ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অক্ষরের কল্যাণমুখী প্রয়াস

কক্সবাজারে ঝরে পড়া শিশুরা নিরক্ষরমুক্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৫ জুলাই ২০১৭

কক্সবাজারে ঝরে পড়া শিশুরা নিরক্ষরমুক্ত হচ্ছে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ নিরক্ষরমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে প্রত্যয়ী ওরা ক’জন শিক্ষিত তরুণ। তাদের যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তড়িঘড়ি করে তালিকা প্রস্তত করেন এলাকার গরিব, দুস্থ, অসহায়, ঝরে পড়া এবং শ্রমজীবী শিশুদের। এলাকার ছোট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে নিয়মিত পাঠদান শুরু করলে মাত্র ২০ দিনের মধ্যে ৭০ শিশু শিক্ষা নিতে আসে। কোমলমতি ওই শিশুদের অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তুলতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ‘অক্ষর সংগঠনের’ তরুণরা। বর্তমানে কচিকাঁচা ওই শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত শিক্ষাদীক্ষায় পশ্চাৎপদ জনপদ কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও মধ্যম মাইজপাড়া গ্রাম। স্থানীয়রা বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অক্ষরের বদৌলতে শিক্ষায় গ্রামের মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এদিকে নতুন বই-খাতা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা খুদে পড়ুয়ারাও। শিশু আরিফ, মুন্না, মায়মুনা জান্নাত এবং খায়রুল জানায়, খেলা এবং গৃহস্থালি কাজ করে সময় কাটত আগে। এখন তা ভাল লাগে না। ওই সময় সহপাঠীদের বই নিয়ে স্কুলে যেতে দেখলে পড়াশোনা করতে ইচ্ছা জাগত। নতুন পাঠশালায় আসার পর থেকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করছে ওই সব শিশু। কেউ ডাক্তার, কেউবা প্রকৌশলী কিংবা কারও শিক্ষক হওয়ার অদম্য ইচ্ছা জেগে উঠেছে তাদের মনে। এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২১ শিক্ষার্থী পালাক্রমে দুপুর ও রাতে এসব শিশুকে অক্ষরজ্ঞান দান করে থাকেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অক্ষর’-এর সদস্য ওরা সবাই। শিশুদের পাশাপাশি এলাকার নিরক্ষর প্রবীণদেরও অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলার কাজেও হাত দিয়েছেন তারা। অক্ষরের কল্যাণমুখী এ প্রয়াস সফল হলে পুরো গ্রাম একদিন নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত হবে- এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর। মহৎ এ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ওই গ্রামের তারেকুল ইসলাম, মিশকাত, আদেল, তৌহিদুল ইসলাম তৌহিন, রাশেদুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম মনি, কেফায়ত উল্লাহ, জুবাইর ফরহাদ আশিক, আবরারুল হক আবিদ, মহিউদ্দীন ইরসাল, হাসান, সাদেক রহমান, সাইফুল ইসলাম, আব্দু রহমান, ইকবাল আব্দুল্লাহ, জাহেদুল ইসলাম, তারেকুল ইসলাম, আনাস বিন নুর এবং সাইয়ুব খান। অক্ষরের আদেল, আশিক ও তৌহিদ জনকণ্ঠকে জানান, ক’দিন আগে বন্ধুরা বসে নির্জন স্থানে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই দিনের আড্ডার আসর থেকেই একপর্যায়ে তারা এলাকাকে নিরক্ষরমুক্ত করার জন্য মহৎ এ উদ্যোগটি গ্রহণ করেন। নিরক্ষরমুক্ত দেশ গঠনে তাদের দেখাদেখি তরুণ প্রজন্মের অন্য শিক্ষিত যুবারাও এ ধরনের মহৎ কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করবেন- এমনটাই প্রত্যাশা সমাজের শিক্ষিত ও আদর্শবান মানুষের।
×