ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্রেন পরিচালনা করতে চায় ইউনাইটেড গ্রুপ

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৬ জুলাই ২০১৭

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্রেন পরিচালনা করতে চায় ইউনাইটেড গ্রুপ

মশিউর রহমান খান ॥ রেলপথে যাত্রী সেবায় নতুনত্ব আনতে বেসরকারী ভিত্তিতে ট্রেন পরিচালনা করতে আগ্রহী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড গ্রুপ। আধুনিক কোচ ও ইঞ্জিন আমদানির মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকা-জামালপুর রুটে প্রাথমিকভাবে পাঁচ জোড়া (১০টি) ট্রেন পরিচালনা করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজেস এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিটি ট্রেন হবে আন্তঃনগর এবং কোন লোকাল ট্রেন পরিচালনা করা হবে না। রেলওয়ের বর্তমান অবকাঠামোগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে এসব ট্রেন রেলওয়ের বর্তমান নিয়মানুযায়ী সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করবে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ১০০ কিলোমিটার গতিতে যাতে চলতে পারে তার ব্যবস্থাও করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যবস্থাপনায় ট্রেন পরিচালনা করলে বর্তমানের চেয়ে অর্ধেক সময়ে ঢাকা থেকে জামালপুর যাওয়া-আসা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সম্পূর্ণ বেসরকারী ভিত্তিতে ট্রেন পরিচালনা করা যায় কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রেলওয়ে ও ইউনাইটেড গ্রুপের সমন্বয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানো হচ্ছে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ইউনাইটেড গ্রুপ ৮০ কিলোমিটার গতিবেগের বিলাসবহুল ট্রেন সার্ভিস চালু করতে চায়। বর্তমানে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৫ কিলোমিটার বেগে ট্রেন পরিচালনা করা হয়। এসব ট্রেনে উন্নতমানের ইয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম চালু, উন্নতমানের খাবার ব্যবস্থা, টিকেটিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা, আসন ব্যবস্থার মধ্যে ইকোনমিক ও বিজনেস ক্লাস তৈরি করা ও তাদের পৃথক সেবা প্রদান, যাত্রীর অধিকার ও সমস্যাকে অগ্রাধিকার দেয়া, এসব ট্রেনের যাত্রীগণকে প্রতিটি স্টেশনে নির্দিষ্ট স্থানে বসার ব্যবস্থা করা হবে। মোট কথা ট্রেন পরিচালনায় বর্তমান ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে চায় তারা। সূত্র জানায়, প্রায় সকল ট্রেন কমলাপুর থেকে ছাড়লেও বেসরকারী ভিত্তিতে পরিচালিত এসব ট্রেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনকে বেজ স্টেশন করে কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে উভয় পথে পাঁচ জোড়া ট্রেন সার্ভিস চালু করতে চায়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন তেজগাঁও স্টেশন থেকে পরিচালনার জন্য নিজেদের অর্থে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কানাডা থেকে লোকোমোটিভ এবং চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কোচ সংগ্রহের প্রস্তাব দেয়। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, নিরাপদ ও আধুনিক পদ্ধতিতে যাত্রী-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিটি স্টেশনে সাধারণ ও প্রিমিয়ার শ্রেণীর দুই ধরনের যাত্রী বসার জন্য আলাদা কক্ষ তৈরি করা হবে। এজন্য আলাদা যাত্রী শেড ছাড়াও প্লাটফর্ম, যাত্রী পারাপারের জন্য এক্সেলেটর সুবিধা ও রেললাইনের ওপর নিজস্ব ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি ট্রেনে নিজস্ব রোলিং স্টক (লোকোমোটিভ, প্যাসেঞ্জার কোচ অথবা ডেমু সেট) সংগ্রহ করে এসব ট্রেন পরিচালনা করবে। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে ঢাকা টু জামালপুর পর্যন্ত লাইনটি চালু করতে চাইলেও পরবর্তীতে যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী বাহাদুরাবাদ ও জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত রুট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা রেলওয়ের বর্তমান অবকাঠামো যেমন ট্র্যাক, লোকোশেড, ওয়ার্কশপ, সিকলাইন, ওয়াশপিটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করবে। জানা গেছে, প্রতি ট্রেনে উন্নত প্রযুক্তির ২২টি করে কোচ থাকবে। এসব ট্রেন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে চালানোর মাধ্যমে এ রুটে বর্তমানের অর্ধেকেরও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। এছাড়া ২০ শতাংশ স্পেয়ার কোচ ও দুটি ট্রেনের জন্য অতিরিক্ত দুটি স্পেয়ার ইঞ্জিন কেনার প্রস্তাব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রায় সকল ট্রেন পরিচালিত হয়। আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সার্ভিস চালু থাকলেও এই প্রথমবারের মতো বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড গ্রুপ ঢাকা থেকে জামালপুর পর্যন্ত ৫ জোড়া ট্রেন সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচে কোচ, ইঞ্জিন ক্রয় করে ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালনা করতে আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য রাজধানীর এয়ারপোর্ট স্টেশনকে বেইজ করে তারা সকল কার্যক্রম পরিচালিত করতে চায়। প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেন হবে আন্তঃনগর এবং কোন লোকাল ট্রেন এ রুটে পরিচালনা করা হবে না। রেলওয়ের বর্তমান অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে এসব ট্রেন রেলওয়ের বর্তমান নিয়মানুযায়ী সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করবে। বর্তমানে বেসরকারী ভিত্তিতে বিভিন্ন রুটে বেশকিছু ট্রেন পরিচালনা করা হলেও তাদের প্রস্তাবে নিজস্ব উদ্যোগে রেলের অবকাঠামো ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সকল কিছু করতে চায়। এমনকি যাত্রীসেবার জন্য প্রতিটি স্টেশনে আলাদা বসার স্থান হিসেবে পৃথক যাত্রী শেড ছাড়াও প্লাটফর্ম, যাত্রীর রেললাইন পারাপারের জন্য এক্সেলেটর সুবিধা ও রেললাইনের ওপর নিজস্ব ওভারব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন এ বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রস্তাবটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ইউনাইটেড গ্রুপের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটি বর্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়ার পরই উভয় পক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
×