প্রায় দু’বছর হয়ে গেছে। বাবলুর বাবা একটা পেয়ারা গাছ লাগিয়ে ছিলেন বাড়ির একপাশে। বেশ বড়সড় হয়েছে গাছটা। এ বছরই ফুল ধরেছে গাছে। সাদা ফুলে গাছটা ভরে গেছে। বাবলু খুব খুশি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই পেয়ারা ধরল কি-না দেখতে যায় সে। বাবলুর অপেক্ষার দিন যেন আর শেষ হতে চায় না। বেশ কিছুদিন পর গাছে ছোট ছোট পেয়ারা দেখা গেল। তখন যার সঙ্গেই দেখা হয় বাবলু কেবল তার পেয়ারার গল্পই বলে। পেয়ারা বড় হচ্ছে। কয়েকদিন পর বাবলুর বাবা তাকে একটা পেয়ারা পেরে দিল গাছ থেকে। খুব খুশি বাবলু। দারুণ দেখতে পেয়ারাটা। পেয়ারাতে এক কামড় দিতেই বাবলু অবাক! একি, এটা তো লাল পেয়ারা! উপরের রংটা সবুজ আর ভেতরে গোলাপী লাল। পেয়ারাগুলো পেকে গেছে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবলু বড় বড় চোখ করে গাছের নিচটায় তাকিয়ে কি যেন দেখছে। হঠাৎ চিৎকার!
-মা, মা দেখো, গাছের নিচে কতগুলো পেয়ারা পড়ে আছে।
-কিসে যেন অর্ধেক অর্ধেক করে খেয়ে নিয়েছে, দেখো মা তাড়াতাড়ি এসো, আমার পেয়ারা...
বাবলুর চিৎকারে মা দৌড়ে এলো। সব দেখে উপর দিকে তাকালেন। কতগুলো বুলবুলি পাখি কিচিরমিচির করে।
- মা বলল- এই দেখ, বাবলু। বুলবুলি পেয়ারা খেয়েছে। বাবলু ছুটে গেল ঘরের দিকে। ঘর থেকে একটা গুলতি নিয়ে এলো।
-একি করছিস বাবলু! পাখিগুলোর গায়ে লাগলে তো মরে যাবে।
-ওরা আমার পেয়ারা খেয়ে নিচ্ছে মা। আমি এগুলোকে মেরেই ফেলব।
-এমন করে না বাবলু। আমরা তো যা ইচ্ছে হয় তা কিনে খেতে পারি। কিন্তু ওরা কি তা পারে? আর আমরা যদি এমন করি তাহলে ওরা কি খাবে বল তো!
-অনেক খাবার আছে। যা ইচ্ছে হয় খেতে থাকুক। আমার পেয়ারা কেন খাচ্ছে? আমার লাল পেয়ারা... এসব বলে নিচে বসে পড়ল। আর ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগল এবার মা বিরক্ত হয়ে চলে গেল।
বাবলু আজও স্কুলে যেতে চাইছে না। মা তাকে তৈরি করে দিলেও দু’গালে দু’হাত দিয়ে মুখ ভার করে গাছের পাশে বসে রইল। টানতে টানতে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে মা তা আসার পথে আবার ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে দিল। এবার তো একেবারে বাড়াবাড়ি করছে।
মাঝ রাস্তায় বসে পড়ল বাবলু।
-আমায় চিপস্্ কিনে দাও। চকোলেটও চাই।
-গতকালও এত চকোলেট খেয়েছিস বাবলু। এত খেলে দাঁতে পোকা হবে, বাবা। এমন করে না, উঠ।
-না, আমি এমন করব। উঠব না।
-এই, উঠ, উঠ। দেখ, ওদিকে গাড়ি আসছে। তাড়াতাড়ি...
