ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় আমদানিকারকরা

ব্যাগ জটিলতায় আমদানিকৃত চাল ছাড় করছে না কাস্টমস

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৫ আগস্ট ২০১৭

ব্যাগ জটিলতায় আমদানিকৃত চাল ছাড় করছে না কাস্টমস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাগ জটিলতায় দেশের বিভিন্ন বন্দরে আটকে আছে বেসরকারী উদ্যোগে আমদানি করা চাল। প্লাস্টিকের ব্যাগে আমদানি করা এ সব চাল কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় ছাড় করাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না চালের দাম। শ্রীঘই দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আমদানিকারকরা অর্থ, বাণিজ্য, পাট মন্ত্রণালয়ে ধরণা দিয়েও কোন সুরাহা করতে পারছেন না। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি করা চাল প্লাস্টিকের বস্তায় ছাড় করার অনুমতি দিতে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি লেখা হলেও তা আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। উপরন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হওয়ার জন্য আমদানিকারকদের পরামর্শ দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে। এ বিষয়ে কয়েকজন আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দেশে চাল পরিবহন বা সংরক্ষণে চটের বস্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে রফতানিকারকদের জন্য বাধ্যবাধকতা নেই। তাই রফতানিকারক দেশ তাদের প্রচলিত ধারা অনুযায়ী প্লাস্টিকের বস্তায় চাল পাঠিয়েছে। এখন দেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ চাল ছাড়ের অনুমতি দিচ্ছে না। এতে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। একজন আমদানিকারক বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন বন্দরে কমপক্ষে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এভাবে পড়ে আছে। যা চলমান বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এভাবে কোটি টাকা বিনিয়োগ করা চাল নষ্ট হয়ে গেলে তা অর্থনীতি ও চালের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ তিনি বলেন, ‘রফতানিকারক দেশ বা প্রতিষ্ঠান যদি আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী চটের বস্তায় চাল সরবরাহ করতো, তাহলে প্রতি কেজি চালের দামের সঙ্গে কমপক্ষে ১ টাকা যুক্ত হতো। সেই হিসাবে প্রতিটন চালের দাম বাড়তো ১ হাজার টাকা। এটি করা হলে যে উদ্দেশ্যে চাল আমদানি করা হচ্ছে, সরকারের সে উদ্দেশ্য সফল হতো না। দামও কমতো না।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিষয়টি নিষ্পত্তির এখিতিয়ার একমাত্র বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের। কারণ চালসহ ১৩ পণ্য পরিবহন, সংরক্ষণ, মজুদ ও বাজারজাত করতে চটের বস্তা বাধ্যতামূলক করে আদেশ জারি করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সেহেতু ওই আদেশ স্থগিত বা শিথিল করার এখতিয়ার রয়েছে একমাত্র ওই মন্ত্রণালয়ের। সেহেতু এ ক্ষেত্রে অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের বা কর্তৃপক্ষের কোন এখতিয়ার নেই। জানা গেছে, তারপরেও বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হলেও তা কার্যকর করা হয়নি। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, সরকারের জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে প্লাস্টিকের বস্তায় আমদানি করা চাল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ছাড় দিলেও বেসরকারী উদ্যোগে আমদানি করা চালের ছাড়পত্র দিচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এটি কোন সমস্যা নয়। এ সমস্যা কেটে যাবে। আমদানি করা চাল বিলম্বে এলেও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘যদিও বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে নেই, তারপরও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ওই আদেশটি এ ক্ষেত্রে শিথিল করার জন্য ডিও দিয়েছি। আশা করছি, বিষয়টি শ্রীঘই সুরাহা হয়ে যাবে।’ উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষভাগে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারের হাওড় অঞ্চলে অকাল বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে বিষয়টিকে সুযোগ হিসেবে নেয়া হয় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সৃষ্ট বন্যায়। যা এখনও বিদ্যমান। এক সময় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বাড়ে ১০ টাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে চালের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক ২৮ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামানো হয়। পরবর্তী সময়ে ২ শতাংশ রেখে বাকি ৮ শতংশ আমদানি শুল্কও তুলে নেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার কারণে চালের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে প্রথম কারণ হচ্ছে হাওড়ের অকাল বন্যা। দ্বিতীয়ত দেশের উত্তরাঞ্চলে সৃষ্ট বিদ্যমান বন্যা, তৃতীয় কারণ হচ্ছে সময় মতো একসঙ্গে শুল্ক না কমানো ও চতুর্থ কারণ হচ্ছে চটের বস্তার ব্যবহার না করা।
×