ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলেজে ভর্তি আবেদনের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ আজ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৫ জুন ২০১৭

কলেজে ভর্তি আবেদনের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ আজ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আবেদনকারী ১৩ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর প্রথম মেধাতালিকা বা ফল প্রকাশ হচ্ছে আজ। দেশের ৯ হাজার ৮৩টি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কে কোথায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হলো তা জানা যাবে আজই। শিক্ষার্থীরা আবেদনে যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছেন সেখানেই এসএমএস পাঠিয়ে সিকিউরিটি কোডসহ জানানো হবে ফল। কলেজ ভর্তির সংশ্লিষ্টওয়েবসাইটেও (িি.িীরপষধংংধফসরংংরড়হ.মড়া.নফ) পাওয়া যাবে ভর্তির ফল। প্রথম ফলে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের আগামীকাল ৬ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ১৮৫ টাকা ফি’র বিনিময়ে কলেজ নিশ্চয়ন করতে হবে। গত ৯ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত চলে অনলাইন ও মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া। ৩০ মে পুনর্নিরীক্ষণে ফল পরিবর্তন হওয়া শিক্ষার্থীরা ৩০ ও ৩১ তারিখ ভর্তির আবেদন করার সুযোগ পান। ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন মোট ১৩ লাখ ৯ হাজার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থী। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, খুব ভালভাবে আমাদের কাজ চলছে। সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত আশাপ্রদ। সোমবার (আজ) ফল প্রকাশ হবে। জানা গেছে, সারাদেশের কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে অনলাইনে ৯ লাখ ৮০ হাজার ও এসএমএস করেছেন বাকি ৩ লাখ ৫০ হাজারের কিছু বেশি। মোট আবেদনের সংখ্যা ৬২ লাখ ১৩ হাজার। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন ৪ লাখ ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী। তারা আবেদন করেছে ২২ লাখ ১০ হাজারটি। একেকজন শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন ৫টি সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের অনুকূলে আবেদন করার সুযোগ পেয়েছেন বলে আবেদনের সংখ্যা শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন জানিয়েছেন, ৬ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ১৮৫ টাকা ফি’র বিনিময়ে কলেজ নিশ্চয়ন করতে হবে। যারা প্রথম ফলে কলেজ পাবেন তাদের অবশ্যই কলেজে ভর্তির জন্য নিশ্চয়ন করতে হবে। এরপর মাইগ্রেশনের আবেদন এবং নতুন আবেদন করা যাবে ৯ থেকে ১০ জুন। ১৩ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের ফল দেয়া হবে। তাদের ১৪ ও ১৫ জুন কলেজ নিশ্চয়ন করতে হবে। এরপর আবার মাইগ্রেশন ও নতুন আবেদন করা যাবে ১৬ ও ১৭ জুন। তৃতীয় পর্যায়ে ফল প্রকাশ করা হবে ১৮ জুন। এদিকে আসন্ন ঈদের ঠিক আগ মুুহূর্তে ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আপত্তি তুলেছেন। তারা দ্রুত নতুন তারিখ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন এ বিষয়ে বলেছেন, দেখা যাক এখনোতো সময় আছে। তবে ঈদের আগেই যে কেবল ভর্তি তাতো নয়। ঈদের পরেও ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। কলেজ পরিদর্শক প্রথম মেধা তালিকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রথমবার কেউ কলেজ না পেলে কিংবা আবেদন না করলেও তাদের জন্য পরবর্তীদের সুযোগ রাখা থাকবে। তাই উদ্বেগের কিছু নেই। তবে প্রথম তালিকায় কলেজে যারা পাবে তাদের অবশ্যই কোন কলেজে বুকিং বা নিশ্চয়ন করতে হবে। অন্যথায় সে সুযোগ হারাবে। এজন্য ১৮৫ টাকা টেলিটক, শিওর ক্যাশ ও ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের রকেটের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। আজকের ফল প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, ফলাফল শিক্ষার্থীরা তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরেই জানিয়ে দেয়া হবে। সঙ্গে থাকবে তাদের সিকিউরিটি কোডও। অনেকেই এ কোড হারিয়ে ফেলেছেন। তবে তাদের চিন্তার কিছু নেই। আজ তারা কোর্ড নম্বর পাবেন। এছাড়া ভর্তির ওয়েবসাইটেও ফল জানতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। কলেজ ভর্তিচ্ছু সোয়া ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তির জন্য সারাদেশে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। যেখানে এক হাজার ৬৩৪ আসনের জন্য আবেদন করেছেন ৪২ হাজার ৬৪৫ জন শিক্ষার্থী। একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির জন্য আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠানও দেশে আছে ৬টি। ১০ জনের বেশি আবেদন করেনি এমন কলেজ ও আলিম মাদ্রাসা আছে ১৫৪টি। শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, ভর্তিতে আবেদনের চিত্রই বলে দিচ্ছে, একদিকে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রচ- চাপ সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীই পাচ্ছে না। সারাদেশের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুসারে শীর্ষ ২০টি কলেজের অধিকাংশই রাজধানীতে। সেরা ১০টির মধ্যে ৮টি আছে রাজধানীতে আর বাইরে দুটি। তবে সংখ্যায় কম হলেও রাজধানীর বাইরের প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষ ১০ কলেজের তালিকায় উঠে আসার ঘটনাকে আশাব্যঞ্জক বলে অভিহিত করেছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশের ১০ কলেজে আসন আছে মাত্র ১৬ হাজার ২৬৩টি। অথচ এখানে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৪১ জন এসএসসি পাস করা মেধাবী শিক্ষার্থী। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়া রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের পর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা সিটি কলেজ। তৃতীয় অবস্থানে আছে মিরপুর সরকারী বাংলা কলেজ। চতুর্থ অবস্থানে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। এরপর যথাক্রমে কবি নজরুল সরকারী কলেজ, ময়মনসিংহের সরকারী আনন্দ মোহন কলেজে, শহীদ নজরুল ইসলাম কলেজ, রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ ও দশম স্থানে কুর্মিটোলার বিএএফ শাহীন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অবস্থান। এভাবে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়া ২০ কলেজের তালিকায় আছে চট্টগ্রামের বাকলিয়া সরকারী কলেজ, সরকারী হাজী মুহম্মদ মুহসিন কলেজ, রংপুর সরকারী কলেজ, বগুড়ার সরকারঅ এএইচ কলেজ, চট্টগ্রামের ওমরগঞ্জ এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ। এবার ১৫৪টি কলেজে সর্বনিম্ন ১০টি করে আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে ৯৭টিই কারিগরি প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসা ৩৯টি। ছয়টি কলেজে ভর্তির জন্য কোন শিক্ষার্থী আবেদন করেনি। এগুলো হলো- মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নবাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা, মুন্সির তাল্লুক গার্লস আলিম মাদ্রাসা ও মাহমুদপুর রসুলপুর হামিদিয়া আলিম মাদ্রাসা, কুমিল্লা বোর্ডের কাছিয়ারা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের খন্দকার আবু সাঈদ আদর্শ সায়েন্স কলেজ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আদিবাবাদ ইসলামিয়া হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র ২০০টির মতো। যদি উচ্চ মাধ্যমিক পাঠদান করে এমন সব সরকারী কলেজ বিবেচনায় নেয়াও হয়, তাহলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩০০ বার তার থেকে কিছু বেশি। এসব কলেজে আসন সংখ্যা সর্বোচ্চ দুই লাখ। তাই এই মানের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ভয়াবহ জটিলতাই অপেক্ষা করছে। অবশ্য নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির নিয়ম করায় এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেধাবীরা অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীতে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণী আছে। এসব কলেজে মোট আসন আছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার। এর মধ্যে ভালো মানের ২০-২২টি কলেজে আসন ২৫ হাজার। বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার পাস করেছে প্রায় চার লাখ। জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। ঢাকা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলছিলেন, সকল শিক্ষার্থীরই কাক্সিক্ষত কলেজে ভর্তির সুযোগ নেই। এটাই বাস্তবতা।
×