ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনিশিয়ানরা ফোন সচল রাখতে কাঁধে মই আর ঝুলিতে সেট নিয়ে ঘোরেন

ল্যান্ডফোনের দিন শেষ-বিটিসিএল এখন লাইফ সাপোর্টে!

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৯ জুন ২০১৭

ল্যান্ডফোনের দিন শেষ-বিটিসিএল এখন লাইফ সাপোর্টে!

সমুদ্র হক ॥ ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম...’ সত্তরের দশকের জনপ্রিয় গানটি অনেক কণ্ঠশিল্পী গেয়েছেন। এই গানের রচয়িতা প্রিয়ার বিরহী মনের ভাবনা তুলে এনেছিলেন। তার সুদূরপ্রসারী ভাবনা একবিংশ শতকে প্রায় বাস্তবে রূপ নিয়েছে। টরেটক্কার টেলিগ্রাম সেই কবেই বিদায় নিয়েছে। প্রজন্ম টেলিগ্রামের বর্ণনা শুনে হাসে। সমাজজীবনের চিঠি লেখার দিন হারিয়েছে। পিয়ন আর সুমধুর সুরের হাঁক দেয় না ‘চিঠি আছে চিঠি...’। আশির দশকের প্রথমভাগেও ল্যান্ড বা ফিক্সড টেলিফোনের কি না কদর। এখন সেই কদর হারিয়েছে। টেলিফোন সচল ও ঠিকঠাক রাখতে টেকনিশিয়ানরা কাঁধে মই, ঝুলিতে টেলিফোন সেট নিয়ে শহরের পথে ঘুরে বেড়ায়। ঘরে ল্যান্ড টেলিফোন রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। কি পরিবর্তন। ভাবা যায়। নিকট অতীতে শহরের পাড়া-মহল্লার কোন বাড়িতে টেলিফোন থাকলে বাড়ির কর্তা ও সদস্য পড়শীর সামাজিক যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করতেন। বাইরে থেকে ফোনে আসা আনন্দের খবর, বেদনার খবর উৎকণ্ঠা জাগানো ও কমানোর খবর আসত ওই এক টেলিফোনে। পড়শীকে ডেকে দিতে হতো। তৎকালীন টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ (টিএ্যান্ডটি) বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড (বিটিসিএল) অফিসে গিয়ে বাড়িতে একটি টেলিফোন সংযোগের জন্য কতই না ধর্ণা দিতে হতো। ইলেক্ট্র-মেকানিক্যাল এ্যানালগ টেলিফোনের জামানত ১০ হাজার টাকা, ডিজিটালের জামানত ২০ হাজার টাকা। ঘরে টেলিফোন প্রাপ্তি ছিল সোনার হরিণ। সেদিনের টেলিফোনে কথা বলতে দূরত্বভেদে প্রতি মিনিটের জন্য গুনতে হতো ২৫ থেকে ৫০ টাকা। এক জেলা থেকে আরেক জেলার কথা বলার ট্রাঙ্ক-কল সকালে বুক করলে কখনও রাতেও সংযোগ মিলত। বৈদেশিক কলের জন্য পাবলিক কল অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। গুনতে হতো কয়েক শ’ টাকা। আজ সেই টেলিফোনের কি বেহাল অবস্থা। পারতপক্ষে কেউ বাড়ির ল্যান্ড টেলিফোনে কথা বলতে চায় না। শহর-নগর-মহানগরের অনেকের বাড়ির ল্যান্ড টেলিফোন সারেন্ডার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বগুড়ার কয়েক প্রাক্তন গ্রাহক বললেন, এখন বাড়ির সকল সদস্যের হাতে স্মার্টফোন। ল্যান্ড টেলিফোন রাখাই বাড়তি খরচ। প্রতিমাসে সেট ভাড়া দিতে হয় ১শ’২০ টাকা। তার সঙ্গে যোগ ভ্যাট। ল্যান্ডফোনের আরেক যন্ত্রণা হঠাৎই ইউনিট শেষ হওয়া। সুইচ রুম থেকে ইউনিট ভরে নিতে হয়। ভিন্নমত পোষণ করলেন কয়েকজন। তাদের কথা- ল্যান্ডফোনে যত স্বচ্ছন্দে কথা বলা যায় সেলফোনে তা হয় না। সেলফোনে অনেক কথা বোঝাও যায় না। সেলফোনে কথা বলার সময় যে রেডিয়েশন আসে তা ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে ল্যান্ডফোনে কথা বলা স্বাস্থ্যসম্মত। বিটিসিএলের অফিসগুলো দেখা যায় কতদিন ঘরদোর পরিষ্কার হয়নি। বারান্দায় ধুলার স্তর। কোথাও শ্যাওলা। অপারেটরদের অলস সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে। প্রকৌশলীগণের তেমন কাজ নেই। শুধু মেনটেন্যান্স। অফিসে বেশিক্ষণ থাকতেও হয় না। একজন কর্মকর্তা পত্রিকায় নাম না ছাপানোর অনুরোধ জানিয়ে বললেন, বিটিসিএলের রাজস্ব অনেক কমেছে। কলরেট কমানোর পরও আউট গোয়িং কলের সংখ্যা বাড়ছে না। সরকারী, আধাসরকারী অফিসেত ল্যান্ড টেলিফোনের যেটুকু ব্যবহার তা সরকারী প্রয়োজনের চেয়ে ব্যক্তিগত ফোনই বেশি। ওসব ল্যান্ডফোন থেকে কল বেশি যায় মোবাইল ফোনে। সরকারী অফিসের ফোনের বহু বিল বকেয়া পড়ে আছে। কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
×