ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইপিও আবেদনে আগ্রহ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২০ আগস্ট ২০১৭

আইপিও আবেদনে আগ্রহ বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিবিএস কেবলের আইপিওতে ভাল দর পাওয়ায় জমে উঠেছে আইপিও বাজার। বাজারে আসার মাত্র ১০ কার্যদিবসেই এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি ১০ টাকার শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১১৫ টাকার ওপরে। অর্থাৎ প্রতি শেয়ারের দর বেড়েছে ১১ গুণ। আগামী আসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দর এমন হবে এ প্রত্যাশায় তারা ঝুঁকেছেন আইপিও বাজারে। ফলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে আইপিও জমা দিতে আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে আইপিওর টাকা জামা দেয়ার গ্রাহকদের ভিড়। য়ারা দীর্ঘদিন আইপিওর শেয়ারে আবেদন করছে না অধিক লাভের আশায় তারাও নতুন আইপিওর জন্য টাকা জমা দিয়ে শেয়ারের আবেদন করছেন। এ বিষয়ে কথা হয় আনোয়ার সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী রায়হান সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আইপিও মার্কেট মন্দা থাকায় দীর্ঘদিন এ শেয়ারের জন্য আবেদন করা হয়নি। সম্প্রতি বিবিএস কেবলের আইপিওতে ভাল লাভ করেছেন বিজয়ীরা। সেজন্য আবারও আইপিওর শেয়ারের জন্য আবেদন করছি। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে সেকেন্ডারি মার্কেট তুলনামূলকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে সরগরম হয়ে উঠছে প্রাইমারী বাজার। আইপিও বিজয়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ মার্কেট থেকে পুঁজি বাড়িয়ে নেয়া যাচ্ছে কয়েকগুণ। আর বিবিএস কেবলের শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে প্রাইমারী বাজারের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রাপ্ত তথ্য মতে, পুঁজিবাজার সর্বশেষ তালিকাভুক্ত দুটি কোম্পানি হচ্ছে বিবিএস কেবল ও নূরানী ডায়িং। এর মধ্যে নূরানী ডায়িংয়ের প্রতিটি লটের বিপরীতে আবেদন পড়ে ২৮ গুণ। বিবিএস কেবলের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ গুণে। এর আগে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও আইপিও আবেদনে প্রতিযোগিতার হার লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্যাসিফিক ডেনিমের আইপিওতে একটির বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে ২৭ গুণ। অন্য কোম্পানি ফরচুন সুজের ক্ষেত্রে এই প্রতিয়োগিতা আরও বাড়ে। এই কোম্পানির আইপিওতে প্রতিটির বিপরীতে জমা পড়ে ৪২ গুণ আবেদন। অন্য কোম্পানি শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়। এই কোম্পানির আইপিওতে ৫৪ গুণ আবেদন জমা পড়ে। এদিকে একটি প্রতিষ্ঠানের আইপিওর শেয়ারে চড়া দর পাওয়াই আইপিও মার্কেট চাঙ্গা হওয়ার একমাত্র কারণ নয় বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে আইপিও মার্কেট চাঙ্গা হওয়ার পেছনে স্থিতিশিল সেকেন্ডারি মার্কেট মূলমন্ত্র হিসাবে কার করছে। তাদের অভিমত গত কয়েক বছরের মধ্যে বর্তমানে সেকেন্ডারি মার্কেটের সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক। বিনিয়োগের অনুকূলে থাকায় এখন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর উর্ধমুখী রয়েছে। যে কারণে আইপিওর মাধ্যমে কোন কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলেই এর ভাল দর পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে লটারি বিজয়ীর মুনাফা বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। যে কারণে ক্রমেই এই মার্কেটের অবস্থা ভাল হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা-নুর-ই নাহারীন বলেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা মূলত সেকেন্ডারি মার্কেট দিয়ে বিবেচনা করা হয়। এ মার্কেট ভাল থাকলে প্রাইমারী মার্কেট ভাল থাকে আবার এই মার্কেটের নাজুক অবস্থা হলে প্রাইমারী মার্কেটেও মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করে। এর কারণ হচ্ছে প্রাইমারী মার্কেটের শেয়ারটি সরাসরি সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি হয়। তাই এই দুই মার্কেটের মধ্যে একটি সম্পর্ক বিরাজমান রয়েছে। এদিকে নতুন কোম্পানির লটারি বিজয়ীরা একটি শেয়ার থেকে কয়েকগুণ অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন। এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের প্রথম কার্যদিবসেই কয়েকগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সর্বশেষ তালিকাভুক্ত বিবিএস কেবলের আইপিওতে রেকর্ড মুনাফা অর্জন করেন বিনিয়োগকারীরা। প্রথম দিনেই তারা ১০ টাকার শেয়ার ৯৪ টাকায় বিক্রি করকে সক্ষম হন। এর আগে তালিকাভুক্ত প্যাসিফিক ডেনিমের ১০ টাকা দরের শেয়ার প্রথম কার্যদিবসই ২৭ টাকায় লেনদেন হয়। এদিকে ফরচুন সুজের শেয়ার প্রথম দিন হাত বদল হয় ৬০ টাকা ১০ পয়সায়। এরপর দর বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ শেয়ারের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। এদিকে প্রাইমারী মার্কেট চাঙ্গা থাকলেও নতুন কোম্পানির শেয়ারগুলো যেন অতিমূল্যায়িত না হয় সেদিকে নজর দেয়ার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতো কোন শেয়ার যদি বাজারে এসেই অতিমূল্যায়িত হয়ে যায় তবে সেই শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, প্রাইমারী হোক আর সেকেন্ডারি মার্কেট হোক সব জায়গা থেকেই শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির মৌলভিত্তি বিবেচনা করা দরকার। একটি শেয়ার কত টাকায় ক্রয় করা যেতে পারে কোম্পানির মৌলভিত্তি দেখলে তা ঠিক করতে পারবেন একজন সচেতন বিনিয়োগকারী। কোন শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেলে সে শেয়ার বিনিয়োগ অধিক ঝুঁকি টেনে আনেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
×