ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরাদ্দের অজুহাত বন বিভাগের

মাদারীপুরে দুই হাজার বানর চরম খাদ্য সঙ্কটে

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৪ জুন ২০১৭

মাদারীপুরে দুই হাজার বানর চরম খাদ্য সঙ্কটে

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে ॥ দেশের ভাটি অঞ্চল মাদারীপুর এক সময় বন-জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। প্রচুর ফল ফলাদীর গাছ ছিল আনাচে-কানাচে। জীববৈচিত্র্যের জন্য সহায়ক পরিবেশ থাকায় সে সময় মাদারীপুর পৌর এলাকার চরমুগরিয়া বন্দর, কুলপদ্মী, পুরান বাজারসহ আশপাশের এলাকায় ১০ সহস্রাধিক বানর ছিল। দিন দিন ফলজ গাছ হ্রাস পাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে না থাকা এবং খাদ্য সঙ্কটের কারণে জেলার বানরকুল এখন বিলুপ্তের পথে। বর্তমানে চরম খাদ্য সঙ্কটের মধ্যে দুই হাজার বানর কোন মতে টিকে আছে। বানরগুলো রক্ষায় কোন ধরনের পদক্ষেপ না নেয়া হলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে জেলার ঐতিহ্য বানরকুল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চাশের দশকেও মাদারীপুর পৌর এলাকার কুলপদ্মী ও তার আশপাশে বনজঙ্গল ছিল ১০ সহস্রাধিক বানরের অভয়ারণ্য। এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বানরকে দেবতা মনে করে কলা, মোয়া, মুড়ি, চিড়া, বাদাম, বিস্কুট নানা ফলমূল খেতে দিত। ধীরে ধীরে হিন্দু বসতি হ্রাস পাওয়ায় এবং বনজঙ্গল উজাড় হতে থাকায় আস্তে আস্তে বানরগুলো পৌরসভার চরমুগরিয়া বন্দরে থাকতে শুরু করে। তখন বানরগুলোর বসবাসের জন্য জেটিসির মাঠে একটি অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ওইসব এলাকা ধীরে ধীরে দখল হয়ে যাওয়ায় আশ্রয়হীন ও খাদ্য সংকটে পড়ে বানরকুল। বর্তমানে বানরগুলো জেটিসি ও আদমজীসহ বিভিন্ন কোম্পানির পরিত্যক্ত পাট গুদাম, স্কুল-কলেজ, মানুষের বাড়িঘর সানশেড, টিনের চালার নিচে অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে কোন রকমে টিকে আছে। ক্ষুধার তাড়নায় বানরগুলো ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রায়ই বাজারের বিভিন্ন দোকান-পাট ও বাড়িঘরে হামলা করছে। কখনও কখনও পথচারীর হাত থেকে এবং স্কুলগামী শিশুদের হাত থেকে খাবার ও টিফিন বক্স কেড়ে নেয়। বর্তমানে বানরের উৎপাতে সাধারণ মানুষ অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সামাজিক বন বিভাগ ফরিদপুরের তত্ত্বাবধানে এসব বানরের জন্য খাবার সরবরাহ কর্মসূচী চালু থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এই বানরের জন্য খাবারের বরাদ্দ ছিল ১২ লাখ টাকা। সেটি কমতে কমতে গত অর্থবছরে এসে ঠেকেছে ৩ লাখ টাকায়। চলতি বছেরে এ খাবার সরবরাহ কর্মসূচী বন্ধ থাকায় বানরগুলো বর্তমানে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে হানা দেয়ায় অতীষ্ঠ করে তুলছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। চরমুগরিয়া এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মুমন, ইমরান সাগর, অজয় কুন্ড বলেন, ‘বানরকুল পরিবেশের অলংকার ও সম্পদ। এই সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখতে বন বিভাগ ও প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। বানরের খাদ্য কর্মসূচী অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকায় বানরগুলো বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে। ফলে আমাদের জনজীবন অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’ কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বশির আহম্মদ বলেন, খাদ্য সরবরাহ করে এখনই ব্যবস্থা না নিয়ে মাদারীপুরের বানরগুলোর বিলুপ্ত হওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে। সাধ্যমতে এ বানরগুলো টিকিয়ে রাখা উচিত। জেলায় এক সময়ে প্রায় ১০ হাজার বানর থাকলেও তা এখন বিলুপ্ত হতে হতে দুই হাজারে ঠেকেছে। বর্তমানে যে দুই হাজারের মতো আছে আমাদের পরিবেশের স্বার্থে এগুলোকে এখন প্রশাসনের বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। মাদারীপুর সামাজিক বনায়ন, নার্সারি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন সাহা বলেন, ‘সরকারীভাবে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, পেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তখন আমরা বানরদের পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারব। তখন স্থানীয় জনসাধারণের উপর বানরের উৎপাত ও ভোগান্তি কমে আসবে।
×