ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে মেয়র অবরুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৪ জুলাই ২০১৭

পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে মেয়র অবরুদ্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৩ জুলাই ॥ নওগাঁ পৌরসভায় ৬১ লাখ টাকার তিনটি কাজের টেন্ডার নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে অন্যদের কাছে শিডিউল বিক্রি করা হয়নি। ফলে বিক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা পৌর মেয়রকে দেড় ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে। জানা গেছে, সোমবার শিডিউল বিক্রির শেষ দিনে বেশ কয়েক ঠিকাদার পৌরসভায় শিডিউল কিনতে গেলে তাদের শিডিউল দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় বঞ্চিত ঠিকাদাররা পৌরসভার সামনে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান নেয়। এদিন দুপুর ২টার দিকে পৌরসভার সামনে ঠিকাদারসহ ৪০-৪৫ যুবককে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা সে সময় শিডিউল কিনতে দেয়াসহ মেয়রের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সেøাগান দিচ্ছিল। পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ পৌরসভা গত ৮ জুন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের উন্নয়ন সহায়তা তহবিল ও রাজস্ব তহবিলের আওতায় ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৬ টাকা প্রস্তাবিত ব্যয়ে তিনটি রাস্তার সংস্কার কাজ, ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা প্রস্তাবিত ব্যয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তা আলোকিত করার জন্য বৈদ্যুতিক দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ ও ৩ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা ব্যয়ে নওগাঁ পৌরসভার গার্বেজ ট্রাক মেরামত বাবদ তিনটি কাজের টেন্ডার আহ্বান করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে এই টেন্ডারের শিডিউল বিক্রির শেষ দিন ছিল সোমবার। মঙ্গলবারের মধ্যে শিডিউল জমা দিতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। শিডিউল না পেয়ে ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, তাঁরা শিডিউল কিনতে চান। অথচ তাঁদের পৌর কর্তৃপক্ষ শিডিউল দিচ্ছে না। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে মেয়র তাদের কাছে শিডিউল বিক্রি করছেন না। মেয়রের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগের এক নেতা টাকা খরচ করে এই কাজ নিয়ে এসেছেন মন্ত্রণালয়ে তদবির করে। তাঁর পছন্দ মতো লোককেই এই কাজ দেয়া হবে। সরকারের উন্নয়ন নীতিমালায় কি এমন কথা উল্লেখ আছে? এমন প্রশ্ন তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। ঠিকাদার সৈকত হায়াত দিপু বলেন, পছন্দের লোককে কাজ পাইয়ে দিতে মেয়র এর আগেও এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আমার কথা হচ্ছে, পছন্দের লোককে এভাবে কাজ দেয়ার নিয়ম থাকলে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার প্রয়োজন কি? ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমি প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। অথচ গত আট বছর ধরে পৌরসভায় কোন কাজ পাইনি। ঘুরে ফিরে দেখা গেছে পৌরসভার কাজ মাত্র দুই-এক ঠিকাদারই পেয়েছে। শুধু এইবারই নয় পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে প্রতিযোগী অন্য ঠিকাদারকে অংশ নিতে দেয়া হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি বিষয়টি নিয়ে আর কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এক নেতা মন্ত্রণালয়ে তদবির করে এই তিনটি কাজ নিয়ে এসেছেন। এসব ক্ষেত্রে যিনি কাজ নিয়ে আসেন তাঁর মতামত নিতে হয়। অন্যান্য ঠিকাদাররাও শিডিউল কিনতে আসেন না বা টেন্ডার জমা দেন না। এইবারও আমরা সমঝোতার (?) মাধ্যমে কাজটি করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু শেষ দিনে এসে এই ঝামেলার সৃষ্টি হলো।’ আওয়ামী লীগের কোন নেতা কাজ নিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
×