ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে এখনও সোনালি আঁশের কদর

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রূপগঞ্জে এখনও সোনালি আঁশের কদর

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ ॥ নদী মাতৃক এই বাংলার পলিমাটিতে পাট কৃষকের প্রধান ফসল হিসেবে গণ্য হতো। এই পাটকে ঘিরে দেশে সহ¯্রাধিক পাটকল তৈরি হয়েছিল। এতে লাখ লাখ লোকের জীবিকা নির্বাহ করত। কেউ পাটকল মিলস স্থাপন করে লাভবান হয়েছেন কেউ পাট চাষ করে হাসির মুখ দেখাতেন। তাই সেই সময় পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। কারণ হিসেবে বলা হতো এই পাট রফতানি করে তৎকালে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। গত দুই দশকে এ সোনালি আঁশের কদর কিছুটা কমতে থাকে। সরকারের নানা উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও প্রান্তিক কৃষকের চাষ করা পাটের মূল্য না পাওয়াতে অনাগ্রহ হয়ে পড়ে পাটচাষি। তাই আগের তুলনায় পাটচাষি চোখে পড়ে না। তেমনি আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গার্মেন্টস শিল্প সুদূরপ্রসারী হওয়ায় এর প্রভাব সরাসরি পাটের ওপর পড়ায় পাটকল বা মিলগুলো ক্রমেই বন্ধ হয়ে যায়। স্থবির হয়ে পড়ে পাটচাষির ভাগ্য। একইভাবে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই হয়ে পড়ে বেকার ও লোকসানমুখী। তবে প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে এখনও শতাধিক কৃষক সেই সময়ের সোনালি আঁশ পাট চাষ করে যাচ্ছেন। দাম পাচ্ছেন আকাশ ছোঁয়া। তাই তাদের মুখে হাসির চিহ্ন দেখা গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক, বাসুন্দা, পাইসকা, পুবেরগাঁও, সদর ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ, কায়েতপাড়ার দক্ষিণপাড়া, কামসাইর, দাউদপুরের বেলদী, দেবই, কাজিরবাগ, শিমুলিয়া, দিঘলিয়ার টেক, গোবিন্দ্রপুরসহ কয়েকটি গ্রামের কৃষক আগের মতোই পাট চাষ করছেন। এসব এলাকার কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আগের তুলনায় এখন পাট চাষ করে ভাল দাম পাচ্ছেন। পাটখড়ির একেকটি আঁটি বিক্রি করছেন ১শত থেকে ২ শত টাকায়। প্রতিমণ পাট পাইকারদের কাছে বিক্রি করে পাচ্ছেন ১হাজার ৪শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে তাদের জমিতে চাষ করা পাটের সকল খরচ উঠে লাভ হচ্ছে ৩ গুণ বেশি। কৃষকদের দাবি এই পাট সরাসরি জুটমিলে নিয়ে বিক্রি করতে পারলে আরও ভাল দাম পেতে পারতেন। স্থানীয় কৃষক সুজন মিয়া বলেন, অধিক চাষি না থাকায় পাটখড়ির আঁটিগুলো পাইকারিভাবে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জেলার পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদীর পলাশের জনতা জুট মিল ও মাশরিকি জুট মিলের ডিলাররা পাট কিনে নিলেও তারা পাটখড়ি নিচ্ছেন না। এতে কিছুটা লাভ কম হচ্ছে। এ সময় তিনি বলেন, এসব পাটখড়ি সাধারণত কাগজের কলে নেয়ার কথা থাকলেও প্রচারের অভাবে স্থানীয়রা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। শিমুলিয়ার কৃষক রোমান মিয়া জানান, নবাব আশকারী, ছাত্তার, উত্তরা, নবারুন জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের উত্তর ব্রাহ্মণখালী, শিমুলিয়ার চরে পাট চাষ কমে গেছে। এখন তিনি কিছু বর্গা জমিতে পাট চাষ করে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করেন সময়মতো পাইকার না আসাতে পাট বিক্রি করতে পারছেন না। আবার কোন সময় পাটের দাম বেশি আবার কম থাকায় অনিশ্চয়তার মুখে পাট চাষ ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। অপর এক সূত্র জানায়, স্থানীয় ৯টি জুটমিল ১৫ বছর যাবত বন্ধ থাকায় এখানকার পাটচাষির সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়াও রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভায় একটি পাট গবেষণা কেন্দ্র থাকলেও এসব কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাট চাষিদের পরিচয় নেই বলে জানায় কৃষকরা। তবে রাজধানী ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিল, রূপগঞ্জের মাশরিকী জুট মিল ও পলাশের জনতা জুট মিলস চালু থাকায় এখনও কৃষরা পাট চাষ ধরে রাখতে পারছেন বলে জানা গেছে।
×