ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইরমা ও হার্ভের ধ্বংসযজ্ঞ

ট্রাম্পের বোধোদয় হবে কি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ট্রাম্পের বোধোদয় হবে কি

যুক্তরাষ্ট্রে একমাসের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইরমা ও হার্ভের মতো দুটি ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের নিকট জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা সম্পর্কে উপলব্ধি জাগ্রত হবে কিনা এ প্রশ্নের গুরুত্ব সামনে চলে এসেছে। ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্টের বিলাসবহুল অবকাশ কেন্দ্র মারে লাগো ইরমার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যেতে পারে। কিন্তু এখানের হাজার হাজার বাড়িঘর, ব্যবসা কেন্দ্র ও বহু মার্কিন নাগরিকের জীবনহানি জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বকে উপেক্ষা করার দায় নিয়ে হোয়াইট হাউসের দোরগোড়ায় পুঞ্জীভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই গুরুত্বহীন ও হাল্কাভাবে নিয়েছেন। এমনকি গতমাসে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর ঘূর্ণিঝড় হার্ভে যখন আঘাত হানার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তার কয়েকদিন আগে জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করার একটি সরকারী উদ্যোগ ট্রাম্প বাতিল করে দেন। ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামা জনকল্যাণকর এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-ে ঘূর্ণিঝড় হার্ভে ও ইরমার প্রচ- আঘাত হয়ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চিন্তাধারায় জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা আনতে বাধ্য করবে। হার্ভের দরুন হিউস্টনের প্লাবিত রাস্তাঘাট এবং দক্ষিণ ফ্লোরিডায় ঝড়োহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের করুণ চিত্র মানবসৃষ্ট গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলস্বরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় হার্ভে ও ইরমার আগে সুদীর্ঘ বারো বছর যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-ে এত তীব্র গতিবেগ ও প্রচ-তা নিয়ে আর কোন হ্যারিকেন আঘাত হানেনি। এ দুটির মধ্যে আটলান্টিকের বুকে সৃষ্ট ইরমা সবদিক দিয়েই সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৮৫ মাইল এবং এর স্থায়িত্বকালও ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এসব দুর্যোগ প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট এবং এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অস্বীকার করার হঠকারিতা পরিহার করে প্রেসিডেন্টের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে সর্বস্তরে অভিমত জোরদার হচ্ছে। অনেকে আবার জলবায়ু পরিবর্তনকে ঘূর্ণিঝড়ের একমাত্র কারণ হিসেবে মেনে নিতে নারাজ। এর পেছনে সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বিশেষ করে উত্তর আটলান্টিক ও মেক্সিকো উপসাগরের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি জনিত কারণে সৃষ্ট বাষ্পের জন্য ঘন মেঘ ও প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্ট প্রবল বাতাসের বেগ সাগরের জলরাশিকে উপকূলবর্তী অপেক্ষাকৃত নিচু স্থলভাগকে প্লাবিত করে দেয়। শুধু আটলান্টিক বা মেক্সিকো সাগর নয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে মেরু অঞ্চলসহ পৃথিবীর সর্বত্র বরফ গলে সাগর বক্ষের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন মাঝারি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গ্রীষ্মম-লীয় ঝড় ও প্রবল বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষতি ও সীমাহীন বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। কিন্তু কী কারণে ঘূর্ণিঝড় হার্ভে ও ইরমা এত দ্রুত এবং অল্প সময়ের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে মূল ভূখ-ে আঘাত হানল তা আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা এখনও নির্ণয় করতে পারছেন না। উপগ্রহ চিত্র ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র আসন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হলেও বৈরী আবহাওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা নিরূপণেও বিজ্ঞানীরা কোনরূপ পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোন কোন গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা হ্রাস পেলে অর্থাৎ দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের দেখা মিললে তার প্রচ-তা হয় ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে ১৯৯২ সালের হ্যারিকেন এন্ড্রু এবং ২০০৫ সালে হ্যারিকেন ক্যাটরিনার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। দক্ষিণ ফ্লোরিডায় এর ছোবলে জীবনহানির সংখ্যা কম হলেও ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যবসা কেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতদিন পর এই দক্ষিণ ফ্লোরিডাতেই ইরমা তার তা-বের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল। -গার্ডিয়ান
×