ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ভেঙ্গে দিন

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৩ আগস্ট ২০১৭

সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ভেঙ্গে দিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়ে দেশটিতে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ভেঙ্গে দিতে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে অনির্দিষ্টকাল ধৈর্য ধরবে না বলে তিনি জানান। সোমবার ঘোষিত নতুন আফগান নীতিতে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতার জন্য ভারতের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এএফপি, ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ট্রাম্প বলেন, ‘পাকিস্তানী ভূখ-ে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে আমরা আর নীরব থাকব না। আমাদের প্রচেষ্টার সহযোগী হওয়া পাকিস্তানের জন্য লাভজনক হবে। তবে এর জন্য তাদের সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের আশ্রয় দেয়া আগে বন্ধ করতে হবে।’ চরমপন্থীদের দমন না করলে পাকিস্তানকে সামরিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে বিবেচনা করে দেখবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ট্রাম্প মনে করেন, আফগানিস্তানে সংঘাতের কারণ তারা পাকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে। আফগানিস্তানে ১৬ বছর ধরে চলা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক যুদ্ধকে নতুন চেহারা দিতে চান ট্রাম্প। এ লক্ষ্যে তিনি বদলে ফেলছেন পূর্বসূরী ওবামার নীতি। নতুন নীতিতে আফগানিস্তানের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াকে রাখা হয়েছে। আফগানিস্তানে বর্তমানে ৮ হাজার ৪শ’ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে ট্রাম্প ইতোমধ্যেই দেশটিতে আর চার হাজার সেনা পাঠানো অনুমোদন করেছেন। তবে নতুন পরিকল্পনায় আফগানিস্তানে কত সৈন্য রাখা হবে সেটি স্পষ্ট করে ট্রাম্প জানাননি। এটি ছিল কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে জাতির উদ্দেশে ট্রাম্পের প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাষণ। মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিডে প্রেসিডেন্টের অবকাশ কেন্দ্র থেকে তিনি এ ভাষণটি দেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটি তার প্রশাসনের দেয়া প্রথম আফগান নীতি। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এখনই আফগান যুদ্ধ শেষ করছে না। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সময় বেঁধে আফগান যুদ্ধ শেষ করার নীতি থেকে এসেছেন। সেখানকার বাস্তব অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেয়া যুদ্ধ শেষ করার বিষয়টি ঠিক করা হবে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছেন, কয়েকটি মিত্র দেশ আফগানিস্তানে নতুন করে সৈন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ট্রাম্প চান আফগান যুদ্ধে জয়লাভ করতে। আফগান সরকার এখনও পুরো দেশের দায়িত্ব নেয়ার মতো যথেষ্ট সবল হয়নি। ট্রাম্পের অভিযোগের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আসিফ গফুর বলেছেন, ‘পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের কোন গোপন আস্তানা নেই। হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ আমরা সব জঙ্গী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি।’ তালেবান বলেছে, ‘ট্রাম্পের এই ভাষণে নতুন কিছু নেই।’ এ বিষয়ে তালেবান একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে বলে জানিয়েছে। তালেবানের একজন কমান্ডার এএফপিকে বলেছেন, ‘পূর্বসূরী জর্জ ডব্লিউ বুশের মতোই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচারণ করেছেন ট্রাম্প। তিনি কেবল নিজ দেশের সৈন্য ক্ষয় করবেন। আমরা জানি কিভাবে দেশ রক্ষা করতে হয়।’ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নয়া আফগান নীতিটি জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ঘোষিত হওয়ার কথা ছিল। ট্রাম্প বলেছেন, আফগানিস্তন থেকে মার্কিন বাহিনীর হঠাৎ করে সরে গেলে সেখানে যে শূন্যতা তৈরি হবে সেটি পূরণ করবে সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, তার প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী পুরোপুরি সরিয়ে নেয়া। কিন্তু পরে তিনি ইরাক থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার মতো ভুল না করার সিদ্ধাš নেন। তিনি বলেন আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা থাকবে এবং ‘জয়ের জন্য লড়াই’ চালিয়ে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর হামলাকারীদের ধরার উদ্দেশ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক জোট আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করেছিল। যুদ্ধ এখন ১৬ বছরে গড়িয়েছে। এ যুদ্ধে হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে। মার্কিন করদাতাদের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে যুদ্ধের পেছনে। দেশটিতে একটি দুর্বল সরকার রয়েছে। দুর্নীতিতে জর্জরিত এ সরকারের পক্ষে তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গী গ্রুপকে মোকাবেলার সামর্থ্য নেই।
×