ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ৬ পোশাক কারখানা রুগ্ন শিল্পের তালিকায় সংযুক্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৭ আগস্ট ২০১৭

আরও ৬ পোশাক কারখানা রুগ্ন শিল্পের তালিকায় সংযুক্ত হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ পোশাক খাতে রুগ্ন শিল্পের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। নতুন করে আরও ছয়টি পোশাক কারখানাকে রুগ্ন শিল্প ঘোষণা করে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আরও অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান রুগ্ন শিল্প হওয়ার পথে। বর্তমান ২৭৯টি পোশাক কারখানা অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক রুগ্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো রুগ্ন হওয়ার জন্য ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছে এই শিল্প খাত মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এগুলো হচ্ছেÑ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিদেশী ক্রেতার অসাধুতা, ব্যাংকের অসহযোগিতা, বিল্ডিং ধস, কারখানায় অগ্নিকা- এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ মুহূর্তে রুগ্ন শিল্পের তালিকা সীমাবদ্ধ করা সম্ভব ও যুক্তিযুক্ত নয় বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ। এছাড়া বিদেশী ক্রেতাদের সংগঠন এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্সের বাড়াবাড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে। জানা গেছে, পোশাক খাতে এ পর্যন্ত ২৭৯টি শিল্প রুগ্ন হয়েছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রুগ্ন শিল্পগুলো এক্সিট পদ্ধতিতে বের করে দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২টি শিল্পকে এক্সিট পদ্ধতিতে বের করে দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে বিজিএমইএ কর্তৃক সুপারিশকৃত ২৭০টি রুগ্ন কারখানার আরোপিত ও সুদ অনিশ্চিত খাতে রক্ষিত সুদ বাবদ সরকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে ওইসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ অবসায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারকে সুদ ভর্তুকি বাবদ ৩ শতাংশ হারে আরও ৫০ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে। এছাড়া সরকার চিহ্নিত রুগ্ন বন্ধ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ দায়দেনা সমন্বয় করেছে। বিজিএমইএ বলছে, রুগ্ন হওয়ার পরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান সরকার প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করেনি। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের আন্তরিক সহযোগিতায় ২০০৫ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে রুগ্ন বন্ধ হওয়া ২৭০টি পোশাক কারখানার তালিকা প্রস্তুত করা হয়। প্রকৃত রুগ্ন শিল্প হওয়া সত্ত্বেও ঐ সময় বিভিন্ন কারণে ও পরবর্তীতে রুগ্ন হওয়া সত্ত্বেও বহু প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। এদের মধ্যে তালিকা সংযুক্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠান অন্যতম। সম্প্রতি বিজিএমএই সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান এই ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে রুগ্ন শিল্পের তালিকায় সংযুক্ত করার জন্য বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি জানান, মানসিক, আর্থিক ও মামলায় জর্জরিত এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে রুগ্ন হওয়া ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ২৭৯টির মধ্যে তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে বা একই নির্দেশনার আলোকে দায় দেনা অবসায়নের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। শুধু তাই নয়, বিজিএমইএ কর্তৃক চিহ্নিত, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুপারিশকৃত এবং অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত তৈরি পোশাক শিল্পের ২৭৯টি রুগ্ন বা বন্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের তালিকায় ছয় কারখানা তালিকাভুক্তিকরণ অথবা একই নির্দেশনার আলোকে ঋণ হিসাব অবসায়নের সুযোগ দেয়া হোক। যে ছয় প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হওয়ার তালিকায় সংযুক্ত হবে ॥ মেসার্স জুলিয়া সুয়েটার কম্পোজিট লি. ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটির সুদসহ অগ্রণী ব্যাংকের কাছে মোট দেনা ৯ হাজার ৭৪৪ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ১ হাজার ১৯৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মেসার্স এম আর সুয়েটার কম্পোজিট লি. ফতুল্লা নারায়ণঞ্জ-অগ্রণী ব্যাংকের কাছে সুদসহ মোট দেনা ১২ হাজার ৪২৩ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৩৩৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। মেসার্স ক্যান এ্যাম গার্মেন্টস প্রাইভেট লি. সোনারগাঁ নারায়ণগঞ্জ। সোনালী ব্যাংকের কাছে সুদসহ প্রতিষ্ঠানটির মোট দেনা ৪ হাজার ৬৮৩ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৪১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। মেসার্স মোনায়েম সুয়েটার কমপ্লেক্স সোনারগাঁ নারায়ণগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের কাছে সুদসহ মোট দেনা ২ হাজার ৪২৯ লাখ টাকা, এর মধ্যে ৫১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। মের্সাস রেবেকা ফ্যাশন লি. মিরপুর-১ ঢাকা। এক্সিম ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির সুদসহ মোট দেনা ২ হাজার ১১০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ৮০০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মেসার্স ওরিয়েন্টাল ফ্যাশন ফিট লি. নিতাইগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ। রূপালী ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির সুদসহ মোট দেনা ২০৬ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে প্রায় ৪৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
×