ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অব্যাহত সহিংসতার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ভারতীয় ত্রাণসামগ্রীর প্রথম চালান বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। দিল্লী থেকে ৫৩ মেট্রিক টন ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা ভারতীয় বিমানবাহিনীর ত্রাণবাহী কার্গোবিমানটি দুপুরে অবতরণ করে বিমানবন্দরে। সেখানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এ সময় তিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার পাশাপাশি এত বড় চাপ মোকাবেলা এবং নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’-এর আওতায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভারত থেকে আসবে মোট সাত হাজার মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী। একই দিনে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আসে মরক্কো এবং ইন্দোনেশিয়ার ত্রাণবাহী আরও দুটি বিমান। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া থেকেও ত্রাণবাহী একটি বিমান চট্টগ্রামে আসে। ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতগণ জেলা প্রশাসনের কাছে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করেন। বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলমান সহিংসতায় ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা জানি, তিন থেকে চার লাখ রোহিঙ্গা এসে পড়ায় বাংলাদেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একসঙ্গে এতগুলো মানুষের আশ্রয়, আবাসন, খাওয়ানো, চিকিৎসা খুবই কঠিন কাজ। ভারত প্রতিবেশী বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের পাশে আছে এবং থাকবে। শ্রিংলা আরও জানান, ভারত থেকে মোট সাত হাজার মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী আসবে রোহিঙ্গাদের জন্য। বাংলাদেশে আশ্রিত প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য ১৫ কেজির একটি প্যাকেটে থাকছে চাল, ডাল, লবণ, চিনি, দুধ, চাপাতা, বিস্কুট, সাবান, মশারিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। একসঙ্গে এত শরণার্থী এসে পড়ায় নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেন ভারতীয় এ কূটনীতিবিদ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের যে জনস্রোত আমাদের দেশে আসছে তা মোকাবেলা করা একটি চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যেই চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এসে পড়েছে। আরও অনেক শরণার্থী প্রবেশের অপেক্ষায়। এমন একটি সময়ে আমরা কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি। এ মানবিক বিপর্যয়ে মানবিক সাহায্য নিয়ে আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু ভারত পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এজন্য আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। দুঃসময়ে ভারত প্রতিবারই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতের এ সহায়তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ভারতীয় ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তরকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত সহকারী হাইকমিশনার অরুন্ধতী দাশ, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী এবং প্রশাসন, বিমানবন্দর ও ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, সন্ত্রাসের ব্যাপারে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশেরই অবস্থান জিরো টলারেন্স। দেশে একসঙ্গে এতবেশি শরণার্থী ঢুকে পড়ায় নিরাপত্তার বিষয়টিও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসে পড়া শরণার্থীরা যেন কোন সন্ত্রাসীর দ্বারা ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়েও সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। এর আগে সকালে ১৪ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে মরক্কোর একটি ত্রাণবাহী বিমান। মরক্কো সরকারের পাঠানো এ চালানে রয়েছে ৭০ পিস তাঁবু, এক হাজার কম্বল, দুই হাজার কেজি গুঁড়াদুধ, ওষুধ ও মেট্রেসসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ঢাকায় নিযুক্ত মরক্কোর রাষ্ট্রদূত জেলা প্রশাসনের কাছে ত্রাণ হস্তান্তর করেন। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া থেকে ত্রাণবাহী একটি বিমানও বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ ত্রাণসামগ্রীও গ্রহণ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশ থেকে আসা এসব ত্রাণসামগ্রী কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
×