ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির রাহুগ্রাসে গুয়াতেমালা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দুর্নীতির রাহুগ্রাসে গুয়াতেমালা

‘সাধারণ মানুষ বোকা নয়। তারা দেখতে পায় কিভাবে তোমরা গরিব অবস্থায় ঘুমাতে যাচ্ছ আর জেগে উঠছে বড় লোক হয়ে।’ দু’বছর আগে গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে জিমি মোরালেস টিভির এক কৌতুক অনুষ্ঠানে নকল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে হাজির হয়ে তার কল্পিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশে এই কথাগুলো বলেছিলেন। ২০১৫ সালের বাস্তব জীবনের নির্বাচনে দাঁড়িয়েও মোরালেস তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছিলেন। এর মাত্র ক’দিন আগে দুর্নীতির অভিযোগে প্রেডিডেন্ট অটো পেরেজ মলিনা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রোক্সানা বালদেত্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধিকৃত রাজনৈতিক শ্রেণীর সঙ্গে মোরালেসের কোন সম্পর্ক ছিল না। প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি একজন বহিরাগত বা ব্রাত্যজন হিসেবে এসেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ৬৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু মোরালেসকে নির্বাচিত করে গুয়াতেমালার সাধারণ মানুষ নিজেরা প্রতারিত হয়েছে বলে ভাবছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে গিয়ে মোরালেস টিভি অনুষ্ঠানের সেই ক্লাউনের মতো আচরণ করছেন। অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। অনেকে মনে করছে তিনি যে ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তারই ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। গত ২৭ আগস্ট তিনি গুয়াতেমালার আন্তর্জাতিক দায়মুক্তি বিরোধী কমিশনের (সিআইসিআইজি) প্রধান কলম্বিয়ার নাগরিক আইভান ভালাসকুয়েজকে দেশ থেকে বের করার আদেশ দেন। সিআইসিআইজি জাতিসংঘের সমর্থনপুষ্ট একটি সংস্থা যা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দুর্নীতির তদন্ত করে আসছে এবং পেরেজ ও বালদেত্তির পতন ঘটাতে সাহায্য করেছে। বহিষ্কারাদেশ পাওয়ার দু’দিন আগে ভালাসকুয়েজ অভিযুক্ত হওয়া থেকে মোরালেসের দায়মুক্তি হরণ করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে মোরালেস প্রেসিডেন্ট পদে প্রচারাভিযানে ৯ লাখ ডলারের চাঁদার ব্যাপারটি চেপে গিয়েছিলেন। দেশের সাংবিধানিক আদালত মোরালেসের আদেশের বাস্তবায়ন আটকে দেয়ায় ভালাসকুয়েজ তার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটা একটা রাজনৈতিক অচলাবস্থায় পড়েছে। প্রেসিডেন্ট তার নৈতিক কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু জনগণের ব্যাপক শ্রদ্ধা আদায়ে সক্ষম বিকল্প কোন নেতাকে দেখা যাচ্ছে না। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ২০১৯ সালে হওয়ার কথা। কিন্তু সেই নির্বাচনেও যে একজন যোগ্য নেতা বেরিয়ে আসবে তেমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। সিআইসিআইজি ও গুয়াতেমালার এ্যাটর্নি জেনারেল একত্রে কাজ করে ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের ঘুষ দুর্নীতির ব্যাপক কেলেঙ্কারি উন্মোচন করার পর এ দু’জনের অপসারণের দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। এসব কেলেঙ্কারিতে কয়েক ডজন ব্যবসায়ীও জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। কংগ্রেসের এক-পঞ্চমাংশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে যাদের গুয়াতেমালার বিশাল অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রে যত কোকেন এসে ঢোকে তার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসে গুয়াতেমালা হয়ে। এই মাদক চোরাচালানের উৎপত্তি দেশের ৩৬ বছর স্থায়ী গৃহযুদ্ধে। সিআইসিআইজির তদন্তে জানা যায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যয়িত অর্থের এক-চতুর্থাংশ এসব সংগঠিত অপরাধী চক্র থেকে আসে। তবে প্রেসিডেন্ট মোরালেস টাকা-পয়সা বানিয়েছেন, আখের গুছিয়েছেন এই অভিযোগ কেউ করে না। তিনি যে দলের টিকেটে নির্বাচিত সেটি ন্যাশনাল কনভারজেন্স ফ্রন্ট (একসিএন) দলটি সাবেক সেনা অফিসারদের দ্বারা গঠিত এবং সেখানে পেরেজের দলের অনেক এমপি এসে জুটেছে। এসব লোকজনের কারণে মোরালেসের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। সম্প্রতি পত্রিকায় একটি কার্টুন ছাপা হয়েছে সেখানে মোরালেসকে একটা পাপেট বা পুতুল হিসেবে দেখানো হয়েছে যার সুতা ধরে টানছে জেনারেলরা। তবে ব্যবসায়ী মহল মোরালেসের পক্ষে। তাদের অভিযোগ সিআইসিআইজির তদন্তের ফলে দেশ থেকে বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে। এতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি মার খাচ্ছে। যা এখন বছরে প্রায় ৩ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা মোরালেসের পক্ষে থাকলেও জনগণের একটা বড় অংশ সিআইসিআইজির পক্ষে। দুই পক্ষের এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জেতে সেটাই এখন দেখার ব্যাপার। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×