এবার টানতে টানতে খানিকটা রাস্তা এসেই আবার বসে পড়ল। তো মহা মুশকিল হলো। উপায় না পেয়ে চিপস কিনে দিয়ে এবার চলল বাড়ি বাড়ির দিকে। বাড়ি এসে বাবলুকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল মা।
মা ভাবছে বাবলু ঘুমিয়ে পড়েছে। আসলে বাবলু ঘুমায়নি। ভান করছে ঘুমের। মা উঠে যাবার কিছুক্ষণ পর বাবলুও উঠে গেল। চুপি চুপি গুলতি নিয়ে ওই পেয়ারা গাছটার কাছে গেল। হাতে কতগুলো ছোট ইটের টুকরা। কাঁপা কাঁপা হাতে গুলতি দিয়ে একটা ইটের টুকরা ছুড়ে দিল পাখিদের দিকে। পাখিদের গায়ে হয়ত লাগেনি। কিচিরমিচির করতে করতে ভয় পেয়ে সব পাখি উড়ে পালাল।
ফিকফিক করে হাসছে বাবলু।
-কি মজা, ভয় পেয়েছে!
ওদিকে মা তো টের পেয়ে গেল। দৌড়ে এলো মা।
-একি, বাবলু তুই ঘুমাসনি? তোকে যে আমি ঘুম পাড়িয়ে এলাম! হাতে গুলতি দেখে এবার মা খুব রেগে গেল।
-বাঁদড় ছেলে কোথাকার! দেখ, আজ তোকে কি করি! পিঠে পড়ল দু’ঘা। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে বাবলু কাঁদতে লাগল, মা তাকে টেনে নিয়ে গেল বিছানায়। কাঁদতে কাঁদতে বাবলু এবার ঘুমিয়ে পড়ল।
সন্ধ্যায় বাবলুকে পড়াতে এলেন বাবলুর স্যার।
- বলল, কি ব্যাপার বাবলু, মুখটা ওমন ভার করে আছো কেন?
-বাবলু বলতে যাচ্ছে এমন সময় মা এসে সামনে দাঁড়ায়। বাবলুকে নিয়ে অনেক অভিযোগ। বাবলু চুপ করে গেল স্যার বাবলুকে খুব আদর করে। বাবলুর দুষ্টুমিগুলো নাকি স্যারকে তাঁর ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। বাবলুও স্যারকে খুব পছন্দ করে। বাবলু ফিসফিস করে স্যারকে বলল- স্যার, পরে বলব। এখন মা...
পরের দিন সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাবলু উঠে সে চুপি চুপি ঘরের বাইরে এসে একটা ছোট্ট ইটের টুকরা নিয়ে পাখিদের দিকে ছুড়ে দিল। পাখিগুলো কিচিরমিচির করতে করতে উড়ে চলে গেল। কিন্তু একি! সামনে ওটা কি দেখা যাচ্ছে? বাবলু এগিয়ে গেল। বড় বড় চোখ করে নিচে তাকিয়ে থাকল। একটা পাখির পায়ে খুব আঘাত লেগেছে। হ্যাঁ, ওটা যন্ত্রণায় কেমন যেন ছটফট করছে। ইটের ধারালো অংশ বোধহয় লেগেছে। পায়ের কাছে একটু রক্ত। বাবলু তার মাকে ডেকে নিয়ে এলো। বাবলু চুপচাপ বসে আছে। মা হাতে করে কি যেন একটা নিয়ে এসে পাখিটাকে আস্তে করে আগলে পায়ে দিয়ে দিল। বাবলু তার মাকে জিজ্ঞেস করল,
-এটা কি মা?
-পাখির ওষুধ। বলতে বলতে মা পাখিটার পায়ে ওষুধ লাগাচ্ছে। বাবলুর হয়ত খুব খারাপ লাগছে। সে জন্যই ও চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ আস্তে আস্তে কি যেন বলে যাচ্ছে- আমি আর কখনও তোমাদের তাড়াব না। আর কখনও আমি এমন করব না। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও।
অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
শীর্ষ সংবাদ: