ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছয়টি সিনেমা হলের মধ্যে চালু আছে মাত্র একটি

দর্শকশূন্য রূপগঞ্জের সিনেমা হল

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২২ জুলাই ২০১৭

দর্শকশূন্য রূপগঞ্জের সিনেমা হল

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে যখন মোবাইলে বা আইফোনে ঘরে বসেই মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি দেখা যায়, সেখানে কষ্ট করে কিংবা পয়সা খরচ করে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার কোন যুক্তি নেই-এমন সুরেই কথাগুলো বললেন আইফোন ব্যবহারকারী শাহাদাৎ হোসেন সজীব মিয়া। সজীব আগে প্রায়শ হলে গিয়ে সিনেমা দেখত। এখন আর হলের চৌকাঠ মাড়ান না। প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের ছয় লাখ জনস্যংখ্যা অধ্যুষিত উপজেলায় এখন সচল সিনেমা হলের সংখ্যা মাত্র একটি। অথচ বছরদশেক আগেও এখানে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৬টি। একসময় সিনেমা হল ছিল অনেকের রমরমা ব্যবসা। আর এখন অব্যাহত লোকসানের মুখে সারাদেশে একের পর এক হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার জন্য কিছু কারণ দায়ী বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জের একাধিক সিনেমা হল মালিক, কর্মচারী ও দর্শক। সিনেমা হল মালিকরা জানান, ’৯৫ পরবর্তী অশ্লীলতার কারণে মধ্যবিক্ত দর্শক হলবিমুখ হতে থাকেন। এ অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি গত এক দশকে। দর্শক সঙ্কটে লোকসান গুনতে থাকেন হল মালিকরা। এখন উপজেলার ছয়টি সিনেমা হলের মধ্যে একটি মাত্র হল চালু। তাও আবার চলে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে। বন্ধ হলগুলোর মধ্যে রয়েছে মুড়াপাড়ার মায়া, ইছাপুরার তৃষ্ণা, গোলাকান্দাইলের শিউলী, কাঞ্চনের সোনালী, রূপসীর মনিমহল। শুধু কাঞ্চনের সানলাইট সিনেমা হলটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তাও আবার দর্শক রিক্সাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা আর বখাটে যুবকরা। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের স্থানে গড়ে উঠেছে টেক্সটাইল মিল ও অন্য স্থাপনা। একমাত্র চালু থাকা হলটির সমস্যার শেষ নেই। সানলাইট সিনেমা হলের মালিক আলম হোসেন বলেন, সিনেমার গুণগতমান, অশ্লীল দৃশ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির কারণে কেউ সিনেমা হলে আসতে চান না। প্রতি শোতেই আমাদের বেশ লোকসান গুনতে হচ্ছে। কিভাবে যে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখব বুঝে উঠতে পারছি না। সানলাইট হলে সিনেমা দেখতে আসা দর্শক আবুল, রমেশ, সিরাজ, আসমাসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা অভিযোগ করে বলেন, দর্শক এখন রুচিশীল। কিন্তু হলগুলোর যন্ত্রপাতিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। নেই ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম, পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। আর অশ্লীল কাটপিস সিনেমাই বেশি প্রদর্শন করা হয়, যা পরিবার নিয়ে দেখার মতো নয়। আবার মানসম্মত চলচ্চিত্রও নির্মাণ হচ্ছে না। এসব কারণেই হল দর্শকশূন্য হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদরের মুড়াপাড়া বাজারের মায়া সিনেমা হল একনামে পরিচিত। বন্ধ হওয়া হলটির মালিক ননী বাবু বলেন, মূলত দক্ষ নায়ক-নায়িকা সঙ্কটের কারণে সিনেমা হলে দর্শক আসেন না অথচ একসময় এ হলে মানুষ জায়গা দেয়া যেত না। বর্তমানে শাকিব খান আর মাহি ছাড়া দর্শকরা কারও সিনেমা দেখেন না। তাতেও অশ্লীল দৃশ্যে ভরপুর থাকে। প্রয়াত নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পর এই ব্যবসা আরও লাটে উঠেছে। এখনকার আর্টিস্টরা ভালভাবে কথাই বলতে পারেন না। এ জন্য দর্শকরা সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। -মীর আব্দুল আলীম, রূপগঞ্জ থেকে
×