ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদনে তথ্য

খেলাপী ঋণ সবচেয়ে বেশি পোশাক খাতে

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১ আগস্ট ২০১৭

খেলাপী ঋণ সবচেয়ে বেশি পোশাক খাতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপী ঋণের ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ। আর বাকি ব্যাংকগুলোর কাছে রয়েছে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ খেলাপী ঋণ। অন্যদিকে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ পরিমাণ দাঁড়ি?য়ে?ছে মোট খেলাপী ঋণের ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ। বাকি ৪৭ ব্যাংকে খেলাপী রয়েছে মাত্র ৩৪ দশ?মিক ১ শতাংশ। সোমবার ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট খেলাপী ঋণের হার ও পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। ২০১৬ সালে ৯ দশমিক ২ শতাংশে দাঁ?ড়ি?য়ে?ছে। ২০১৬ সাল শে?ষে মোট খেলা?পী দাঁ?ড়ি?য়ে?ছে ৬২ হাজার ১৭০ কো?টি টাকা। খাতভিত্তিক হি?সে?বে বা?ণি?জ্যিক ব্যাং?কে খেলা?পীর হার সব?চে?য়ে বেশি। যা মোট খেলা?পীর ২৩ দশ?মিক ৪ শতাংশ। এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মোট খেলাপী ঋণের ১২ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ রয়েছে তৈরি পোশাক খাতে। একক শিল্প খাত হিসাবে এ হার সর্বোচ্চ। এছাড়া বিভিন্ন ট্রেডিং খাতের খেলাপীর হার ২৩ শতাংশ। পুনঃতফসিলি ঋণের হারও সর্বাধিক এই তৈরি পোশাক শিল্পে। ২০১৬ সালে তৈরি পোশাক খাতে পুনঃতফসিলীকরণ করা হয়েছে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ২০ শতাংশ রয়েছে সামগ্রিক শিল্প খাতে। এছাড়া ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ করা হয়েছে ফরেন ট্রেডে। ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট মূলত বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করে থাকে। আর্থিক খাতের গতি প্রকৃতি, স্থিতিশীলতাও তার প্রভাব এবং তা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ, সম্পদের মান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও তারল্যের নির্দেশকগুলো এখানে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো উঠে আসে এই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন প্রকাশকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বললেন, এখন ব্যাং?কিং খা?তের বড় অঙ্কের ঋণগু?লো বে?শি ঝুঁকি?তে রয়ে?ছে। বড় খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেন তিনি। সরকার ঘো?ষিত উচ্চ প্রবৃ?দ্ধির ধারা অব্যাহত রাখ?তে ব্যাংক ও আ?র্থিক প্র?তিষ্ঠা?নের শৃঙ্খলা ও সুশাসন বজায় রাখ?তে হ?বে। গবর্নর বলেন, ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা আনতে এ খাতের সুশাসন সুনিশ্চিত করতে হবে। বড় ঋণের (৫০০ কোটি টাকার ওপরে) সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে তুলনামূলক ছোট ঋণের দিকে যেতে হবে। কারণ বড় ঋণে খেলাপী ঝুঁকি বাড়ে। ব্যাংকগুলোকে এ ঝুঁকি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গবর্নর বলেন, কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যাতে আর্থিক খাতের উন্নয়নের ধারাকে যাতে ব্যাহত না করতে পারে- সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। ঋণ আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে খেলাপী ঋণের হার কমিয়ে আনতে হবে। ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, সম্পদের মানের অবনমন আর্থিক খাতকে সমস্যা সংকুল করে তুলবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের খেলাপী ঋণের হার বেশি। এটা আর্থিক খাতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে ২০১৬ সালে ব্যাংকিং খাতে মূলধন পর্যাপ্ততার হার ছিল সন্তোষজনক। এ সময়ে সম্পদ ও আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমানত বিমার সক্ষমতা বেড়েছে; যার মাধ্যমে প্রায় ৯০ ভাগ আমানতকারীর আমানত সুরক্ষা করা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ম পরিপালনে আহ্বান জানান অপর ডেপুটি গবর্নর এসএম মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, নিয়ম পরিপালন করলে আর্র্থিক খাতের ঝুঁকি কমে আসবে। ঋণ ব্যবস্থাপনায় বড় প্রভাবশালী গ্রুপগুলোর প্রতি নজরদারি বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অশোক কুমার দে। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত না করতে পারলে খেলাপী ঋণের এ সংস্কৃতি বদলানো যাবে না। এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি আনিস এ খান বলেন, পরিচালন মুনাফা প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঝামেলায় পড়তে হয় ব্যাংকগুলোকে। এই প্রতিবেদন নিট মুনাফার সঠিক হিসাব থাকে না বলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশে আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পত্র-পত্রিকায় ঢালাওভাবে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকাশের কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার মধ্যে ট্যাক্স ও প্রভিশনসহ অন্যান্য বিষয়ে সরাসরি জড়িত থাকে, যা ব্যাংকটির কর পরবর্তী নিট মুনাফায় অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট এ্যাডভাইজার মোঃ আল্লাহ মালিক কাজেমী, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ।
×