ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যে কোন সময় আঘাত আসতে পারে

ইউরোপজুড়ে সাইবার হামলায় সতর্ক বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২ জুলাই ২০১৭

ইউরোপজুড়ে সাইবার হামলায় সতর্ক বাংলাদেশ

ফিরোজ মান্না ॥ ইউরোপজুড়ে আবার সাইবার হামলার ঘটনায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ। সাইবার হামলার মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকার কারণেই বাংলাদেশের এ সতর্ক অবস্থান। সম্প্রতি ভারতের একদল হ্যাকার গোষ্ঠী খোদ তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাকড করে দিয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন, যে কোন সময় আর্থিক খাতসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দফতরে সাইবার হামলা হতে পারে। দুই দফা ইউরোপ আমেরিকায় সাইবার হামলায় বহু প্রতিষ্ঠান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও ওই সময় বাংলাদেশ সাইবার হামলার শিকার হয়নি। তবে সাইবার নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে গত মার্চে আন্তর্জাতিক সাইবার সিকিউরিটি সম্মেলনে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। সাইবার জগতকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ নিরাপদ রাখার জন্য গত দুই বছর ধরে বলা হচ্ছে। দেশে যে হারে ইন্টারনেট প্রবাহ বেড়েছেÑ সেই হারে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার বিষয়টি বাড়ানো হয়নি। মন্ত্রণালয় একটি রেসপন্স টিম গঠন করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। নিরাপত্তার জন্য যা কিছু প্রয়োজন এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দ্বিতীয় দফায় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সাইবার আক্রমণের বিষয়ে বিটিআরসি জানিয়েছে, প্রথম দফায় ১৫০টি দেশ সাইবার হামলার শিকার হলেও বাংলাদেশ নিরাপদেই ছিল। ভাল প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। কারণ ততক্ষণে ম্যালওয়্যারটি অনেকটাই চিহিৃত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে সাইবার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম (সার্ট) কাজ করেছে। এবার ইউরোপজুড়ে সাইবার হামলার হামলার ঘটনা নিয়েও বিটিআরসি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সব ওয়েবসাইটের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। যাতে কোনভাবেই ওয়েবসাইটগুলো হ্যাকাররা হ্যাকড করতে না পারে। বিটিআরসির সতর্ক দৃষ্টির কথা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দফতরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। দফতরগুলো যেন তাদের সাইটগুলো ভালভাবে ‘প্রটেকশন’ দেয়। সামগ্রিকভাবে বিটিআরসি সাইবার হামলার বিষয়টি মনিটর করে যাবে। যদিও গত মার্চে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের বলা হয়েছিল সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার জন্য উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা নেয়া হবে। এ জন্য গঠন করা হয় বাংলাদেশ গবর্মেন্ট সাইবার সিকিউরিটি রেসপন্স টিম (বিডিজি সার্ট)। এই টিম গঠন পর্যন্তই রয়ে গেছে। টিমকে গতিশীল করার জন্য কোন কাজ হয়নি। সাইবার নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিডিনগ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির বলেন, দেশে ইন্টারনেট প্রবাহ বেড়েছে যে হারে সেই হারে সাইবার নিরাপত্তা বাড়েনি। সাইবার নিরাপত্তা তৈরি করতে না পারলে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আক্রমণ হলো তা কিছুতেই বাংলাদেশের পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব ছিল না। যদিও বাংলাদেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত কম্পিউটারে র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণ করেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পিসিতে আক্রমণের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্ত অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু পিসি আক্রান্ত হয়েছে। তবে আক্রান্ত পিসির সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। এখানে আসলে বিটিআরসির জোর দিয়ে কিছু বলার নেই। যেখানে সারা দুনিয়ায় ২ লাখের বেশি পিসি আক্রমণের শিকার সেখানে বাংলাদেশে কয়েকটি মাত্র পিসি আক্রান্ত হয়েছে। বলতে গেলে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভাগ্যবান। উন্নত দেশগুলোর সবই প্রায় আক্রান্ত। বাংলাদেশ তো সাইবার ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। এবার ইউরোপে যে হামলা হয়েছে তা গতবারের মতো বিশ্বজুড়ে ঘটেনি। এরপরও বিটিআরসি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে এটা একটা ভাল দিক। তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা মনে করেন, গোটা বিশ্বই এখন সাইবার ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার ঘটনাটি কত বড় ভয়ঙ্কর যে, এটা ভাবাই যায় না। হামলাকারীরা ম্যালওয়্যারটি দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। কেউ যদি এ ম্যালওয়্যারটিতে ক্লিক করে তাহলে তার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে হামলাকারীরা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, স্পেন, ইতালি ও তাইওয়ানের মতো দেশ আক্রমণের শিকার হয়েছে। তাহলে বুঝতে হবে আক্রমণটি কত বড়। দেশের জাতীয় ওয়েব পোর্টালে ২৫ হাজার ওয়েবসাইট রয়েছে। একবার যদি এখানে হামলা ঘটে তাহলে ২৫ হাজার ওয়েবসাইট বিকল হয়ে যাবে। তথ্য চলে যাবে হামলাকারীদের হাতে।
×