ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষকদের গ্রেফতার না করায় ধর্ষিতার আত্মহত্যার হুমকি

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ধর্ষকদের গ্রেফতার না করায় ধর্ষিতার আত্মহত্যার হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করায় আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে ধর্ষিতা স্কুলছাত্রী। শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন শ্যামনগর উপজেলার ধাপুয়ারচক গ্রামের মুনছুর আলীর মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী ধর্ষিতা সালমা খাতুন। তবে এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মান্নান আলি শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। মেডিক্যাল রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সালমা খাতুন বলেন, তার বাবা মুনছুর আলী দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অন্যত্র বসবাস করায় তার মা ফজিলা খাতুন দিনমজুরের কাজ করে তাকে পড়ালেখা শেখানোর চেষ্টা করে আসছেন। সে স্থানীয় সিরাজপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে কালিগঞ্জ উপজেলার খড়িতলা গ্রামের আশিক ও শ্যামনগর উপজেলার ধাপুয়ার চক গ্রামের রফিকুলসহ কয়েকজন প্রায়ই তাকে কুপ্রস্তাব দিত। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করলে আশিক ও রফিকুল গং তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং তাকে প্রকাশ্যে অপহরণ ও ধর্ষণের হুমকি দেয়। ফলে তাদের ভয়ে মা আমার বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করেন। গত ৮ আগস্ট যশোরের মনিরামপুর এলাকা থেকে একটি পাত্রপক্ষ তাকে দেখতে এসে ফিরে যাওয়ার পথে আশিক গং শ্যামনগর থানার পুলিশকে দিয়ে তাদের আটক করায়। খবর পেয়ে আমার মা পাত্রপক্ষকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন এবং ১১ আগস্ট সারাদিন থানায় অবস্থান করেন বৃদ্ধ নানিকে নিয়ে বাড়িতে থাকা অবস্থায় রাত ৮টার দিকে আশিক, রুহুল আমিন ও পবিত্র কুমার ম-ল আব্দুর রহিমের ব্যবহৃত সিআরভি গাড়ি নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে আসে এবং পুলিশ পরিচয়ে পাত্রপক্ষকে ছাড়ানোর কথা বলে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা তাকে আব্দুর রহিমের বংশিপুরস্থ রোজা ব্রিক্সের দোতলা ভবনের একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে আশিক ও রফিকুল অস্ত্রের মুখে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে প্রথমে আব্দুর রহিম, রফিকুল, শফিকুল, রুহুল আমিন, পবিত্র ও আশিক পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। পরে অজ্ঞান অবস্থায় ইসমাইলপুর রাস্তার পাশে একটি ফাঁকা স্থানে তাকে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় মা আমাকে উদ্ধার করে শ্যামনগর থানায় নিয়ে যায় এবং পুলিশের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগ, সুস্থ হয়ে শ্যামনগর থানায় উল্লেখিত ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে টালবাহনা শুরু করে। পরে ২০ আগস্ট নিজে বাদী হয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্যামনগর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পুলিশ মামলা রেকর্ড করলেও আসামিদের গ্রেফতার না করায় আসামিরা তাকে ও তার মাকে মামলা তুলে নিতে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে বলে ধর্ষিতার অভিযোগ। এ ঘটনায় আমার মা ফজিলা খাতুন বাদী হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ৭ ধারার মামলা দায়ের করেছেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলেও তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আসামিদের গ্রেফতার করে তাদেরকে আইনে সোপর্দ করার জন্য পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
×