ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মুক্তিযোদ্ধা-রাসেল, ফরাশগঞ্জ-চট্টগ্রাম আবাহনী লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৩০ জুলাই ২০১৭

আজ মুক্তিযোদ্ধা-রাসেল, ফরাশগঞ্জ-চট্টগ্রাম আবাহনী লড়াই

রুমেল খান ॥ তাদের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮১। তবে চমক জাগানিয়া উত্থান নব্বই দশকে। আবাহনী-মোহামেডানের একঝাঁক তারকা ফুটবলার নিয়ে যে দলটি গঠন করা হয়েছিল তা পরিচিতি পেয়েছিল ‘ড্রিমটিম’ নামে। আর দলটির নাম হচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। ১৯৯৭ এবং ২০০০ সালে দু’বার লীগ শিরোপাও জিতেছিল তারা। কিন্তু ১৬ বছর ধরে তৃতীয় শিরোপাটি এখনও জিততে পারেনি তারা। ২০১০ এবং ২০১১ মৌসুমে রানার্সআপ হওয়াটাই ছিল তাদের সর্বশেষ সেরা সাফল্য। সেবার তাদের পথের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যথাক্রমে শেখ জামাল ও আবাহনী। সর্বশেষ দুই লীগে তারা হয়েছিল যথাক্রমে ষষ্ঠ এবং পঞ্চম। এবার তারা চায় লীগ শিরোপার মালিক হতে। সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় লীগ অভিযান শুরু করবে তারা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মোকবেলা করবে একবারের (২০১২-১৩) লীগ শিরোপাধারী শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের। গত লীগে উভয় দল পারস্পরিক মোকাবেলায় ছিল সমানে সমান। প্রথম সাক্ষাতে ২-০ গোলে জিতেছিল মুক্তিযোদ্ধা। পরের সাক্ষাতে একই ব্যবধানে জিতেছিল ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত শেখ রাসেল। ঘরোয়া ফুটবলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পর আলোড়ন সৃষ্টিকারী ক্লাবের মধ্যে অন্যতম ছিল শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। ২০১২-১৩ মৌসুমে ট্রেবল জিতে ইতিহাস গড়েছিল তারা। তবে গত মৌসুমে বড় বাজেটের দল গড়েও পেশাদার লীগে কাক্সিক্ষত ফল পায়নি তারা। হয়েছিল ১২ দলের মধ্যে অষ্টম। বরং একটা পর্যায়ে অবনমিত হওয়ার শঙ্কায় পেয়ে বসেছিল। সেই ধাক্কা এখনও পুরোপুরি কাটেনি তাদের। ফলে কাগজে-কলমে এবার তাদের দলটি অনেকের দৃষ্টিতেই তেমন আহামরি হয়নি। তবে এবারের মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে রাসেল ভাল করবে বলেই মনে করেন ক্লাবের নতুন কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। অভিজ্ঞ ও তরুণ ফুটবলারদের সঙ্গে দলের বিদেশী খেলোয়াড়রা জ্বলে উঠলে ২০১২-১৩ মৌসুমের পর আবারও শিরোপা জয়ে আশাবাদী তিনি। গত কয়েক মৌসুম ধরে শিরোপা রেসে নেই শেখ রাসেল। বিস্ময়কর হলেও সত্য প্রায় দশ কোটি টাকার দল গড়েও পেশাদার লীগে সর্বশেষ মৌসুমটা শেখ রাসেল শেষ করেছে অষ্টম স্থানে থেকে। এমন অবস্থায় নতুন মৌসুমকে সামনে রেখে দল গুছিয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। দলে আছেন বিপ্লব ভট্টাচার্য, তপু বর্মনের মতো অভিজ্ঞরা। এছাড়া রাসেলের বিদেশী সংগ্রহটাও বেশ ভাল। রয়েছেন দাউদা সিসি, যিনি গত মৌসুমে রহমতগঞ্জের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করেছিলেন। সঙ্গে আছেন মিসরীয় আহমেদ সাইদ হাসান ও এলিটা জুনিয়র। সবমিলিয়ে শক্তিশালী না হলেও এবারের দল নিয়ে সন্তুষ্ট কোচ মানিক। মানিক মনে করেন এবার ঝলকটা দেখাবে স্থানীয় ফুটবলাররাই, ‘সব থেকে বড় কথা এবার কিন্তু লড়াইটা স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যেই হবে। কারণ বিদেশী কম হওয়ায় এবার মাঠে থাকবে ৯ স্থানীয় ফুটবলার। গতবার যেমন বিদেশীরা পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল এবার স্থানীয় ফুটবলাররা পার্থক্য গড়ে দেবে।’ মুক্তিযোদ্ধা এবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল লীগে ভাল করার। কিন্তু ঝামেলা হয় ক্লাবটির সাংগঠনিক জটিলতা নিয়ে। তবে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ কোচ কায়সার পারভেজ। রূপগঞ্জে ভাড়া করা মাঠে চলছে ক্লাবটির অনুশীলন। তরুণদের নিয়ে গঠিত দল গত মৌসুমে মোটামুটি ভালই খেলেছিল। এবার একঝাঁক তরুণ ফুটবলার নিয়ে দল গড়েছে মুক্তিযোদ্ধা। দলে আছেন রোহিত সরকার, ওসাই মং মারমা, শিহাবের মতো তরুণ ফুটবলার। আছে পরীক্ষিত তৌহিদ, সৈকতরা। আব্বাস ইনুসা বাদে বাকি দুই বিদেশী নাইজিরিয়ান কলিন্স ও মিসরের জাকি শারহানকে নিয়ে তৃপ্ত কায়সার পারভেজ। আজ সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় অপর ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী মুখোমুখি হবে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের। চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ, স্বাধীনতা কাপ এবং শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাবকাপ ট্রফি.... ৪৫ বছর বয়সী বন্দরনগরীর ফুটবল ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনীর শিরোপা সংখ্যা তিনটি। গত প্রিমিয়ার লীগে শিরোপা জিততে পারেনি তারা। ২২ খেলায় ৪৭ পয়েন্ট পেয়ে রানার্সআপ হয়েছিল তারা। ঢাকা আবাহনী তাদের চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট বেশি নিয়ে হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। এবার অধরা লীগ শিরোপা জিততে চায় তারা। সাবেক ফুটবলার আরমান আজিজ এবং কোচ সাইফুল বারী টিটু মিলে গড়ছেন এবারের দল। তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়া দলের মূলশক্তি শৃঙ্খলা। গত মৌসুমে ফেডারেশন কাপের ফাইনালের পর ফুটবলারদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল আত্মবিশ্বাসের কমতি। বন্দরনগরীর হালিশহরে আবাসিক ক্যাম্প করে লীগের প্রস্তুতির মাধ্যমে সেটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে চট্টলার এই দলটি। মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন এবং আশরাফুল ইসলাম রানা আগের মৌসুমের মতো এবারও এই দলে আছেন। বাকিদের অধিকাংশই নতুন। গতবার মাঠে পারফর্ম করেছে এমন ফুটবলারই এবার নেয়া হয়েছে দলে। এখানে নামের ওপর জোর দেয়া হয়নি। প্রতিটি পজিশনেই নেয়া হয়েছে দুজন করে দক্ষ খেলোয়াড়। মাঝমাঠ এবং আক্রমণই হচ্ছে তাদের শক্তিশালী দিক। জাহিদ, শাখাওয়াত রনি, ঢাকা মোহামেডানের গতবারের অধিনায়ক সবুজ ও চৌমরিন আছেন আক্রমণে। এই ফরোয়ার্ডরা গত লীগে ৬-৭টি করে গোল করেছেন। বলতে গেলে গত লীগের দেশীয়দের মধ্যে শীর্ষ চার ফরোয়ার্ডকেই দলে ভিড়িয়েছে ক্লাবটি। সঙ্গে শেখ কামাল টুর্নামেন্টে নেপালের মানাং মার্সিয়াংদির হয়ে ৫ গোল করা নাইজেরিয়ান হাফিজ (যদিও তাকে বাফুফের প্যাড ব্যবহার ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করায় বাফুফে তাকে এক ম্যাচের জন্য বহিষ্কার করেছে)। মাঝমাঠে আছেন গতবার আরামবাগের জার্সিতে চমক দেখানো জাফর ইকবাল এবং মোঃ আবদুল্লাহ। দলে নতুন মুখ বলতে মান্নাফ রাব্বি, জনি ও কৌশিক। এবার দলনায়কও নতুন। মামুনুলের বদলে এবার অধিনায়কত্ব করবেন জাহিদ হোসেন। রাইটব্যাক মনসুর, ফয়সাল, লেফটব্যাকে সুশান্ত ত্রিপুরা। এরা প্রত্যেকে কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ফেডারেশন কাপে। তবে দল চিন্তিত ভাল স্টপার নিয়ে। এই পজিশনে আছেন দুই বিদেশী লাওয়াল ও এলিস। বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে দুজন বিদেশী স্টপার নেয়া বিরল ঘটনাই। স্থানীয় স্টপারদের মধ্যে ব্রাদার্স থেকে আসা কৃষ্ণপদই ভরসা। এদিকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও ফুটবলে ফিরছে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। তবে নির্বাহী কমিটির জটিলতায় অনিশ্চিত পেশাদার লীগের লক্ষ্য। ঘোষিত হয়েছে ক্লাবের নতুন কমিটি। আর কোচ ও ফুটবলাররা স্বপ্ন দেখছেন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মাঠে জ্বলে ওঠার। মধ্যম মানের দল নিয়েও এক সময় স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে ঢাকার ফুটবলে হইচই ফেলেছিল এই দলটি। সেই ফরাশগঞ্জ এখন নিষেধাজ্ঞার খাড়ায় নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে। কর্মকর্তারা বলছেন এই নিষেধাজ্ঞায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লালকুঠির ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। সঙ্গে চার বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় স্থবির হওয়ার পথে কার্যক্রম। আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই প্রায় এক কোটি টাকায় গড়া হয়েছে তারুণ্যনির্ভর দল। কিন্তু মাঠের পারফর্মেন্সে ছন্দ ফিরবে তো ফরাশগঞ্জের?
×