ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেসট্রাকটিভ ফর্ম থেকে বিউটি, আলো আঁধারির অনিন্দ্য সুন্দর লেখা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৬ জুলাই ২০১৭

ডেসট্রাকটিভ ফর্ম থেকে বিউটি, আলো আঁধারির অনিন্দ্য সুন্দর লেখা

মোরসালিন মিজান ॥ লোকালয় থেকে দূরে বহু দূরে যে ডকইয়ার্ড, সেখানে জাহাজ আর জাহাজ শুধু। গতি নেই কোন। একেবারে স্থির। পরিত্যক্ত প্রাণহীন জড় বস্তু। এলোমেলো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা। যার পর নাই ডেসট্রাকটিভ ফর্ম। এবং এই ফর্ম থেকেই বিউটি খুঁজে নেন শিল্পী সুলতান ইসতিয়াক। একইরকম ভালবাসা নিয়ে আঁকেন প্রিয় পুরনো ঢাকাকে। শহরের অলি গলি ফুটপাথ থেকে জীবনের চলমান গল্প তুলে আনেন। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানো চোখে ধরা পড়ে বিচিত্র সমাজ-সংস্কৃতি-জীবিকা। ওয়াটার কালার এ্যাক্রেলিক ও পেন্সিলে গড়া শিল্পকর্ম স্বতন্ত্র ভাষা পায়। গ্যালারি চিত্রকে আয়োজিত প্রদর্শনীটি তাই মুগ্ধ করে রাখে। প্রদর্শনীর শিরোনামÑ ফিগারেশন অব কমপ্লেক্সিটি এ্যান্ড আরবান এক্সপ্লোরেশন। তরুণ ইসতিয়াকের এটি তৃতীয় একক। মোট ৪৫টি ছবি দিয়ে সুন্দর সাজানো হয়েছে গ্যালারি। ঘুরে দেখতে দেখতেই পরিষ্কার হয়, নরম জল নদী নৌকার খুব চেনা পথটি ধরে হাঁটেন না শিল্পী। কঠিনেরে আঁকড়ে ধরেন। ভালবাসেন। আর তাই জাহাজ ভাঙ্গা ও মেরামতের জটিল প্রক্রিয়া কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেন তিনি। মিক্সড মিডিয়ায় নিজের মতো করে আঁকেন। রিয়ালিস্টিক কাজ আর কল্পনার সহযোগ। এতো ডিটেইল করেন যে, মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়! ওয়াটার কালার। একবারে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা। শিল্পী সুন্দর অতিক্রম করে যান। তার ডিটেইল প্রমিন্যান্ট ডিটেইল নয়। ভাসা ভাসা একটা ব্যাপার। বেশ লাগে। একাধিক ক্যানভাসে জাহাজের পুরনো কাঠামো। লোহার জঞ্জাল। বিপুল কর্মযজ্ঞ। খুঁটিনাটি আর যা, দিব্যি ফুটে ওঠে ক্যানভাসে। বৃহৎ আকার ও নানা আকৃতির জাহাজ, ভাংচুর, আগুনে গলিয়ে জোড়া দেয়ার জটিল কর্ম, কর্মের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংগ্রাম। কোনটাই চোখ এড়ায় না শিল্পীর। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফিগারেটিভ ওয়ার্ক প্রাণের সঞ্চার করে। অন্যরকম দোলা দিয়ে যায়। শিল্পী ক্ষুদ্রকে মূর্ত করতে গিয়ে বিশালত্বকে একদম অস্বীকার করেন না। বরং বিশালত্বকে নানা ব্যঞ্জনায় উপস্থাপন করেন। ছবির সামনে তা অনুভব করা যায়। উপভোগ করা যায়। এভাবে বিশালকে ক্ষুদ্র দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। আবার ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠিত হয় বিশালের বুকে! প্রদর্শনীর ছবিগুলোতে লাইট এ্যান্ড শ্যাডোর একটা খেলা খুব প্রত্যক্ষ করা যায়। শিল্পীর কাজের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বলা চলে এটিকে। জাহাজ নয় শুধু, জাহাজের গা ছুঁয়ে থাকা ছায়াটুকু আঁকেন। সকালের সোনা রোদ কিংবা বিকেলের রক্তিম আভাকে একরকম মুঠো বন্দী করে ফেলেন। তার পর ঢেলে দেন ক্যানভাসে। ফলশ্রুতিতে পাশাপাশি ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি জাহাজের মাঝখানে এক চিলতে রোদ হেসে ওঠে। জাহাজের জং ধরা শরীরে কত রকমের টেক্সচার! কাছে গিয়ে দেখেন শিল্পী। দেখান। আছে নীরিক্ষাধর্মী স্ক্রল পেইন্টিং। একাধিক হরিজন্টাল প্যানারোমিক ভিউ তো অন্য এক জগতে নিয়ে যায়! প্রদর্শনীতে খুঁজে পাওয়া যায় প্রিয় শহর ঢাকাকে। বহু পুরনো অলি গলি ফুটপাথের ছবি আঁকেন শিল্পী। স্থির চিত্রে চলমান জীবনের ছবি। পুরনো ঢাকার সরু গলিতে রিক্সা চলছে। রিক্সার চালকের পথচারীর দীর্ঘ ছায়া। বহু দূর পর্যন্ত চলে গেছে। বিভিন্ন দেশ ঘুরেও ছবি এঁকেছেন শিল্পী। বানারসের সাধুদের সুনিপুণ পোট্রেইট, শ্রীলঙ্কার জেলেদের মৎস্য শিকারের দৃশ্য একইসঙ্গে সেসব অঞ্চলের সমাজ সংস্কৃতির ভাষ্য হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে ব্যতিক্রম একটি প্রদর্শনী। শুক্রবার শুরু হওয়া প্রদর্শনী ২৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
×