ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে গাড়িবোমা হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাজধানীতে গাড়িবোমা হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল জঙ্গীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অভিযানে নব্য জেএমবির দুই জঙ্গী আর র্যাবের অভিযানে হিযবুত তাহরীরের এক জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা ঢাকায় গাড়িবোমা হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে শক্তিশালী বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত ৩০টি ডেটোনেটর। শুক্রবার খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ এলাকা থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় নাঈম আহমেদ ওরফে আনাস ওরফে আবু হামজা ওরফে আরিশা কুনিয়া (৩২) ও আনোয়ার হোসেন (৩০)। তাদের হেফাজতে থাকা ৩০টি ডেটোনেটর (বিস্ফোরক) ও উগ্রবাদী মতাদর্শের কিছু বই উদ্ধার হয়েছে। শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজএম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতরা নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। এর মধ্যে নাঈম আহমেদ ২০১৫ সালে বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেটসহ একটি বেসরকারী আইটি কোম্পানিতে একসঙ্গে চাকরি করত। দুজন একইসঙ্গে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। নাঈম ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। আর গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বাশারুজ্জামান চকোলেট চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে মারা যায়। গ্রেফতারকৃত অপরজন আনোয়ার সাভারের হেমায়েতপুরে একটি মোটর গ্যারেজ চালাতেন। ব্যবসার আড়ালে তিনি নব্য হয়ে কাজ করতেন। ব্যবসায়িকভাবে যথেষ্ট টাকার মালিক আনোয়ার। তার প্রধান কাজ ছিল পলাতক নব্য জেএমবির সদস্যদের সাভার, আশুলিয়াসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপদ জায়গায় বাসা ভাড়া করে দেয়া ও তাদের অর্থ সরবরাহ করা। গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা ও প্রধান সারোয়ার জাহান মানিক, রিপন, নোমান, আল বানী, ডন ও সিরিয়ায় নিহত আইএসের আইটি বিশেষজ্ঞ সাইফুল হক সুজনের যোগাযোগ ছিল। প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুরে জঙ্গী আস্তানায় আত্মঘাতী হয়ে সাত জনের মৃত্যুর পর ওই আস্তানায় ডন নামে এক জঙ্গী যাতায়াত করত বলে র্যাব জানায়। পুলিশের হাতে দুইজন গ্রেফতারের পরেও ওই ডনের নাম এসেছে। র্যাবের তদন্তে আসা ডন আর পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর নাম আসা ডন একই জঙ্গী বলে মনিরুল ইসলাম জানান। মনিরুল ইসলাম আরও জানান, জঙ্গীদের বড় ধরনের নাশকতা চালানোর ক্ষমতা নেই। তবে তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি নোয়াখালীতে এক কথিত পীরকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকা-ের সঙ্গে জঙ্গীরা জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা মাঝে মধ্যেই আচমকা দু’একটি ঘটনা ঘটিয়ে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে তারা উদ্ধারকৃত ডেটোনেটরগুলো তৈরি করেছিল। ডেটোনেটরগুলো দিয়ে তাদের শক্তিশালী বোমা তৈরি করে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। ডেটোনেটরগুলো দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। গ্রেফতারকৃতরা নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়ার পর ৪০ দিন সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা গাড়ি হামলার জন্য জঙ্গীদের গ্যারেজে প্রশিক্ষণ দিত। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে র্যাব-২ এর একটি বিশেষ দল মোহাম্মদপুর থানাধীন ইকবাল রোডের বায়তুস সালাম জামে মসজিদের সামনে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী লিফলেট বিলির সময় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য মোঃ মাহামুদুল হাসান রবিনকে (২৫) গ্রেফতার করে। র্যাব-২ এর মিডিয়া বিভাগের সহকারী পরিচালক জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত রবিনের পিতার নাম মোঃ নুরুল আমীন। বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন ছোট ভল্লবপুর গ্রামে। রবিন ২০০৯ সালে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে নটরডেম কলেজ ঢাকায় ভর্তি হয়। কলেজে পড়ার সময় তার পূর্বের ব্যাচের ছাত্র জাকারিয়ার মাধ্যমে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। ২০১১ সালে এইচএসসি পাস করে নিষিদ্ধ সংগঠনটির হয়ে পুরোদমে কাজ করতে থাকে। সংগঠনের নির্দেশনা মোতাবেক সে নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য নিজ এলাকায় চলে যায়। জাকারিয়ার নির্দেশে বিভিন্ন সময় ঢাকায় এসে অন্য সদস্যদের সঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কাজে অংশ গ্রহণ করত। গত ৬ সেপ্টেম্বর জাকারিয়া ফোনে রবিনকে ঢাকায় আসতে বলে। ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে একটি মসজিদে রাত কাটায়। সংগঠনের পরিকল্পনা ও জাকারিয়ার নির্দেশনা মোতাবেক পরদিন বায়তুস সালাম জামে মসজিদের সামনে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী লিফলেট বিতরণ করছিল।
×