ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর ভিসানীতি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৫ আগস্ট ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর ভিসানীতি

বৈধ অভিবাসী সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদনকারীদের জন্য নতুন স্থায়ী প্রশ্নমালা তৈরি করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য, জীবনবৃত্তান্ত ও নিজের ব্যক্তিগত ভ্রমণ ইতিহাসও জানতে চাওয়া হবে তাদের কাছে। দেশটিতে ভ্রমণ প্রত্যাশীদের কঠোর জেরার মুখোমুখি করতে গত মে মাসে এ প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক পাসপোর্টধারীর কাছে তাদের পাঁচ বছরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের তথ্য, ইমেল এ্যাড্রেস, ফোন নম্বর ও পনেরো বছরের জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হবে। এ সময়ে ভ্রমণকারীর আবাসিক ঠিকানা, কর্মস্থল ও ভ্রমণ ইতিহাস যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে জমা দিতে হবে। কিন্তু তথ্যদাতাকে কতবার ফরম পূরণ করতে হবে কিংবা কোন কোন দেশের নাগরিকদের ওপর নতুন এসব শর্ত আরোপ, তা নিয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে তারা জানিয়েছে, প্রতিবছর অন্তত ৬৫ হাজার ভিসা আবেদনকারীকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। যাদের অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট অঙ্গীকার করেছেন যে তিনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবৈধ অভিবাসীদের ওপর ধরপাকড় চালাবেন। এছাড়া যে সব বিদেশী নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের ঢুকতে চাচ্ছেন, তাদের ওপর আলাদা পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আগামী দশ বছরে বৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার বিলে বুধবার প্রেসিডেন্ট সমর্থন দিয়েছেন। নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য পেতে ফেডারেল সরকারের অধিকাংশ নতুন অনুরোধ অবশ্যই দেশটির ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বিভাগকে অনুমোদন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে জরুরী ভিত্তিতে ফরমের অনুমোদন দেয়া হবে। আর ফরম ব্যবহারের সুযোগ প্রচলিত তিন বছরের পরিবর্তে ছয় মাসে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আগামী তিন বছরের জন্য ফরমটি ব্যবহারের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। নতুন এ প্রশ্নমালা এ জন্যই করা হয়েছে, যাতে সন্ত্রাসীদের ভিসা আবেদন জোরালোভাবে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়। বিশেষভাবে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত অথবা ভিসা আবেদনের যোগ্যতা ও অযোগ্যতাগুলো ভালভাবে শনাক্ত করতে নতুন এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রশ্নমালা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে ভিসা আবেদনকারী অনেকটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জবাব দিতে আগ্রহী হয়। কিন্তু যদি সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য দিতে অপারগ হন, তবে তাকে ভিসা দিতে দেরি হবে অথবা প্রত্যাখ্যান করা হবে। ট্রাম্প গত মার্চে ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়ামেনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে অস্থায়ী ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কয়েক মাসের আইনী জটিলতা কাটিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সীমিত পরিসরে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের অনুমতি দেয়। তবে নতুন করে তৈরি করা এসব প্রশ্ন কোন দেশের নাগরিকদের নির্দিষ্টভাবে টার্গেট করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা আবেদনে ইরানী নাগরিকদের পরামর্শক হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি অভিবাসী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন সাইয়েদ আলী সেফার। তিনি বলেন, গত জুন থেকে তার মক্কেলদের মধ্যে যাদের আলাদা অতিরিক্ত নিরাপত্তা তল্লাশিতে পাঠানো হয়েছে, তাদের প্রত্যেককেই একটি নতুন ফরম পূরণ করতে বলা হয়েছে। ম্যারিল্যান্ডভিত্তিক অভিবাসী আইনজীবী কিয়ানুশ রাজাগি বলেন, ইরাকি, লিবীয় ও ইরানী নাগরিকদের নতুন একটি ফরম পূরণ করতে বলা হয়েছে। আরেক আইনজীবী স্টেভ প্যাটিসন বলেন, ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এমন ছয় দেশের কোনটির নাগরিক না হয়েও তার এক মক্কেলকে একটি নতুন ফরম পূরণ করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা এমন হতে পারে যে প্রত্যেকেই ফরম ব্যবহারে আরেকটি পরিণতি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। প্রতিটি দেশের নাগরিকের জন্য সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে এমনটি করা হয়ে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড়ের পর মেক্সিকো সীমান্তে অনুমোদনহীন সীমান্ত পারাপার অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন বৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। আরাকানসের রিপাবলিকান সিনেটর টম কটনের আনা একটি বিলে প্রেসিডেন্ট সমর্থন দিয়েছেন। বিলটিতে পরবর্তী দশ বছরে বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। তবে কংগ্রেসে বিলটি পাস হতে ব্যাপক চড়াই-উৎরাই পার হতে হবে মনে করা হচ্ছে। কারণ বেশকিছু সিনেটর সমন্বিত অভিবাসী সংস্কার চাচ্ছেন, তারা কঠোর ধরপাকড়ের বিরোধী। নতুন বিল অনুসারে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রেও মেধাভিত্তিক দক্ষ অভিবাসীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পুরনো অভিবাসী ব্যবস্থা সেকেলে ও মজুরি হ্রাসের মাধ্যমে মার্কিন শ্রমিকদের আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলছে বলে অভিযোগ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। -ইয়াহু নিউজ
×