ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নাচ গান আর কথামালায় সেলিনা হোসেনের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৫ জুন ২০১৭

নাচ গান আর কথামালায় সেলিনা হোসেনের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীজুড়ে দিনভর গরমের প্রচ-তা ভেঙ্গে বিকেলে বৃষ্টিছটা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে সহায়তা করল সবাইকে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেকেই তাই হাজির হয়েছেন বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে। উদ্দেশ্য একটাই দেশের প্রতিথযশা কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের ৭০তম জন্মবার্ষিকী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজেদের শামিল হওয়া। কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয় গোটা পরিবেশ। মিলনায়তনজুড়ে মাইকে ধ্বনিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের গান ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’। এ সময় আমন্ত্রিত অতিথিরা মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। বুধবার বিকেলে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কবি আজিজুর রহমান আজিজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, চিত্রশিল্পী হাশেম খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সহযোগিতায় ছিল বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের পর সম্প্রতি চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রাণ হারানোদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর ‘পাগলা হওয়ার বাদল দিনে’ ও ‘নোঙর ছাড়িয়া দে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে শিশু একাডেমির শিক্ষার্থীরা। পরে ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার’ রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। পরে কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের সঙ্গে কেক কেটে আনন্দ উল্লাস করে শিশু একাডেমির শিক্ষার্থীরা। জন্মদিনের অনুভূতি প্রকাশ করে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘৭১ আমার জন্মদিন হিসেবে ৭১ সাল হিসেবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ১৯৭১ সাল আমার জীবনের অস্তিত্বের পরিচয়। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আর কোনদিন হয়ত জন্মদিন পালন করব না। কারণ কোনদিনই আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানও করি না। মানুষ যেন মনে না করে আমি প্রচারমুখী হয়ে পড়েছি। ’৭১ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ও কাল বলেই রাজি হয়েছি। তিনি আরও বলেন, আজ মানুষের যে ভালবাসা পেলাম এটাই লেখকের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। পাঠক লেখকের নমস্য। গানে, নৃত্যে মানুষের যে ভালবাসা পেলামÑ লেখকের জীবনে পাঠকের এ ভালবাসাই একমাত্র কাম্য। সেই ভালবাসা পেয়ে আমি অভিভূত। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আজকের স্মৃতি আমাকে প্ররণা দেবে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, সব কথাসাহিত্যিক সমকালীন জীবনকে উপন্যাসে তুলে আনেন। সেলিনা হোসেনের বাইরেও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তার উপন্যাসে আবহমান বাংলার জীবনযাত্রাকে ধরে রাখার চেষ্টা তাকে উজ্জ্বল করেছে। মনসামঙ্গল, চ-ীমঙ্গল থেকে উপকরণ নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ৫-৭ দশকের আন্দোলন তার উপন্যাসের বিষয়। ইতিহাসের পূর্বাপর ধারাবাহিকতা তুলে এনেছেন উপন্যাসে। বাঙালীর স্বতন্ত্র স্বত্বাকে গর্বের সঙ্গে উপন্যাসে তুলে এনেছেন। সেলিনা হোসেন আরও অনেক দিন সাহিত্য জগতে বিরাজ করুনÑ এটাই প্রত্যাশা। বিশ^জিৎ ঘোষ তার প্রবন্ধে বলেন, সেলিনা হোসেন কথাকার, সংস্কৃতি চিন্তক। বর্তমান সময়ের বাংলা সাহিত্যের ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক সেলিনা হোসেন তার শিল্পভূবনে পাঠককে শুনিয়েছেন তার স্বতন্ত্র স্বত্বার অনুরণন। সমকালীন জীবন ও সংগ্রামকে ধারণ করাই তার উদ্দেশ্য। লেখককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সংসদ সদস্য-কবি কাজী রোজী, কবি মুহাম্মদ সামাদ, বুলবুল মহলানবীশ, সিরাজুল হক খান, শ্যামসুন্দর সিকদার, নাসিমা বেগম, মাসুদুজ্জামান, মনি হায়দার, বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. শাহিদা খাতুন প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সূচনাতেই সেলিনা হোসেনকে নিয়ে ‘সেলিনামঙ্গল’ প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক বিশ^জিৎ ঘোষ। