ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্বশুরবাড়ির স্বীকৃতির দাবিতে দীপ্তি অনড়

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৯ জুন ২০১৭

শ্বশুরবাড়ির স্বীকৃতির দাবিতে দীপ্তি অনড়

হাসিব রহমান, লালমোহন থেকে ফিরে ॥ দীপ্তি রানী দাস। তার হাতে শাখা। মাথায় সিঁদুর। অন্তঃসত্ত্বা এ গৃহবধূর চোখেমুখে চরম দুশ্চিন্তা আর হতাশার ছাপ। তার এখন আশ্রয়স্থল লালমোহন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রনজয় কুমার দাসের বাড়ি। প্রতিদিন শত শত উৎসুক মানুষ ওই বাড়ির সামনে ভিড় করছে। তার নিরাপত্তায় লালমোহন থানার ২ জন পুলিশ ওই বাড়ি সামনে নিয়োজিত রয়েছে। গত রবিবার দীপ্তি রানী তার ও সন্তানের স্বীকৃতির জন্য শ্বশুর লালমোহন পৌর শহরের আখড়াবাড়িসংলগ্ন বাজারের ব্যবসায়ী কালিপদ দাসের বাসার দরজায় অনশন শুরু করলে রাত ১২টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামসুল আরিফ ও ওসি হুমায়ুন কবির উদ্ধার করে নিরাপত্তার জন্য ওই কাউন্সিলরের জিম্মায় রাখেন। এবং সামাজিকভাবে এ সমস্যা সমাধান করে শ্বশুরবাড়িতে তুলে দেয়ার জন্য তাকে আশ্বাস দিলেও বুধবার পর্যন্ত সমাধান হয়নি। এর আগে দীপ্তি রানী তার অধিকার পেতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের কাছেও ফোনে তার স্বীকৃতির জন্য করুন আকুতি জানান। এদিকে ওই গৃহবধূকে তাড়াতে তার নামে ফেসবুকে বিভ্রান্তিমূলক নানা ছবি তথ্য প্রচার করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীপ্তি রানী জানান, তিনি গত ১৭ মে লালমোহনে তার স্বামীর বাড়ির খোঁজে আসেন। এখানে এসে তার বান্ধবীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। তার মা-বাবা বেঁচে আছে কি নেই তা জানেন না। ৩ দিন বয়সে তাকে গাজীপুর লাভলি ও বাছেদ দম্পত্তির কাছে তুলে দেয়া হয়। তাদের আত্মীয় টঙ্গীতে আমিনুল ও জুলেখা দম্পত্তির কাছে তিনি বিনা নামে বড় হয়েছেন। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত তার পড়াশুনা। তিন বছর আগে তার আসল পরিচয় জানতে পারে। তার বাবার নাম প্রদীপ কৃষ্ণ দাস ও মায়ের নাম লিজা রানী দাস। তার বাড়ি ভোলাতেই শুধু এটুকু জানে। কিন্তু কোথায় তা জানেন না। জন্ম পরিচয় পাওয়ার পর থেকে তাদের সঙ্গেও আর সম্পর্ক নেই। এমনকি যোগাযোগ মোবাইল নম্বর কিছুই নেই। তারপর গাজীপুরে গামেন্টেসে চাকরি নেন। গার্মেন্টেসে চাকরি করতে গিয়ে কালিপদ দাসের ছেলে উজ্জল চন্দ্র দাসের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে গত বছর দীপ্তির অতীত সব জেনেই উজ্জল ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে জয়দেবপুর শিব মন্দিরে তাকে বিয়ে করে। তাদের বিয়ে, দাম্পত্য জীবনের একাধিক ছবি দেখিয়ে দীপ্তি রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তারা গাজীপুর হোতাপাড়া বাসায় প্রায় এক বছর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ভাড়া ছিলেন। কিন্তু তার স্বামী উজ্জল তাকে তার মা-বাবার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে দিতো না। শুরুতে তাদের দাম্পত্য জীবন ভাল চললেও পরবর্তী সময়ে প্রথম অন্তঃসত্ত্বা হলে সেই বা””া নষ্ট করে দেন। এরপর আবার অন্তঃসত্ত্বা হলে তিনি তার স্বামীর বাড়িতে যেতে চায়। তখন স্বামী তাকে ঠিকানা দেন। সেই ঠিকানা অনুযায়ী তিনি ভোলার মনিরামে তার বান্ধবীর বাড়ি আশ্রয় নেন। সেখানে থেকেই স্বামীর বাড়ির খোঁজে বের হন। দীপ্তি জানান, স্বামীর বাড়ি খুঁজে পেলেও তিনি ঘরে উঠতে পারছেন না। তাকে এলাকার প্রভাবশালী অধ্যক্ষ হুমকি দিচ্ছেন। তার ছেলের সঙ্গে ওই উজ্জলের বাবা ব্যবসা করেন। তারা টাকা নিয়ে দীপ্তিকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু তার স্বামীর বাড়ির স্বীকৃতি ছাড়া যাবেন না। এর জন্য যদি তার মৃত্যু হয় তার জন্য তারা দায়ী হবে বলেও উল্লেখ করেন। আরও জানা যায়, উজ্জল ইতোপূর্বে এক নার্সকে বিয়ে করে। কিন্তু তার প্রভাবশালী পরিবার মোটা অঙ্কে টাকার বিনিময়ে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয়। এদিকে উজ্জল তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপন করে আছেন। সরেজমিনে উজ্জলের বাড়ি সাংবাদিকরা গেলে তার মা বিয়ের কথা স্বীকার করেন। তার মামা উজ্জল বলেন, আমরা বিয়ের কথা জানতাম না। এখন শুনছি। তার কোন অভিভাবক আমাদের কাছে আসেনি। ইউএনও যে ব্যবস্থা নেবেন তা আমরা মেনে নেব।
×