ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩শ’ আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তকরণের পথে

বিরোধী দল জাপার মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১ জুলাই ২০১৭

বিরোধী দল জাপার মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্ত করার কাজ চলছে একযোগে। পাশাপাশি ইশতেহারের কাজও চলমান। দলীয় দায়িত্বশীল নেতাদের তৈরি তালিকা ধরে বিভিন্ন বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রার্থীকে ডেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ। জেলা নেতারাও কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকা পাঠিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। জোট শরিকদেরও বলা হয়েছে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা দেয়ার জন্য। সব মিলিয়ে আগস্ট মাসের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করতে চান এরশাদ। এদিকে, চলতি মাসের মধ্যে প্রাথমিক ইশতেহার ঘোষণা করা হতে পারে। তিনটি বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে এবারের ইশতেহারে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয় জানাতে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের প্রার্থী বাছাই শুরু হয়েছে। কাউকে কাউকে বলছি, পরামর্শ দিচ্ছি। তাছাড়া শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, জেলা নেতাদের তালিকা ধরেই ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। জাপার একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি জেলা নেতাদের যোগ্য প্রার্থীদের নাম দিতে চিঠি পাঠানো হয়। নির্দেশ অনুযায়ী জেলা-উপজেলা নেতারা বৈঠক করে কেন্দ্রে চিঠি পাঠান। কোন কোন জেলায় একই আসনে একাধিক প্রার্থীর নামও রয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা থেকে পাঠানো তালিকা ধরে এরশাদ নিজেই প্রার্থীদের ডেকে কথা বলছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। বলছেন, জাতীয় পার্টির আমলের ভাল দিকগুলো গ্রামে গিয়ে মানুষের কাছে তুলে ধরতে। সে অনুযায়ী কিছুটা কাজও শুরু হয়েছে। মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে। যদিও সম্মিলিত জাতীয় জোট থাকায় শরিকদের বিষয়টিও মাথায় রাখছেন এরশাদ। এ কারণে সরাসরি মনোনয়ন চূড়ান্ত ও নাম ঘোষণা করা থেকে বিরত রয়েছেন তিনি। গত বছরের ১ অক্টোবর সিলেটে শাহজালাল (রহ)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করে জাপা চেয়ারম্যান। এ সময় তার সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের নির্বাচিত সাংসদসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি সিলেটে এক জনসভায় ওই এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা না করলেও তাদের মঞ্চে রেখেছিলেন। এরপর তিনি রংপুর, রাজশাহী, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় সফর করেন। কথা বলেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, প্রার্থী সঙ্কট থাকলেও দলের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করতে চান এরশাদ। জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের থেকে নাম নিয়েছেন। আমরা যারা জেলার দায়িত্বে ছিলাম, তালিকা করে তাকে দিয়েছি। এখন মনোনয়নের বিষয়টি তিনিই দেখবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডেকে নির্বাচনের আউটলাইন বাতলে দিচ্ছেন এরশাদ। এ প্রসঙ্গে জাপা প্রধান এরশাদ বললেন, ‘জাপা নির্বাচন করবে জোটগতভাবে। এ কারণে জোটের সঙ্গে বৈঠক করেই মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।’ দলের অন্তত পাঁচজন প্রেসিডিয়ামের সদস্য ও একাধিক যুগ্ম-মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন্ জোটে গিয়ে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে যোগ্য প্রার্থী ঠিক করে তালিকা চূড়ান্ত হবে নির্বাচনের অনেকটা আগেভাগেই। তালিকা নিয়ে বড় কোন দলের সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়া বা আসনের দরকষাকষি হবে। যদিও এরশাদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বারবারই বলে আসছেন একক ও তার দলের নেতৃত্বে গঠিত জোট নিয়ে নির্বাচন করার। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই-এ কথাও বলেন বারবার মত পাল্টানো নেতা এরশাদ নিজেই। শেষ পর্যন্ত তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা সময়ই বলবে। তৈরি হচ্ছে ইশতেহার দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এরশাদের নির্দেশে দলের ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। এজন্য একটি পৃথক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও কয়েকজন বুদ্ধিজীবীও রয়েছেন এ কমিটিতে। ইশতেহার কমিটির সঙ্গে যুক্ত এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিপাদ্য থাকবে তিনটি বিষয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থার পদ্ধতির সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন। আমরা ক্ষমতায় গেলে এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করব। এছাড়া জনকল্যাণমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর বিষয়গুলো ইশতেহারে প্রাধান্য পাবে। জাপা সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে আগে ইশতেহার ঘোষণা করার রেওয়াজ থাকলেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। ইশতেহারও ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টিও নিজেদের শক্তির জানান দিতে নির্বাচনের আগেভাগেই ইশতেহার ঘোষণা করতে চায়। জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও প্রেসিডিয়ামের সদস্য, এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ইশতেহারে কী থাকছে সে বিষয়ে তারা সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ। জাপা সূত্র জানায়, নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনেই প্রার্থী প্রস্তুত রাখছে জাপা। এক্ষেত্রে জোটের শরিক দলগুলোকে মাথাপিছু দুই থেকে তিনটি আসনে সমর্থন দেয়ার চিন্তা আছে দলটির। এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের বেশিরভাগ দলই অনিবন্ধিত। জাপা ও ইসলামী ফ্রন্ট ছাড়া বাকিদের সংগঠনের পাশাপাশি কোন জনভিত্তি নেই। এমনকি রাজনৈতিক কার্যালয়ও নেই বেশিরভাগ দলের। তাই বর্তমানে রাজনীতির মাঠে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করলেও শরিক দলগুলোর জনসমর্থন না থাকায় এর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে জাতীয় পার্টি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। ইতোমধ্যে শতভাগ প্রার্থী পাওয়া গেছে। সহসাই দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নয় বছরের শাসনামল মানুষের কাছে এখনও গ্রহণযোগ্য। তাই ইশতেহারে দলের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে, দেশবাসী বিশ্বাস করে ক্ষমতায় গেলে জাপা সবকিছুই বাস্তবায়ন করবে। জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ঈদের পর জাতীয় পার্টি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে। এবারের জাপার ইশতেহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ আইন প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। এছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ ক্ষমতায় গেলে মানুষের কল্যাণে যা যা করা প্রয়োজন সে বিষয় মাথায় রেখেই ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে। বাবলা আরও বলেন, পল্লীবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি সম্মিলিত জাতীয় জোট গঠন করেছে। এ জোটের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। নির্বাচনের আগে সময়ের দাবিতে আমরা বড় কোন দলের সঙ্গে ঐক্য করেও নির্বাচনে যেতে পারি। তবে যে দলের সঙ্গেই জোট করি না কেন, ওই দলকে হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
×