অভিযোগ পচা, বাসি খাবারও পরিবেশন করা হয়। যা কোনমতেই কাম্য নয়। একই সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে যাত্রীর স্বাস্থ্যহানি কোনমতেই সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, এসব খাবার পরিবেশনের মূল দায়িত্ব পালন করেন ক্যাটারিং সার্ভিস প্রোভাইডাররা। আমরা রেলওয়েকে নিরাপদ যাতায়াতের পাশাপাশি উন্নত খাবার পরিবেশনের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দেয়া চিঠির আলোকে চলতি সপ্তাহের যে কোন দিন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট ক্যাটারিং সার্ভিসের প্রোভাইডারকে নিয়ে যাত্রীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ সংশ্লিষ্ট আইন বাস্তবায়নে একটি দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে সভার আয়োজন করছি। এ সভায় যাত্রীদের যাত্রাপথে স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে স্বাস্থ্যসম্মত তাজা খাবার পরিবেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এর মাধ্যমে যাত্রীর স্বার্থ পুরোপুরি রক্ষা করা সম্ভব হবে।
×