ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গত অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ১৪ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৪ জুলাই ২০১৭

গত অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ১৪ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন, তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২১৬ কোটি ১৭ কোটি ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার সমপরিমাণ মূল্যের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ কোটি ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ৮০ টাকা এক ডলার ধরলে টাকার অংকে রেমিটেন্স কমেছে ১৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। দেশে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের বড় উৎস মধ্যপ্রাচ্য। দেশগুলো থেকেও রেমিটেন্সের পরিমাণ কমেছে। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেল বহির্ভূত অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, জনশক্তি রফতানিতে ভাটা ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঈদ উপলক্ষে জুন মাসে প্রবাসীরা ১২১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এটি মে মাসের তুলনায় সামান্য কম। মে মাসে গত অর্থবছরের মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে। রেমিটেন্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুই বছর ধারাবাহিক রেমিটেন্স কমে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ এক হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ছিল। এরপর থেকে প্রতিবছরই প্রবাসী আয় ১৪ হাজার ডলারের ওপরে ছিল। কিন্তু চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হঠাৎ প্রবাসী আয় কমে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। যা গত পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন রেমিটেন্স। এদিকে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ১৪ হাজার ৯৩১ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছিল ১৫ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯১ মিলিয়ন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ২২৪ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪৬১ মিলিয়ন ডলার। রেমিটেন্স কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে একমাত্র রিজার্ভ তথা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে রেমিটেন্স কমছে, এর মধ্যে অন্যতম ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের সুবিধা হলেও রেমিটেন্স ও রফতানিতে প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। অর্থাৎ ইনকাম কমে যাওয়া রেমিটেন্স পাঠানো কমে গেছে। এছাড়াও বড় কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো প্রক্রিয়া কঠিন হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। এজন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং খরচ কমানো পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এ গবর্নর। একই সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার যাতে প্রবাসীদের অনুকূলে থাকে সেদিকে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
×