ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসুরের লাঠির আঘাতে পেটের শিশুসহ মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৫ আগস্ট ২০১৭

ভাসুরের লাঠির আঘাতে পেটের শিশুসহ মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মণিরামপুরে আয়েশা বেগম (৩৬) ও তার গর্ভের আট মাসের কন্যা সন্তানকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ভাসুরের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে আয়েশার মৃত্যু হয়। এর আগে সন্ধ্যায় তিনি একটি মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। আয়েশা উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের বাটবিলা গ্রামের মুক্তার সরদারের স্ত্রী। মেহেদী (১৫), জিহাদী (৮) ও মুজাহিদ (২) নামে তার তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। মা-মেয়ের মৃত্যুর খবরে সকাল থেকে আশপাশের কয়েক গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ এক নজর দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় জমায়। খবর পেয়ে আয়েশা বেগমের পিতার বাড়ির লোকজন সকালে ওই বাড়িতে এলে মুক্তারের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।এদিকে গৃহবধূ ও তার পেটের সন্তানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান মিন্টুসহ মুক্তারের পরিবার দেনদরবার শুরু করেছে। তিন ছেলের নামে ভিটে মাটির দুই শতক জমি লিখে দেয়াসহ এক লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে তারা রাতেই নিহতের স্বজন ও ছেলেদের ম্যানেজ করে বলে অভিযোগ। পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছে। আয়েশার চাচা ছিদ্দিক জানান, ১৮-২০ বছর আগে একই উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের শিঙ্গের খাজুরা গ্রামের আবদুস সামাদ সরদারের কন্যা আয়েশার বিয়ে হয় বাটবিলা গ্রামের মৃত ইসমাইল সরদারের ছেলে মুক্তার সরদারের সঙ্গে। আয়েশা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। দুই-তিন মাস আগে সাতক্ষীরার আশাশুনি এলাকা থেকে দুই সন্তানের জননী এক মহিলাকে ভাগিয়ে বিয়ে করে বাড়ি তোলেন মুক্তার। সেই থেকে সংসারে অশান্তি চলছিল। গত ২১ দিন আগে চাল ভাগাভাগি নিয়ে আয়েশার ভাসুর মমরেজ তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়ার একপর্যায়ে আয়েশা উপুড় হয়ে পড়ে যায়। এরপর মমরেজ মোটা লাঠি দিয়ে তার পেটে আঘাত করলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিষয়টি আয়েশার বড় ছেলে মেহেদী তাদের ফোনে জানায়। আয়েশার অবস্থা গুরুতর হলেও তাকে হাসপাতালে নিতে এগিয়ে আসেনি মুক্তারসহ তার পরিবারের কেউ। তখন মেহেদী ও ছোট্ট জিহাদী মাকে উদ্ধার করে মণিরামপুর হাসপাতালে আনে। সেখানকার চিকিৎসকরা অপারগতা প্রকাশ করলে স্বজনরা তাকে সদরে নিয়ে যান। আয়েশার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সেখানে চিকিৎসকরা জানান। যে কোন সময়ে আয়েশার গর্ভের সন্তান মারা যেতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও জানান চিকিৎসকরা। হাসপাতালে পাঁচদিন রাখার পর তাকে শিঙ্গের খাজুরা পিতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নয়দিন ছিলেন আয়েশা। এর মধ্যে স্বামীর বাড়ির কেউ তার খবর নেয়নি বলে অভিযোগ। ছিদ্দিক আরও জানান, বিষয়টি তারা লিখিত আকারে দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার বাহাদুর আলীকে জানান। সালিশে আয়েশাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হলেও গত এক সপ্তাহে তাকে হাসপাতালে আনা হয়নি বলে অভিযোগ করেন ছিদ্দিক। আয়েশার ভাবি রাহেলা জানান, লাশের গোসল করানোর সময় তিনি সেখানে ছিলেন। আয়েশার বুকে লম্বা একটি দাগ এবং শিশুটির মাথায় ও দুই হাতে রক্ত জমাট হয়ে আছে। এগুলো আঘাতের চিহ্ন বলে দাবি রাহেলার। স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহিলা একটি মৃত কন্যা সন্তান প্রসব করে। পরে অধিক রক্তক্ষরণ শুরু হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।’ এটা স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি মেম্বারের। দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার বাহাদুর আলী বলেন, মেয়েটিকে তার ভাসুর মেরেছে এমন অভিযোগ করে তার ভাই আবসার আহমেদ। পরে তারা ক্ষমা চেয়েছে। আয়েশা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হলেও মুক্তার তা করেনি। পরে শুনি মহিলা ও তার পেটের সন্তান মারা গেছে। মমরেজের আঘাতে মা মেয়ের মৃত্যু হতে পারে এমনটি ধারণা করেন প্রবীণ এই চেয়ারম্যান। মণিরামপুর থানার ওসি বলেন, ‘একটা অভিযোগ শুনে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরে জানলাম, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। ফলে লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।’
×