ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মীম নোশিন নাওয়াল খান

খেলনার জাদুঘর

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

খেলনার জাদুঘর

ছোটদের সবচেয়ে প্রিয় শব্দগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘খেলনা।’ খেলতে ভালবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর খেলতে হলে খেলনা তো লাগবেই। দোকানে ঢুকলেই চোখে পড়ে হরেক রকম খেলনা। আর একেকজনের পছন্দও একেক রকম। কেউ পুতুল ভালবাসে, তো কেউ গাড়ি। আবার কেউ বল খেলতেই পছন্দ করে। কারোর আবার সব খেলনাই চাই। এমন করে খেলনা জমতে জমতে বাসাটাই হয়ে ওঠে খেলনার রাজ্য। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই খেলনাগুলো ধীরে ধীরে চলে যায় ফেলে দেয়ার জিনিসগুলোর তালিকায়। তবে সবাই কিন্তু বড় হয়ে খেলনাগুলোকে ফেলে দেয় না। কেউ কেউ জমিয়ে রাখে সব সময়। আর এ রকম জমিয়ে রাখা খেলনা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জাদুঘরও। অবিশ্বাস্য লাগছে? সত্যিই কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে খেলনার জাদুঘর। প্রথমে ছোট করে শখের বশে খেলনার জাদুঘরের ধারণাটাকে বাস্তবায়ন করা হলেও এখন বিরাট আকারের জাদুঘর তৈরি হয়ে গেছে খেলনা নিয়েই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খেলনার জাদুঘরগুলোর কয়েকটার গল্প জেনে নেয়া যাক- মিউজিয়াম অব চাইল্ডহুড, এডিনবার্গ স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের রয়াল মাইলে অবস্থিত মিউজিয়াম অব চাইল্ডহুড। নাম শুনেই বুঝতে পারছ, খুব মজার একটা জাদুঘর এটা। এখানে অনেক রকম পুতুলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা রয়েছে। ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য স্থাপিত বিশ্বের প্রথম জাদুঘর এটা। আঠার থেকে একুশ শতকের অসংখ্য খেলনা সংরক্ষিত আছে এখানে, যেগুলো প্রথমে এডিনবার্গের কাউন্সিলর প্যাট্রিক ম্যুরে সংগ্রহ করেছিলেন। বছরে প্রায় আড়াই লাখ দর্শনার্থী এই জাদুঘরটি দেখতে আসে। এখানে কোন প্রবেশমূল্য প্রয়োজন হয় না। পেনাং টয় মিউজিয়াম, মালয়েশিয়া মালয়েশিয়ার পেনাং-এ অবস্থিত পেনাং টয় মিউজিয়াম। এখানে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি খেলনা প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ৩০ হাজার খেলনা সংরক্ষিত আছে, যা জায়গার অভাবে প্রদর্শনীতে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৫ সালে চালু হওয়া এই জাদুঘরের আয়তন ১০০০ বর্গমিটার। খেলনার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সেকশনে ভাগ করা হয়েছে জাদুঘরটিকে। ‘মালয়েশিয়ান বুক অব রেকর্ডস’-এ এটিকে মালয়েশিয়ার প্রথম খেলনার জাদুঘরের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। লোহ লিয়ান চেং নামের একজন ইঞ্জিনিয়ার এই জাদুঘর তৈরি করেন। লন্ডন টয় এ্যান্ড মডেল মিউজিয়ামের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯৭৩ সালে প্রথম একটি পপাই পুতুল কেনেন। প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ দর্শনার্থী এই জাদুঘরে আসেন। ন্যাশনাল টয় এ্যান্ড মিনিয়েচার মিউজিয়াম, ক্যানসাস যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির ক্যানসাসে এই জাদুঘরটি অবস্থিত। এটি আগে ‘ক্যানসাস সিটি টয় এ্যান্ড মিনিয়েচার মিউজিয়াম’ নামে পরিচিত ছিল। ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি, ক্যানসাস সিটির ক্যাম্পাসে এই জাদুঘরটি স্থাপিত হয়েছে। ৩৩ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে থাকা জাদুঘরটিতে রয়েছে ৩৮টি রুম। এই জাদুঘরে ৩ লাখের বেশি খেলনা রয়েছে। ১৯৮২ সালে এই জাদুঘরের পথচলা শুরু। ম্যারি হ্যারিস ফ্রান্সিসের খেলনার সংগ্রহ এবং বারবারা হল মার্শালের মিনিয়েচার সংগ্রহ নিয়েই মূলত যাত্রা শুরু করে অন্যরকম এই জাদুঘর। প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসেন। নুরেমবার্গ টয় মিউজিয়াম, বাভারিয়া ১৯৭১ সালে বাভারিয়ার নুরেমবার্গে যাত্রা শুরু করে নুরেমবার্গ টয় মিউজিয়াম। যেই বাড়িতে এই জাদুঘরটি স্থাপিত হয়েছে, সেটি একটি প্রাচীন বাড়ি। ১৫১৭ সালে এই বাড়িটি নির্মিত হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে এটির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাড়িটি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটিকে নতুন করে আবার নির্মাণ করা হয়। লিডিয়া এবং পল বেয়ার নামে দুই ব্যক্তি অনেকদিন ধরে সংগ্রহ করেছেন এই জাদুঘরের খেলনাগুলো। এখানে রয়েছে প্রায় ১২ হাজার খেলনা। পালক’স টয় মিউজিয়াম, লন্ডন লন্ডনের একটি ছোট্ট খেলনার জাদুঘর পালক’স টয় মিউজিয়াম। ১৯৫৬ সালে একটা ছোট্ট রুমে এই জাদুঘরের যাত্রা শুরু। এই জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা মার্গারিট ফড্রি। খেলনার সংগ্রহ অনেক বেশি হয়ে যাওয়ায় ১৯৬৯ সালে জাদুঘরটির স্থান পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে মার্গারিট ফড্রির নাতি জাদুঘরটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছেন। শংকর’স ইন্টারন্যাশনাল ডলস মিউজিয়াম, দিল্লী­ কে শংকর পিল্লাই নামক একজন ভারতীয় রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত শংকর’স ইন্টারন্যাশনাল ডলস মিউজিয়ামের আয়তন ৫১৮৪.৪ বর্গফুট। হাঙ্গেরিয়ান একজন কূটনৈতিকের কাছ থেকে একবার শংকর একটি পুতুল উপহার পান। সেখান থেকেই তার মাথায় আসে পুতুলের জাদুঘর তৈরির চিন্তা। ১৯৬৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তায় শংকর গড়ে তোলেন পুতুলের জাদুঘর, যেখানে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুসহ অনেকেই পুতুল উপহার দিয়েছিলেন। বর্তমানে প্রায় ৮৫টি দেশের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি পুতুল রয়েছে এই জাদুঘরে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, একাদশ শ্রেণী (ইংরেজী ভার্সন)
×