ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-পাকিস্তান শিরোপা লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৮ জুন ২০১৭

ভারত-পাকিস্তান শিরোপা লড়াই আজ

লন্ডনের কেনিংটন ওভাল স্টেডিয়ামে দুই দলের অধিনায়ক শিরোপা হাতে ছবি তুলছেন। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের মুখে সে কি হাসি। কিন্তু এ হাসি আজ ‘ঐতিহাসিক’ ফাইনাল ম্যাচটি শেষ হতেই যে কোন একজনের মুখে শোভা পাবে। আরেকজনের মুখখানি মলিন হয়ে যাবে শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার কষ্টে। এক অধিনায়ক শিরোপা হাতে উল্লাস করবেন। আরেকজন, তাকিয়ে থেকে মনে মনে হয়ত ভাববেন ইতিহাস রচনা করার ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলাম না। কার হাতে শোভা পাবে সেই শিরোপা? বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হয়ে ম্যাচটা শেষ হতেই সেই প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে। সেই সঙ্গে ১৮ দিনের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরের মহাযজ্ঞেরও পরিসমাপ্তি ঘটবে। যে টুর্নামেন্টটি ১ জুন শুরু হয়েছিল। তার পর্দা নামবে। ভারত অধিনায়ক কোহলি এখন সংবাদ সম্মেলনগুলোতে সবসময় একটু রক্ষণাত্মক থাকেন। ম্যাচের আগে যেন কোনভাবেই তার মুখে স্বস্তি কিংবা শান্তির ছোঁয়া মিলে না। গম্ভীর হয়ে থাকেন। সঙ্গে প্রতিপক্ষকে এমন সমীহ করেন, শ্রদ্ধা দেখান; যেন তারাই দুর্বল দল। প্রতিপক্ষ খুব শক্তিশালী। শনিবার ফাইনাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও যেমন এমনভাবে পাকিস্তানকে নিয়ে কথাগুলো বললেন, যেন পাকিস্তানই শিরোপা জিততে চলেছে। তার কথার সারমর্ম হলো এমন, ‘পাকিস্তানকে প্রথম ম্যাচ হারানোর পর ওরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যেভাবে ফাইনালে এসেছে, তাদের কোনভাবেই হাল্কা করে দেখার উপায় নেই। তারা শক্তিশালী দল। তাদের কয়েকজন পারফর্মার আছে। যারা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। এমনকি ম্যাচ জেতাতেও পারে।’ সঙ্গে এটাও যোগ করলেন, ‘ফাইনাল ম্যাচ। জেতার চিন্তা করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।’ পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও বিনয়ী, ‘ভারত শক্তিশালী দল। দলটি ব্যালান্সড। তবে আমরা তাদের নিয়ে নয়, নিজেদের নিয়েই ভাবছি। যদি সবাই মিলে ভাল খেলতে পারি তাহলে ভাল কিছু হওয়া সম্ভব। শিরোপা জিততে চাই।’ ফাইনাল ম্যাচে কী আর শিরোপা না জেতার লক্ষ্যে খেলতে নামার কোন অপশন আছে? কোন দলেরই নেই। কিন্তু যে দলই জিতবে তারাই ইতিহাস গড়বে। আইসিসির কোন ওয়ানডে টুর্নামেন্টে যে এরআগে কখনই ভারত ও পাকিস্তান ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয়নি। এবার প্রথমবার হচ্ছে। যে দল জিতবে তারাই ইতিহাসও গড়বে। এমন ম্যাচে দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে ভীষণ চাপ থাকে। দুই দল আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল। দুইদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাই চায় যেভাবেই হোক; যেন তারাই জিতে। দেশের মানুষের চাহিদাও পূরণ করার বিষয় থাকে। ক্রিকেটাররা তা ভাল করেই জানেন এবং বোঝেন। তাইতো চাপ বেশি করে জেঁকে ধরে। দেশের মধ্যে উত্তাপ থাকে। স্টেডিয়ামে থাকে উত্তেজনা। সেই চাপ, ¯œায়ুচাপ জয় করে যে দল ভাল করতে পারে তারাই জিতে। আর আজ যে দল জিতবে, তারাই তো চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। শিরোপা জেতার ক্ষেত্রে অবশ্য ভারত দলটি ‘মাস্টার’। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যদি শিরোপা জেতার ব্যবধান টানা হয় তাহলে ভারতকেই এগিয়ে রাখতে হবে। আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টে ভারতই যে বেশি শিরোপা জিতেছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুইবার (১৯৮৩ ও ২০১১ সালে) এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও দুইবার (২০০২ ও ২০১৩ সালে) চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। দলটি তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে খেলে দুইবার শিরোপা জিতে। একবার খেলে সেমিফাইনাল। সবচেয়ে বড় বিষয় যখন প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতে ভারত, সেটি ইংল্যান্ডের মাটিতেই জিতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিার সেরা দল এখন পর্যন্ত ভারতই। যখন শেষবার আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টে (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে) চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত সেটিও ইংল্যান্ডের মাটিতে জিতে। ইংল্যান্ডের মাটি তাই ভারতের ‘ঘাঁটি’ও বলা চলে। সেই তুলনায় পাকিস্তান একবার ওয়ানডের বিশ্ব আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৯২ সালে। আর কোন আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টে ফাইনালেই খেলতে পারেনি পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এরআগে তিনবার সেমিফাইনালে খেলে। ২০০০ সালে (তখন আইসিসি নকআউট ট্রফি নাম ছিল), ২০০৪ সালে ও ২০০৯ সালে শেষচারে খেলে। এরমধ্যে ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলে পাকিস্তান। তবে হিসেবের বিষয় হচ্ছে পাকিস্তান একবার ফাইনালে খেলে, একবারই জিতে। ফাইনালে খেলা মানেই পাকিস্তানের জেতা, তাহলে কী এমন? যদি তাই হয়, তাহলে তো আজ পাকিস্তানের দিন। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১২৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে পাকিস্তান। ৫২টি হারের বিপরীতে জিতে ৭২টিতে। রেজাল্ট হয়নি ৪টি ম্যাচের। মোট হিসেবে পাকিস্তানের জয়ই বেশি। আবার ক্রিকেট ইতিহাসের সব ফাইনাল ম্যাচ মিলিয়ে পাকিস্তানের জয়ই বেশি। ১০টি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ৭টিতে জিতে পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অবশ্য চার ম্যাচের মধ্যে ২-২ সমতা আছে। কিন্তু ম্যাচটি ফাইনাল। বড় মঞ্চ। এ রকম মঞ্চে ¯œায়ুচাপের খেলায় আবার ভারতই জিতে। পাকিস্তান নুয়ে পড়ে। এশিয়া কাপ কিংবা অন্য কোন তিনজাতি টুর্নামেন্টের বড় মঞ্চ হলে পাকিস্তান জিতে। যেই আইসিসির কোন ইভেন্টের নকআউট পর্বে ভারতের মুখোমুখি হয় তখনই পাকিস্তান হেরে যায়। তাহলে কী সেই নিয়তি আজও হবে? নাকি ইতিহাস পাল্টে যাবে ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচে। যে দলই জিতুক, প্রথমবার আইসিসির ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টে ফাইনাল ম্যাচে পরস্পরের বিপক্ষে খেলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের যে কোন একটি দল ইতিহাস গড়বে। সেই ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচটি আজ হবে।
×