ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেইরি খাতকে বাণিজ্যিক করতে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ডেইরি খাতকে বাণিজ্যিক করতে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

আনোয়ার রোজেন ॥ প্রাণিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন করে ডেইরি খাতকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হবে। এজন্য পশুস্বাস্থ্য, প্রজনন, বিপণনসহ প্রতিটি খাতের ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। খামারিদের নিরাপত্তায় প্রবর্তন করা হচ্ছে পশুবীমা। এর অংশ হিসেবে নেয়া ‘পশুসম্পদ উন্নয়নভিত্তিক ডেইরি বিপ্লব ও মাংস উৎপাদন’ শীর্ষক একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর প্রকল্পটির উদ্যোক্তা। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে। দেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসেবে)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তরফে এ বিষয়ে এরই মধ্যে একটি ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ করা, গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজার ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্পে সহায়তা দেয়া হবে বলে ধারণাপত্রে উঠে এসেছে। সূত্র জানায়, নতুন জাত উদ্ভাবন আর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে দেশে প্রতিবছরই বাড়ছে দুধ ও মাংস উৎপাদন। একই সঙ্গে বাড়ছে চাহিদাও। ফলে দুধ ও মাংসের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে দুধের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে ৫ লাখ টন কম। মাংস ঘাটতি থাকছে বছরে ৫৯ লাখ টন। মাথাপিছু ১৩০ মিলিলিটার চাহিদার বিপরীতে দৈনিক দুধের ব্যবহার মাত্র ৩৫ মিলিলিটার। ফলে অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় আমিষ ও পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এ খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো প্রাণিজ সম্পদ বীমা চালু হবে। বীমার আওতায় থাকা প্রতিটি পশুর আলাদা পরিচিতি নম্বর থাকবে। এ জন্য গড়ে তোলা হবে কেন্দ্রীয় তথ্যভা-ার। বীমার আওতায় আসা পশুর স্বাস্থ্যের বিষয়ে দেয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব। এদিকে প্রকল্প বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, আগামীতে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষি খাতের ওপর বড় ধরনের নির্ভরতা রয়েছে সরকারের। দারিদ্র্য দূর করে দেশকে উচ্চ মধ্য আয়ে নিয়ে যেতে কৃষি খাত যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করে সরকার। এতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে প্রাণিজ সম্পদ খাত। কৃষিভিত্তিক জিডিপির ১৪ শতাংশ আসছে প্রাণিসম্পদ থেকে। এ খাতে কৃষির ২০ শতাংশ শ্রমিকের পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান রয়েছে। কৃষি খাতের অর্ধেক শ্রমিক এ খাতে খ-কালীন কাজ করে থাকে। গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবার পশুপালন করে থাকে। প্রান্তিক ও ভূমিহীন পরিবারে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গণ্য হচ্ছে পশুপালন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রাণিজ আমিষের প্রাধান্য বাড়ছে। মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন বাড়লেও বাড়তি চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। এর ফলে প্রতিবছর প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি বাড়ছে। প্রতিবছর চাহিদার তুলনায় ডিমের উৎপাদন কম হচ্ছে ১৫০ কোটি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাহিদা পূরণ করতে ২৪ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলারের মাংস ও দুগ্ধপণ্য আমদানি হয়েছে। এ অবস্থায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় কমিয়ে এনে প্রাণিজ সম্পদ খাতকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রাণিজ সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৪ কোটি ডলার। আর ডেইরি শিল্পের ঝুঁকি কমাতে বরাদ্দ থাকবে ১৪ কোটি ডলার। এর বাইরে আরও ৩ কোটি ডলার ব্যয় হবে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও মূল্যায়নে। প্রকল্পের খাতভিত্তিক সম্ভাব্য বরাদ্দ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মোট দুটি উপখাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ৩ কোটি ডলার ব্যয় হবে খামারিদের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে। পাশাপাশি ৬ কোটি ডলার ব্যয় করে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা ও মান উন্নয়ন করা হবে। রোগ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও পুষ্টি ভারসাম্য, প্রজনন উন্নয়ন, আবাসন উন্নয়ন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রাণি ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে এ খাতের অর্থ। ডেইরি পণ্যের বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে ২৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে উৎপাদনশীল খাতগুলোর মধ্যে অর্থাৎ প্রাণিজ সম্পদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কৃষি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠান, বিক্রেতা ও পল্লী অঞ্চলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করা হবে। ১২ কোটি ডলার ব্যয় হবে ডেইরি শিল্পবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে। স্থাপন করা হবে আধুনিক কসাইখানা। প্রাণিজ সম্পদের জন্য বীমা ব্যবস্থা প্রণয়নে ব্যয় করা হবে ৫ কোটি ডলার। এর মাধ্যমে এ খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়বে বলেও মনে করে বিশ্বব্যাংক। এর বাইরে ভোক্তার মধ্যে ডেইরি পণ্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচারে ব্যয় করা হবে ৪ কোটি টাকা। এর কিছু অংশ ব্যয় হবে বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে দুধ বিতরণে।
×