এমদাদুল হক তুহিন ॥ দেখতে অনেকটা আনারসের মতো। সবুজ ফলটির বাইরের অংশে কাঁটা কাঁটা। নাম তার ‘টক আতা’। আকারে কাঁঠালের চেয়ে ছোট। কোষগুলো কাঁঠালের মতো। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি উপকারীও। তবে এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধী। ব্যতিক্রমী গুণসম্পন্ন ‘ফিউচার ফ্রুট’ খ্যাত ফলটি দেখে অনেকে যেমন অবাক হচ্ছেন, তেমনি এর গুণ শুনে হচ্ছেন বিস্মিত। খামারবাড়ির আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়ামের খোলা প্রাঙ্গণের জাতীয় ফল প্রদর্শনী-২০১৭’তে এমন বাহারি ফলের পসরা দেখে মুগ্ধ নগরবাসী। ‘টক আতা’ ছাড়াও অপ্রচলিত ফলগুলোর মধ্যে আছেÑ আশফল, ডে-ফল, ডেওয়া, তৈকর, জংলী বাদাম, কাঠ বাদাম, বিলাতি গাব, রক মেলন, কদবেল, ক্ষুদিজাম, সাতকরা, কেওড়া, সাফেদা ও ডুমুর। পূর্বে নাম জানা হয়নি এমন ফলেরও কমতি নেই। মুগ্ধ নয়নে তা দেখছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। নানা শ্রেণী পেশার মানুষে উপচেপড়া ভিড়ে কোন কোন স্টলে বিক্রিও বেশ। কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত তিন দিনের এ মেলা শেষ হবে আজ। খোলা থাকবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
মেলা ঘুরে দেখা দেখা গেছে, আমের ভর মৌসুমের এ সময়টিতে মেলায় স্থান পেয়েছে অঞ্চলভিত্তিক আমের একাধিক দোকান। রাজশাহীর আম ছাড়াও নওগাঁ ও খাগড়াছড়ির আম পাওয়া যাচ্ছে। ৬৮ জাতের আমের মধ্যে কোন কোন স্টলে রফতানিযোগ্য আমও রয়েছে। সতেজ ও সম্পূর্ণ অর্গানিক, কোন কোন আমের ওজন ৩ কেজিরও বেশি। আর ৬০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আম। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টলে দেখা গেল অতিকায় ব্রুনাই কিং, পালমার, কলা আকৃতির বানানা আম, গৌড়মতী, কোহিতুর, কালাপাহাড়, সুবর্ণরেখা কিংবা সীতাভোগের মতো অপ্রচলিত জাতের আম। দর্শনার্থীদের মতে, তারা এমন আম পূর্বে যেমন দেখেননি; তেমনি শুনেনি এসব আমের নামও!
মেলায় প্রথম বারের মতো এসেছেন সাতরাস্তার বাসিন্দা কামরান। তিনি বলেন, এখানে এমন অনেক ফল আছে যা আগে দেখিনি। আবার ছোট সময় দেখেছি, কিন্তু দীর্ঘ সময় দেখা হয়নি; এমন ফল আবারও দেখতে পেলাম। হলিক্রস স্কুলের শিক্ষার্থী স্বর্ণা এসেছেন মায়ের সঙ্গে। স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন। জনকণ্ঠকে এই তরুণী বলেন, আম-জাম-কাঁঠাল-লিচু বলতেই দেশি ফল বুঝতাম। কিন্তু এখানে জামের মতো ক্ষুদিজামও দেখছি। কিন্তু জানি না এটা কিভাবে খেতে হয়! আবার কেনাও যাচ্ছে না। কেবল দেখতেই পাচ্ছি। শুধু ক্ষুদিজাম নয়, আরও অনেক। এই যেমনÑ জাবাটিকা, আশফল, সাতকারা ও তৈকর!
অপ্রচলিত কয়েকটি ফল সম্পর্কে জানতে কথা হয় বছরব্যাপী ফল উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. মেহেদি মাসুদের সঙ্গে। ‘টক আতা’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক। দেশে ভবিষ্যতে এর ব্যাপক প্রসার ঘটবে। রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের ফলের মার্কেটে ফলটি পাওয়া যাবে। দাম পড়বে ৫০০ টাকা কেজি। সম্প্রসারণের স্টলে এটি কেবল প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। কথা বলতে বলতে জানা গেল, আশফল অনেকটা লিচুর মতো। লিচু শেষ হওয়ার এক মাস পর এটি পাকতে শুরু করে। আর তৈকর সিলেট অঞ্চলে খুব সমাদৃত। আলুর মতো ছোট ছোট করে মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করলে তা খুবই সুস্বাদু হয়। তৈকর দেশের বাইরে যুক্তরাজ্যে রফতানি হয়। মাঝারি আকারের এক একটি তৈকরের দাম ১০০ টাকা। ক্ষুদিজাম প্রসঙ্গে জানতে গিয়ে জানা গেল, জাম শেষ হলেই শুরু হয় এর মৌসুম। চলে ২ মাস পর্যন্ত। এটি আয়রন ও ক্যালসিময়াম সমৃদ্ধ। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদিজাম কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর প্রিয় ফলের একটি।
হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের স্টলে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের আম বিদেশে রফতানি হয়। সম্পূর্ণ এক্সপোর্ট কোয়ালিটির। তাই দাম বেশি। তিনি জানান, তাদের স্টলে প্রতি কেজি নাগ ফজলি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, আর ল্যাংড়ার দাম পড়ছে ৯৫ টাকা। এছাড়া মেলায় পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ে উৎপাদিত আমও। দোকানিদের ভাষ্যমতে, পাকা আমের রং সাধারণত হলুদ হলেও খাগড়াছড়ির আমের ভেতরের অংশ খুবই লাল। আর খেতে খুবই মিষ্টি। পাহাড়ী আমের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলতে এটিই। স্টলগুলোতে আম ছাড়াও পাহাড়ী আনারস ও পেপের দেখাও মিলছে। মেলায় প্রচলিত ফলের বাইরে করমচা, লটকন, গাব, অড়বরই, পার্সিমন, টিসাফল, এ্যাভোকোডা ও তুঁতফল নামের ফলও চোখে পড়বে। কাউফল সম্পর্কে জানতে গিয়ে জানা গেলÑ এটি বরিশাল অঞ্চলের তরুণীদের খুবই প্রিয়। টকজাতীয় এ ফলটি অনেকটা তেঁতুলের মতো!
সামগ্রিক প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক মোঃ কুদরত-ই-গনী জনকণ্ঠকে বলেন, মেলায় দর্শনার্থীদের অভাবনীয় সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এসেছে। একই সঙ্গে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষতো আছেই। আর বিক্রির দিকে থেকে আমই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপ্রচলিত ফলগুলো আগ্রহভরে দেখেছে দর্শনার্থীরা।
জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে মুগ্ধ রাজধানীবাসী
‘টক আতা’, আশফল...অপ্রচলিত বাহারি ফলের পসরা
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: