ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৯ জুলাই ২০১৭

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঋণখেলাপি বাড়ায় মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে গত তিন বছরে সরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার মূলধন যোগান দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও এসব ব্যাংকের মূলধন যোগানে ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে এবার খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চায় রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলো। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আদায় করেছে রূপালী ব্যাংক। আর আদায়ের দিক থেকে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারী ব্যাংকগুলো যাকে-তাকে ঋণ দেয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই ঋণ আর আদায় হয় না। এ কারণে সকল ব্যাংককে অনাদায়ী ও খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমকে জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে একাধিকবার এসব ব্যাংকের মূলধন যোগান দিলেও কাক্সিক্ষত খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। গত তিন বছরে সরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার মূলধন যোগান দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও এসব ব্যাংকের মূলধন যোগানে ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ঋণ বিতরণের আগে ভালভাবে যাচাই-বাছাই না করলে কোনদিনই খেলাপি ঋণ আদায় হবে না। আর এজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। কারণ রাজনৈতিক কারণ বিবেচনায় দেয়া ঋণই বেশি খেলাপি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত মার্চ শেষে সরকারী খাতের ৮ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঋণ আদায় হয়েছে ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ আদায় করেছে রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকের ৪ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায়ের হার ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আতাউর রহমান প্রধান জনকণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দুর্যোগকালীন দায়িত্ব নেয়ার পরও চেষ্টা করছি খেলাপি ঋণ আদায়ের। ব্যাংকটিতে ভাল অবস্থানে নিতে দেশের সব শাখা অটোমোটেড করা হয়েছে। জুন শেষে আমরা ২০২ কোটি টাকা মুনাফা করেছি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায়ের হার ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ৮৫৩ কোটি টাকার মধ্যে আদায় করেছে ১৮ দশমিক ০৩ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের ৬ হাজার ৮৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায়ের হার ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় করেছে মাত্র ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঋণ আদায় আগের চেয়ে বেড়েছে। আমরা নগদ আদায় হলেই তা আদায় হিসাবে দেখাচ্ছি। জনতা ব্যাংক ৬ হাজার ৫০৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় করেছে মাত্র ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, অনাদায়ী ও খেলাপি ঋণ আদায়ে একমাত্র রূপালী ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য ব্যাংকের অর্জন সন্তোষজনক নয়। ঋণ আদায় জোরদার করতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে সরকারী খাতের চার ব্যাংকে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের শুধু ২০১৬ সালেই সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি খেলাপি হয়েছে জনতা ব্যাংকের। খেলাপি ঋণ বাড়ার তালিকায় এরপরই রয়েছে অগ্রণী, সোনালী ও রূপালী। ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংক চারটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। লোকসান গুনছে ব্যাংক চারটির এমন শাখা বেড়ে হয়েছে ৪৪৬। ব্যাংকগুলো বলছে, আগের পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা ঋণগুলো আদায় করা যাচ্ছে না। বারবার এসব ঋণ বিশেষ সুবিধা দিয়ে নিয়মিত করা হয়, কিন্তু ঠিক রাখা যাচ্ছে না। নতুন করেও অনেকে খেলাপি হয়ে পড়ছে। এছাড়া ঋণখেলাপি, কিন্তু আদালতের আদেশ নিয়ে খেলাপি থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন এমন ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি হিসেবে দেখাতে বলেছে।
×