ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এটা আশ্চর্য ছাড়া আর কি ॥ জর্জ উবু

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এটা আশ্চর্য ছাড়া আর কি ॥ জর্জ উবু

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও যথেষ্ট সজাগ নয়। বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকোথ উবু ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) পরিচালক মোহম্মাদ আবদিকার মাহমুদ তিন দিন বাংলাদেশ সফর শেষে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে আয়োজিত এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হঠাৎ করে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছেন। বাংলাদেশ তাদের ভরণপোষণ করছে, এটা আশ্চর্য ছাড়া আর কী। ইউরোপে যেখানে এক বছরে মাত্র এক লাখ উদ্বাস্তু গেছে। আর বাংলাদেশে তিন সপ্তাহে এসেছে ৪ লাখ। ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকোথ উবু বলেন, তিন সপ্তাহে চার লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। এ জন্য মানবিক বিপর্যয় মুখোমুখি অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এ সঙ্কটে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করি। এখনও অনেক কিছু করতে হবে। কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায় যথেষ্ট সারা দিচ্ছে না। আইওএমের পরিচালক মোহম্মাদ আবদিকার মাহমুদ বলেন, যে অসহায় আদম সন্তানদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতার ভাষা জানা নেই। এখানে চার লাখ এসেছে। এখনও প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮-১০ হাজার রোহিঙ্গা আসছে। এটি চলতে থাকলে বছর শেষে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে কী হচ্ছে তা বলতে পারছি না, কারণ সেখানে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। তবে বলতে দ্বিধা নেই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে যথেষ্ট সজাগ নয়। আবদিকার মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য জমি দিয়েছে। তাদের শনাক্তে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে বাংলাদেশ। তবে এ কাজ সঠিকভাবে করার ক্ষেত্রে সরকারের সমন্বয় দরকার। ইউএনএইচসিআরের সহকারী কমিশনার জর্জ ওকোথ উবু বলেন, নিরাপদে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। জীবন বাঁচাতে এখানে এসেছে তারা। পরিদর্শনের সময় শরণার্থীদের সঙ্গে নিজের আলাপের কথা জানিয়ে উবু বলেন, পালিয়ে আসা এক বৃদ্ধ আমাকে বলেছেন, নিজ দেশে থাকার জন্য সেখানে তিনি ২৫ দিন লড়াই করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি, উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা সকলেই শরণার্থী। কারণ তাদের জোর করে দেশান্তর করা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকোথ উবু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত খুলে দেয়ার পর নিরাপত্তার জন্য চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিয়েছে, যা সত্যি প্রশংসার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক সমস্যা আছে। আর শরণার্থীর ঢল শুরু হওয়ায় দেশটি জটিল সময় পার করছে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের এই ঢল বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। একটি মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে সরকারকে সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বিষয়ে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। আশা করি, বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রমকে অন্যান্য দাতা সংস্থাও সমর্থন করবে। এ সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা কক্সবাজার গিয়েছিলেন। আমরাও গিয়েছিলাম। সে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে যৌথভাবে কী উদ্যোগ নেয়া যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
×