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্বরূপ উত্তরীয় পরিয়ে দেন। কবি শ্বেতা শতাব্দী এষ’র চিকিৎসায় স্টান্ড বাই এ পেয়েটের কর্মসূচী দেশের প্রতিশ্রুতিশীল কবি শ্বেতা শতাব্দী এষ শৈশব থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করা এ কবি ইতোমধ্যেই ‘আয়েশা ফয়েজ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’ ভূষিত হয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত তিনটি কাব্যগ্রন্থে কবি সমসাময়িক নানা অসঙ্গতি, যাপিত জীবন, প্রেম-দ্রোহ ও রাজনীতিকে তুলে ধরেছেন। ২৫ বছর বয়সী এ কলম সৈনিকের লেখনী বর্তমানে স্তব্ধ। তিনি যেন আবারও লিখতে পারেন, মানুষের কল্যাণের জন্য দাঁড়াতে পারেন এ প্রত্যাশায় তাকে সুচিকিৎসার জন্য তার বন্ধু স্বজনসহ কবি-সাহিত্যিকরা তহবিল সংগ্রহের জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৭ জুন তাকে ভারতের ভেলোরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। প্রায় ৩০ লাখ টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই কবিদের সংগঠন ‘স্টান্ড বাই এ পেয়েট’ নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। কবি শ্বেতা শতাব্দী এষ’র চিকিৎসা সহায়তার লক্ষ্যে রির্পোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে বুধবার সকালে সংগঠনের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেনÑ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি ড. সামাদ, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, নাট্য সংগঠক অপু শাহীন, কবি ইকবাল রাশেদীন, আবৃত্তি শিল্পী মেহেদী হাসান, শ্বেতা শতাব্দীর বড় বোন কবি মন্দিরা এষ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন কবি সরদার ফারুক। সংবাদ সম্মেলনে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, কবির মাঝেই স্বদেশ বেঁচে থাকে। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনান্দ দাশসহ অনেক কবির কবিতা তো আমাদের দেশপ্রেম শিখিয়েছে। সুতরাং কবি বাঁচলে দেশে বাঁচবে। কবি শ্বেতা শতাব্দী এষ তেমনই একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কবি। যার লেখনীতে রয়েছে দেশপ্রেমে উদ্ভূত হওয়ার বারতা। এ রকম কবির খুব দরকার এ সঙ্কট মুহূর্তে আমাদের দেশে। কবি সামাদ স্টান্ড বাই এ পেয়েট সংগঠনের এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, আমি তরুণ কবিদের এ উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাই। সরকারের প্রতি সাহায্যের আবেদন রেখে তিনি বলেন, আমরা সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অনুরোধ জানাব তিনি যেন আমাদের এ কবিকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসেন। আমরা চাই একজন কবি বেঁচে থাকুক এবং তিনি আবার লিখুক। নাট্য সংগঠক অপু শাহীন বলেন, আমাদের সংগঠন এথিকের পক্ষ থেকে শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘হাঁড়ি ফাটিবে’ নাটকটি মঞ্চায়ন করব। এর থেকে অর্জিত অর্থ সবই কবি শ্বেতা শতাব্দী এষ’র চিকিৎসার জন্য ব্যয় হবে। অর্থ সংগ্রহের জন্য স্টান্ড বাই পেয়েটের আয়োজনে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বইমেলা, চিত্র প্রদর্শনী, মঞ্চ নাটকের প্রদর্শনী, কবিতা আবৃত্তি, সঙ্গীতায়োজনসহ বিভিন্ন শৈল্পিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে সহায়তা প্রদানের জন্য হিসাব নম্বর-৩৪১২৬৬৩৬ জনতা ব্যাংক লিমিটেড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় অর্থ পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।
×