ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ

বন্যায় ২৫ জেলায় মারাত্মক ক্ষতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৩ আগস্ট ২০১৭

বন্যায় ২৫ জেলায় মারাত্মক ক্ষতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম। রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ২৫ জেলার শিক্ষাঙ্গন। ইতোমধ্যেই অন্তত সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগের বন্যার কারণে কিছু জেলায় জুন থেকেই বন্ধ ছিল স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। চলমান বন্যায় বিপর্যয়ের মাত্রা আরও চরম আকার ধারণ করেছে। পানি ঢুকে পড়ায় উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষাঙ্গন অচল হয়ে পড়ার পর দুদিন ধরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশের মধ্যাঞ্চলসহ নতুন নতুন এলাকার স্কুল, কলেজ। এদিকে বন্যাকবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুত তথ্য পাঠানোর জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বলছে, অন্তত ২৫ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনটি আংশিক, কোনটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাবপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে শিশুদের লেখাপড়া চরম বিঘিœত হয়েছে। বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থীরা। স্কুল বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আগস্টে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিল। বন্যাাকবলিত প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের সংখ্যাও কম নয় বলে জানিয়েছে অধিদফতর। ইতোমধ্যেই প্রায় দুই হাজার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জেলায় অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া একের পর এক পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রী পাস কোর্সের পরীক্ষা। আসন্ন শিক্ষক নিবন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা স্থগিত করার দাবি উঠেছে। বন্যার সময় শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে নানা দিকনির্দেশনা দিলেও মাঠ পর্যায়ে এগুলো বাস্তবায়ন করার অবস্থা নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন নতুন এলাকায় বন্যার পানি যাচ্ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছি। এছাড়া কিভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায় তার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। পানি নেমে গেলে ছুটির দিনে ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে নেয়ার একটা উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বন্যায় শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে করণীয় ঠিক করতে ইতোমধ্যেই একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ক্ষতি পোষাতে একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াস হোসেন বলেন, দুই দফা বন্যার কারণে শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেটি পোষানো ছাড়াও আসন্ন পাবলিক পরীক্ষায় বন্যায় কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নির্ণয়ে কাজ করছি। মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষতি পোষানোর সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বৈঠকে। দেশের জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস দুয়েক আগে হাওড়ের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বন্যা দেখা দেয় দেশের বেশ কিছু জেলায়। আগের বন্যার পানি এখনও পুরোটা নামেনি অনেক এলাকায়। এর মধ্যেই চলতি মাসে ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে দেশের ২৫ জেলায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। এবারের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা দিনাজপুর। এখানেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া লালমনিরহাট, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র এসেছে শিক্ষা দফতরে। দুদিন ধরে নতুন এলাকা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ এ অঞ্চরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ। দিনাজপুরে বন্যার কারণে ২৬৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। টানা বর্ষণ ও উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় এ জেলার ২৬৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৬৭ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা অফিস বলছে, ২৬৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরোপুরি বন্যাকবলিত। এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ হওয়া বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাউশির মহাপরিচালক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেছেন, বন্যার কারণে সৃষ্ট শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনকে কিছু মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন কোন এলাকায় বন্যার পানি বাড়ছে, কোথাও কমছে। আবার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিতও হচ্ছে। এ জন্য কত প্রতিষ্ঠান বন্যার কারণে বন্ধ, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য আমরা নিচ্ছি। তারা বলেন, নির্দেশনা স্থানীয় প্রশাসনকে মৌখিক ও লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে এ ক্ষতি পোষানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×