ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওআইসি সম্মেলনে মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

বিডিনিউজ ॥ মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের আবাসভূমিতে ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করতে মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। রবিবার কাজাখাস্তানের রাজধানী আস্তানায় ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সংগঠন ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নাগরিকত্বের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। এই জনগোষ্ঠী অস্তিত্বের সঙ্কট, নিষ্ঠুরতা এবং উৎখাতের শিকার। হাজারে হাজারে রোহিঙ্গা সীমান্ত পার করে ঢুকে পড়ায় বাংলাদেশ এ সমস্যায় সরাসরি আক্রান্ত। বাংলাদেশ একমাত্র মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। আবদুল হামিদ বলেন, মিয়ানমারের এই সমস্যাকে এমনভাবে সমাধান করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা নিজের ভূমি রাখাইনে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সঙ্গে ফিরে গিয়ে থাকতে পারে। এটা নিশ্চিত করতে আমি ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই। কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে চলমান জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। এর মধ্যে গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। এ দফায় ইতোমধ্যে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের ধারণা। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতেও তারা রাজি নয়। আস্তনার ‘প্যালেস অব ইন্ডিপেনডেনসে’ চলমান ওআইসি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বিভিন্ন দেশ তাদের উন্নত প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই প্রতিযোগিতা পৃথিবীতে অন্য এক বিভেদ তৈরি করছে। পশ্চিমা প্রযুক্তি এবং রেনেসাঁর সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের তাল মেলাতে না পারার প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপতি বলেন, এক সময় মুসলমানরা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় যে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিত এবং তা ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। নতুন জ্ঞানের অন্বেষণে বিনিয়োগ করতে হবে, সমন্বিত গবেষণা ও উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করতে হবে। এরদোগানের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠক ॥ ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে সীমান্তের মিয়ানমার অংশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি ‘সেফ জোনে’ থাকতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। রবিবার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় রাষ্ট্রপতি হামিদ এ আহ্বান জানান। আস্তানার প্যালেস অব ইনডিপেনডেন্সে ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্মেলনের ফাঁকে দুই রাষ্ট্র প্রধান বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার সীমানার অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সেইফ জোনে থাকতে পারে সে উদ্যোগ নিতে ওআইসিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের (আইসিআরসি) মাধ্যমে সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারকে ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠার ওই প্রস্তাব দেয়া হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে আবদুল হামিদ বলেন, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের সাময়িক আশ্রয় দিচ্ছে। কিন্তু ‘অতি জনবহুল’ দেশ বাংলাদেশের জন্য এই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যে একটি বড় সমস্যা, সে কথাও রাষ্ট্রপতি তুলে ধরেন। প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের একটি জায়গায় আশ্রয় দেয়ার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজছে বলে বৈঠকে জানান রাষ্ট্রপতি। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে বাস করতে পারে সে বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের জন্য তিনি ওআইসিসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য ফোন করায় এবং তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে বাংলাদেশ সফর করায় বৈঠকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি হামিদ। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ওআইসির চলমান সম্মেলনে একটি বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করার জন্যও প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
×