হার্ড ব্রেক্সিট হলে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে ব্রিটেন। ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে জাতীয় নিরাপত্তা। এ বিষয়ে পরিচালিত একটি পার্লামেন্টারি সমীক্ষায় এমন সতর্কতামূলক বক্তব্য থাকতে পারে বলে ব্রিটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা জানতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে যেন ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের (ইসিজে) কর্তৃত্ব মেনে নেন সে বিষয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদনে সুপারিশ থাকবে বলে জানা গেছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানতে পেরেছে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যরা যে সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করছেন তাতে ইইউ বিচারকদের সীমান্ত পারাপার নজরদারি করার কর্তৃত্ব মেনে নিতে বলা হবে। এর অন্যথা করলে তা সন্ত্রাসী বা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের হাতকেই শক্তিশালী করবে। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন শুরু হবে। এর আগে ব্রিটেনকে ইউনিয়নের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী তথ্য আদানপ্রদান চুক্তিতে উপনীত হতে হবে। হাউস অব লর্ডসের ইইউ হোম এ্যাফেয়ার্স কমিটি প্রতিবেদনটি তৈরি করছে, যাতে সব দলের সদস্যরা অংশ নেন। ব্রেক্সিট বিষয়ক এটি এক সতর্কতামূলক প্রতিবেদন। এতে ইসিজের তত্ত্ববধান করার ক্ষমতা মেনে নেয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া গোয়েন্দা নজরদারি বিষয়ে সহযোগিতার কথাও এতে বলা হয়েছে। ইউরোপল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও শেঙ্গেন ইনফরমেশন সিস্টেমের কাছে ৮ হাজার সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর তালিকা রয়েছে। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা ছাড়া ব্রিটেনের পক্ষে এককভাবে সীমান্ত সুরক্ষা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন ইইউর সঙ্গে এসব বিষয়ে সমঝোতা না করলে জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষার পুরো দায়িত্ব ব্রিটেনের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের ওপর পড়বে। প্রয়োজনের সময় নিরপত্তা তথ্যে আকস্মিক ঘাটতি দেখা দিলে কি করতে হবে তার আগাম ব্যবস্থা না রেখে ব্রেক্সিট আলোচনার পরিকল্পনা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেয়া হুঁশিয়ারি সাবেক মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার লর্ড কনডনের হাত শক্তিশালী করবে। মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর তিনি এ বিষয়ে তার বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র ইন্ডিপেন্ডেন্টকে জানিয়েছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে না চাইলে সরকারের একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা করার ওপর এতে জোর দেয়া হয়েছে।’ সেটি করা হলে ইসিজে এখন যেভাবে তত্ত্ববধান করছে তা অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে এ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কোন জটিল ইস্যুতে সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো কর্তৃত্ব এ কমিটির নেই। এতে আরও সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, ইইউর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা তথ্য আদান প্রদানেরও সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই অন্তর্বর্তী চুক্তি করা না যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা তথ্য আদান প্রদানও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কেবল নিরাপত্তা তথ্যই নয়, ব্রিটেনের সাধারণ লোকদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্যও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। কারণ এসব তথ্যের বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সংরক্ষিত থাকে। ব্রেক্সিট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ সম্পর্কের পর ব্রিটেনের অবস্থান দাঁড়াবে একটি তৃতীয় দেশের মতো।
৮ জুনের নির্বাচনে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর মের সরকারের ব্রেক্সিট বিষয়ক পরিকল্পনা সমালোচনার মুখে পড়েছে। তিনি চেয়েছিলেন হার্ড ব্রেক্সিট বা ইউনিয়নের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা। তিনি ইইউর সঙ্গে কোন চুক্তি ছাড়াই বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়ে সমালোচিত হন। ইইউর প্রধান আলোচক মিশেল বার্নিয়ে বলেছেন, আগামী বছর অক্টোবরের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হতে হবে যেন ইউরোপের সরকারগুলো ও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ব্রেক্সিটের জন্য নির্ধারিত সময় ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে তা অনুমোদন করতে পারে ?