ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলে ঝড়োহাওয়া সাগর উত্তাল ;###;নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জোয়ারের পানি বাড়ছে, জলোচ্ছ্বাসের আভাস ॥ কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী

নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে ভারি বর্ষণ ॥ চরম ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৩ জুন ২০১৭

নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে ভারি বর্ষণ ॥ চরম ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সারাদেশে শুরু হয়েছে অবিরাম বর্ষণ। রবিবার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টির ধারা। রাত থেকে তা অঝোর ধারায় নামতে থাকে। সোমবার সারাদিনই বৃষ্টির ধারা অব্যাহত ছিল। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে টানা বৃষ্টিপাতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিপর্যয় দেখা দিয়েছে নৌ যোগাযোগের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীরাও পড়েছে চরম বিপদে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৮ মিলিমিটার। এই সময়ে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯৪ মিলিমিটার। এছাড়া সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৮২ মিলিমিটার, ঢাকায় ৩০ মিলিমিটার, চাঁদপুরে ৯৩ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ৫৫ মিলিমিটার, ফেনীতে ৮৪ মিলিমিটার, কক্সবাজারের ৬৮ মিলিমিটার, মাদারীপুরে ৭৯ মিলিমিটার, ও টেকনাফে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাত সাড়ে আটটা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন জানান, নিম্নচাপের কারণে অভ্যন্তরীণ নৌবন্দরগুলোতে দুই নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত রয়েছে। এই সংকেতে ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে বেশি নৌযান চলাচল করতে পারে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল রাত সাড়ে আটটা থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার সদরঘাট থেকে সাড়ে আটটার পর আর কোন লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বলে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ূন কবির জানান। ভারী বর্ষণের কারণে সোমবার রাজধানীবাসীও পড়ে চরম ভোগান্তিতে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। সকাল থেকে অফিসগামী লোকজন সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে পড়ে। কাকভেজা হয়ে অফিসে যেতে হয়েছে। একই অবস্থায় বাসায় ফিরতে হয়েছে তাদের। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি। ঈদ কেনাকাটা ব্যাহত হচ্ছে বৃষ্টির কারণে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কক্সবাজারে ঝড়ো হাওয়া জলোচ্ছ্বাসে ৪০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়েছে লাখ মানুষ। ভোলার তজুমদ্দিনে পাউবোর বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনে ১৪ গ্রাম প্লাবিত হয়ে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকার ফেরিঘাট তলিয়ে যাত্রী দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। টানা বর্ষণে চট্টগ্রামের পটিয়ায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। বৈরী হাওয়া ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে বরগুনার আমতলীতে ৩০ গ্রামসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। নোয়াখালীর হাতিয়ায় নিখোঁজ একজন জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিঝুম দ্বীপ সন্নিকটে মেঘনা নদী থেকে এনসায়েন হোসেন ৩২-এর লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নদীর দুই পাড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রচ- বাতাসে নদী উত্তাল থাকায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে সাময়িক বন্ধ রয়েছে বড় ফেরি চলাচলও। ফেরি পারাপার বন্ধ থাকায় বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে। ফলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের উভয় পাড়ে ঘাটে যানজটে নাকাল হচ্ছে নৌরুটে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে নদীতে প্রচ- বাতাস থাকায় বড় ফেরিগুলো চলাচলে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ সময় লাগছে। এছাড়া ফেরিগুলো ঘাট এলাকায় আসার পরে পন্টুনে নোঙ্গর করতেও সমস্যা হওয়ায় নৌরুটে দুর্ঘটনা এড়াতে বড় ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ছোট ও মাঝারি ছয়টি ফেরি দিয়ে নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়ে তা স্থলভাগে উঠে এসেছে। এর প্রভাবে রবিবার থেকেই ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভোলা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সোমবার দুপুর বারোটায় স্থল নিম্নচাপ আকারে কুমিল্লা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারা জানায়, স্থল নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চারনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের পর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরার এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস বয়ে যেতে পারে বলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এদিকে রবিবার থেকে অবিরাম বর্ষণে রাজধানীর জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। রাজধানীর মিরপুর, বাড্ডা, মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার এলাকাসহ প্রায় সব এলাকার মানুষ দারুণ দুর্ভোগে পড়েছেন। ওইসব এলাকায় রাস্তা কাটার ফলে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বৃষ্টির কারণে জ্যাম প্রকট আকার ধারণ করেছে। কালশী থেকে পূরবী হল পর্যন্ত রাস্তায় পানি জমে গেছে। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় যানজটের নাকাল হতে হয়েছে নগরবাসীর। সকাল থেকে চলতে থাকা যানজট বিকেলে আরও তীব্র আকার ধারণ করে। সময় নিয়ে গন্তব্যে রওনা দিলেও ঠিক সময় পৌঁছাতে পারেনি কেউ। রাজধানীতে সকালের অফিসযাত্রার সময়ের যানজট বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে ব্যাপক আকার ধারণ করে। গুলিস্তান থেকে ফার্মগেট পৌঁছাতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে অফিসগামী লোকদের। বৃষ্টিতে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় পানি জমার কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের। এছাড়া বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমার কারণে শান্তিনগর, রূপসী বাংলার মোড়, মগবাজার ও মৌচাকের রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। এদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দেশের স্থলভাগ এবং উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। ফলে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় ২-৪ ডিগ্রী সে. পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রাও প্রায় (১-২) ডিগ্রী সে. হ্রাস পেতে পারে। সারাদেশে বৃষ্টিপাত ভোলা ॥ তজুমদ্দিন উপজেলায় অতি জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৭ গ্রাম ও মনপুরা উপজেলায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ৭ গ্রামে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ভোলা সদরের রাজাপুরে জেয়ারের পানিতে প্রায় ৫ হাজার মানুষসহ জেলায় অর্ধ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে ২ দিন ধরে দ্বীপজেলা ভোলার ওপর দিয়ে থেমে থেমে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চ জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। এছাড়াও ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা ফেরিঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ধসে গেছে ঘাটের অনেকাংশ। যার ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরিঘাট। মেঘনার পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা ফেরিঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ধসে গেছে ঘাটের অনেকাংশ। পটুয়াখালী ॥ গভীর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। জেলার গোটা উপকূলজুড়ে শুরু হয়েছে ভারী ও হালকা বর্ষণ। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া। বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ উপকূলে তিন নম্বর সর্তক সঙ্কেত দেখানো হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে নদীবেষ্টিত এলাকার মানুষের মধ্য ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কক্সবাজার ॥ ঘূর্ণিঝড় মোরার ছোবল দেয়ার দুই সপ্তাহ না পেরোতেই পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া আরও একটি লঘুচাপের প্রভাবে কক্সবাজারে তলিয়ে গেছে অন্তত ৪০ গ্রাম। ডুবে রয়েছে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ। উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। পূর্ণিমার তিথী থাকাবস্থায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বৃদ্ধিতে জোয়ারের পানিও স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। তা জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হয়ে ডুবে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে একাধিক এলাকায়। এতে বহু মৎস্য ঘের ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরে বোটডুবির ঘটনাও ঘটে। এতে একজন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতির ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে পানিবন্দী হয়ে রয়েছে জেলার অন্তত অর্ধ লাখ বাসিন্দা। পেকুয়া উপজেলার মগনামা কাকপাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম। তীব্র ঝড়ো হাওয়া তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে সম্পূর্ণ ডুবে গেছে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। তলিয়ে গেছে দ্বীপের অধিকাংশ ঘরবাড়ি। দ্বীপের অসহায় ওসব মানুষ স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। পটিয়া ॥ ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় তিন শতাধিক পরিবার পানির নিচে রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপজেলার ভাটিখাইন, ছনহরা ইউনিয়নে। বাইপাসের ঠিকাদারের অবহেলায় শ্রীমাই খালের ভাটিখাইন স্ট্রিল ব্রিজ এলাকায় ১৩ দিনের ব্যবধানে পুনরায় সোমবার সকালে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে। ভাটিখাইন এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বখতেয়ার উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ নেতারা। আমতলী, বরগুনা ॥ বৈরী আবহাওয়া ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সাগর ও পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমতলী ও তালতলী উপকূলীয় অঞ্চলের চর ও নিম্নাঞ্চলসহ ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুইদিন ধরে ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যয় হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। আকাশে প্রচ- মেঘমেলা থাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার সকাল ছয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। মেঘমেলার কারণে এ অঞ্চলে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দুইদিন ধরে বৈরী আবহাওয়া ও ভারী বর্ষণের প্রভাবে সাগর ও পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাগর মোহনা ও পায়রা নদীসংলগ্ন চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমতলীর বালিয়াতলীর বয়াতি বাড়িসংলগ্ন ২০০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে বালিয়াতলী, ঘোপখালী, পশুরবুনিয়া, দক্ষিণ ঘাপখালী ও চরকগাছিয়া এবং তালতলীর তেতুঁলবাড়িয়া নামকস্থানের ১ কিলোমিটার ভাঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে তেতুঁলবাড়িয়া, নলবুনিয়া, আগাপাড়া ও মোয়াপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জানা গেছে, নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ॥ গত দুইদিনের হালকা ও ভারী বর্ষণে ডিএনডির অভ্যন্তরের নিচু এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার শিকার কয়েক লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। ডিএনডির নিচু এলাকার বহু বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিল্প-কারখানা, মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজ, সবজি ক্ষেত ও নার্সারিসহ বিভিন্ন স্থাপনা বর্ষণের পানিতে তলিয়ে আছে। ডিএনডি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ডিএনডিতে এ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জলাবদ্ধতার শিকার লোকজন অভিযোগ করেন। ডিএনডির অভ্যন্তরে এখনও স্থান ভেদে দেড় থেকে দুই ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। শিমরাইলের পাম্প হাউসের ১২৮ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি পাম্প থাকলেও সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দুটি পাম্প চলতে দেখা গেছে। তবে ডিএনডি পাম্প হাউস কর্তৃপক্ষ জানান, পাম্পের মুখে ময়লা-আবর্জনা স্রোতের সঙ্গে এসে পড়ায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। এতে একসঙ্গে চারটি পাম্প চালানো যাচ্ছে না। রূপগঞ্জ ॥ গত দুই দিনের অতিবৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কইডা, ঝিঙ্গে, লাউ, শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ফসলসহ মাছ ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
×